আবু তাহের, সমকাল •
কক্সবাজারের ইয়াবা গডফাদাররা জেলে বসেই মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। ১১ নভেম্বর সোমবার কক্সবাজার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এমন তথ্য দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা।
জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘আমার কাছে তথ্য রয়েছে- কক্সবাজারের জেলে বসেই ইয়াবা গডফাদাররা মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। জেল থেকেই তারা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছে। তাদের সেই নির্দেশনামতে সীমান্তে মাদকের নেটওয়ার্ক পরিচালিত হচ্ছে।’ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সভায় উপস্থিত কক্সবাজার কারাগারের সুপার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, বর্তমানে কক্সবাজার কারাগারে সাড়ে ৪ হাজার বন্দি রয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য লোক জেলে বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসে। এত লোকের ভিড়ে মাদক ব্যবসা নিয়ে আলাপ আলোচনা করা কঠিন কাজ। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি সভায় অবহিত করেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কক্সবাজার কারাগারে এখন ধারণ ক্ষমতার ৪ গুণ বন্দি অবস্থান করছে। তাদের ৮০ শতাংশই মাদক মামলার আসামি। ম্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ১০২ জন ইয়াবা গডফাদারও সেখানে রয়েছে। পুলিশের বিশেষ উদ্যোগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তারা টেকনাফে আত্মসমর্পণ করে। এর পর তালিকাভুক্ত অন্য কারবারিরা আত্মগোপনে চলে গেলেও ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ হয়নি। এখনও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে ধরা পড়ছে বিশাল বিশাল চালান।
সোমবার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় জানানো হয়, গত জুলাই মাসে ৫ লাখ ২৩ হাজার ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। পরের মাসে উদ্ধার হয়েছে ১১ লাখ ৪ হাজার ইয়াবা। গত অক্টোবর মাসে ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে ২১ লাখ ৭৯ হাজার।
এভাবে ইয়াবা উদ্ধারের পরিমাণ বাড়তে থাকায় সভায় উপস্থিত কয়েকজন সদস্য বলেন, ইয়াবা পাচারের ঘটনা কিছুতেই কমছে না। শীর্ষ ইয়াবা গডফাদারদের কেউ জেলে এবং অন্যরা আত্মগোপনে থাকলেও গোপনে তারা ইয়াবা নেটওয়ার্ক টিকিয়ে রেখেছে। ইয়াবা পাচার নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর দায়িত্ব পালন করতে সভায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষ ইয়াবা কারবারিদের অনেকে জেলে থাকলেও নতুন নতুন অনেক গডফাদার তৈরি হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তালিকায় তাদের অনেকের নাম নেই। নতুন এই কারবারিরা প্রকাশ্যে বিচরণ করলেও রাতের আঁধারে তাদের চেহারা পাল্টে যায়। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে তারা নেটওয়ার্ক পরিচালিত করে।
তবে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘আরও ৫ শতাধিক নতুন ইয়াবা কারবারির নাম পাওয়া গেছে। সরকারের কোনো তালিকায় তাদের নাম ছিল না। এই কারবারিরা এতদিন ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে। ইয়াবা ব্যবসা করে তারা হয়েছে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক। আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন ইয়াবা কারবারির দেওয়া তথ্যেও উঠে এসেছে অজ্ঞাত অনেক ইয়াবা কারবারির নাম। তাদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ইয়াবা কারবারিদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
তিনি আরও বলেন, মাদকের ব্যাপারে কোনো আপস করবে না পুলিশ।
কক্সবাজার কোর্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জেলে আটক ইয়াবা কারবারিদের অনেকে এরই মধ্যে জামিন আবেদন করলেও তাদের জামিন হয়নি। যারা জামিন আবেদন করেছিল তাদের মধ্যে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির চার ভাই যথাক্রমে আবদুশ শুক্কুর, আমিনুর রহমান প্রকাশ আমিন, শফিকুল ইসলাম প্রকাশ শফিক ও ফয়সাল রহমান রয়েছে।
এ ছাড়াও জেলে রয়েছে আবদুর রহমান বদির খালাত ভাই মং অং থেইন প্রকাশ মমচি, ভাগিনা মো. সাহেদ রহমান নিপু, টেকনাফের মোজাম্মেল হক, মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু, মো. আলম, আবদুল আমিন, আবদুল আলী ও নুরুল আমিনের মতো শীর্ষ ইয়াবা কারবারি। তাদেরও জামিন হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সহজে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্যমতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ১৫১ জন ইয়াবা কারবারি রয়েছে। তাদের বেশিরভাগ সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-