ডেস্ক রিপোর্ট • ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র প্রভাব মুক্ত হয়েছে দেশ। সোমবার সকাল থেকে তুলে নেয়া হয়েছে সকল ধরণের সংকেত। কক্সবাজারে ঝলমলে রোদে আবারো প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে সৈকতের বালিয়াড়ি। গত তিনদিনে বেড়াতে আসা অনেক পর্যটক বৈরি আবহাওয়ায় হোটেলে বৃষ্টিবন্দি সময় পার করলেও সোমবার সকাল থেকে উদ্দিপনায় সৈকতে গোসলে ঢেউয়ের ছোঁয়া নিচ্ছেন সব বয়সী পর্যটকরা।
কয়েকদিনের আতংক কাটিয়ে বালিয়াড়িতে আসছেন স্থানীয়রাও। ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে গিয়ে আনন্দ যেন বিষাদে রূপ না নেয় সেই হুশিয়ারি নিয়ে তৎপর রয়েছে লাইফগার্ড কর্মীরা।
এদিকে, তিনদিন সেন্টমার্টিনে আটকাপড়া পর্যটকরাও সোমবার তীরে ফিরেছেন। সংকেত নামিয়ে ফেলার পর পরই সকাল সাড়ে নয়টায় এলসিটি কুতুবদিয়া ও কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইনিং সেন্টমার্টিন গিয়ে তাদের নিয়ে বিকেলেই ফিরে এসেছে। স্বাভাবিক পরিবেশে নিরাপদে রেখে পর্যটকদের পৌঁছে দিতে পেরে শোকরিয়া জ্ঞাপন করেছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ।
কক্সবাজার সৈকতে বিপদাপন্ন পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করা সী সেইফ লাইফগার্ড’র সুপারভাইজার মো. ওসমান গনি জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবলের প্রভাবে শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টির পাশাপাশি সাগর খুবই উত্তাল ছিল। সেসময় বেড়াতে আসা সিংহভাগ পর্যটক হোটেল রুমে, লবিতে বসে সময় কাটালেও তরুণ কিছু পর্যটক ভয় উপেক্ষা করে সাগরে নেমেছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমে সংকেত উঠে যাওয়ায় সববয়সী পর্যটক সৈকতে নেমেছে। যে যারমতোই গোসল, হৈ হল্লুড় করে আনন্দ করছেন।
তিনি আরো জানান, অনেক পর্যটক আনন্দে মেতে ঢেউয়ের খেই হারিয়ে ভেসে যান। পর্যটকদের বিপদাপন্ন পরিস্থিতি এড়াতে লাইফগার্ডকর্মীরা সতর্ক নজর রেখে চলেছে। যারা একটু বিপদ সীমা অতিক্রম করছেন তাদের কাছে গিয়ে নিরাপদ দুরত্বে নিয়ে আসা হচ্ছে।
ঢাকার বনশ্রী থেকে স্বপরিবারে আসা আবীর ইসলাম বলেন, এসেছি শনিবার থেকে। তখন দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে রুমেই বন্দি থাকতে হয়েছে। এখন আকাশ পরিস্কার। তাই সবাই মিলে ঢেউয়ের ছোঁয়ায় আনন্দ করছি।
কলাতলীর তারকা হোটেল হোয়াইট অর্কিড’র মহা-ব্যবস্থাপক (জিএম) রিয়াদ ইফতেখার বলেন, অক্টোবরের শুরু থেকে পর্যটন মৌসুম চলছে। ছুটিরদিন ছাড়াও পর্যটক আনাগোনা রয়েছে কমবেশি। সব হোটেলেই কোলাহল রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার দিনগত রাত পর্যন্ত ভোগান্তি পেয়েছে পর্যটকসহ স্থানীয়রা। কিন্তু এখন পরিষ্কার আকাশে পর্যটক ও স্থানীয় ভ্রমণ পিপাসুরা উন্মাদনায় সাগরের সান্নিধ্য নিচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, সোমবার সকাল থেকে সকল সতর্কতা সংকেত তুলে নেয়া হয়েছে। সকল ধরণে নৌ যান চলাচলে এখন কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেছেন, যেকোন ধরণের দুর্যোগ এড়াতে প্রস্তুতি ছিল আমাদের। বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতি থেকে আল্লাহ কক্সবাজারবাসীকে রক্ষা করেছেন। এখন সতর্কতা সংকেতও নেই।
তাই স্থানীয়দের মতো পর্যটকরাও নির্বিঘেœ আনন্দ উপভোগ করছে। পর্যটকদের যেকোন ধরণের হয়রানি এড়াতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে টহলে থাকে। প্রতিটি হোটেলে ম্যাজিস্ট্রেটের নাম্বার দেয়া আছে। যেকোন ধরণের হয়রানি হলে ফোনে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান জেলা প্রশাসক। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, জেলার আইন-শৃংখলার নির্বিঘœ রাখতে বিশেষ নজর রেখে মাঠে রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। পর্যটন এলাকাতে ট্যুরিষ্ট পুলিশের পাশাপাশি আমাদেরও দৃষ্টি রয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-