মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান)
বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ব্রিজের নিচ থেকে দিনে দুপুরে বালু তোলা হচ্ছে। বিগত সময়ে বালু তোলার কারণে ইতিমধ্যে ব্রিজের অর্ধেকাংশ ধসে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে আছে লামা উপজেলা লক্ষাধিক মানুষ।
ব্রিজের ধসে যাওয়া অংশে কাঠের পাটাতন দিয়ে কোনমতে মোটরসাইকেল, রিক্সা ও সিএনজি সহ হালকা যানবাহন চলাচল করছে। ভারী গাড়ি গুলো চলাচল করতে না পারায় মালামাল পরিবহন করতে চরম অসুবিধা হচ্ছে জনসাধারণের। দেড় বছর যাবৎ ব্রিজের অর্ধেক ধসে পড়ে গেলেও মেরামত ও সংস্কারে এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়নি স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এতে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিত্য চলাচল করছে সাধারণ মানুষ।
লামা উপজেলা হতে সরই বাজার হয়ে লোহাগাড়া ও চট্টগ্রামের যোগাযোগ সড়কের সরই হাছনাপাড়া এলাকার হরিখালের উপর ব্রিজটি রয়েছে। সরই ও গজালিয়া ইউনিয়নের লোকজনের একমাত্র চলাচলের রাস্তা এইটি। ব্রিজটি দুই উপজেলার সীমানাবর্তী এলাকায় অবস্থিত। তাছাড়া লামা উপজেলা সাথে পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া উপজেলা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরের যোগাযোগের মাধ্যম এই সড়কটি।
১৫ নভেম্বর (শুক্রবার) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধসে যাওয়া ব্রিজটির নিচে ২টি সেলু মেশিন বসিয়ে দেদারছে বালু তোলা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, লোহাগাড়া উপজেলার এম. চর হাট এলাকার মৌলভী মামুন ও উপজেলা শ্রমিকলীগ নেতা নুরুল হক নুনু সহ ১০/১২ জনের বিশাল একটি সিন্ডিকেট এই বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত। তারা সকলে প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষতি হচ্ছে দেখেও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করছেনা।
নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে হাছনা পাড়া এলাকার কয়েকজন বলেন, ব্রিজের এপার লামা আর ওপার হচ্ছে লোহাগাড়া উপজেলা। বালু তোলার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের সবাই জানে। তারপরেও আমরা লামার প্রশাসনের লোকজন বললে তারা বলেন, বালু লোহাগাড়া অংশ হতে তোলা হচ্ছে।
একইভাবে লোহাগাড়া উপজেলার প্রশাসনের লোকজনকে বললে ঊনারা বলেন, এই বিষয়ে লামা উপজেলার কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে। দুই উপজেলার কর্তা ব্যক্তিদের উদাসিনতার কারণে বালু তোলা বন্ধ করা যাচ্ছেনা। বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতরা সরকারদলীয় লোকজন ও প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা সরাসরি বাধা দিতে ভয় পায়। আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। বালু তোলার কারণে বেশ কয়েকটি ব্রিজ, কালভার্ট, বিস্তৃর্ণ ফসলের জমি, খালের পাড় ও রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাচ্ছে। এছাড়া সরই ইউনিয়নের হরি খাল ও পুলু খালের আরো ৬/৭টি স্পট হতে বালু তোলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বালু তোলা সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য লোহাগাড়া শ্রমিক লীগের নেতা নুরুল হক নুনু’র সাথে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, আমরা সরকার থেকে ইজারা নিয়ে বালু তুলছি। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে ১২ লক্ষ টাকা দিয়ে আমার তিনটি স্পট হতে বালু তোলার ইজারা নিয়েছে। ব্রিজ, কালভার্ট ও খালের পাড় ভেঙ্গে গেলে আমরা কি করব। যদিও বালু মহাল ইজারার বিষয়ে কিছুই জানেন না লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসন।
সরই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মনিরুল ইসলাম সরকার বলেন, বালু তোলার অংশটি লোহাগাড়া পড়েছে। আমাদের করার কিছুই নেই।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি বলেন, খালের ওপার (লোহাগাড়া) হতে বালু তোলার কারণে আমরা কিছু করতে পারছিনা। তবে আমি লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও লোহাগাড়া থারা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি।
এবিষয়ে জানতে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাওসিফ আহাম্মেদ কে অসংখ্যবার তার মুঠোফোনে ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ না করায় ঊনার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-