রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ঘিরে যত প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক •

শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। এর প্রভাব পড়বে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলে। বিষয়টি নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আতঙ্কের সংবাদ পাওয়া গেছে। অনেকে দাবি করছেন রোহিঙ্গাদের ঘরগুলো এ ধরণের দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত না। তাছাড়া পাহাড় ও বন কেটে উজাড় করায় বাতাসের চাপ এ এলাকায় বেশি থাকবে।

এমতাবস্থায় ক্যাম্পকে ঘিরে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের উপজেলা প্রশাসন পুরো উপজেলাকে নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নের ইউপি সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তাছাড়া আমরা ক্যাম্পকে ঘিরে বিশেষ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে আমরা সকাল থেকে প্রচারণা চালাচ্ছি। একাধিকবার বৈঠক করেছি। মাইক দিয়ে করণীয় সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা হচ্ছে। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড়সহ অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবেলায় রোহিঙ্গাদের বিশেষ ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেককে আমরা আশপাশের স্কুল বা সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় দিতে পারব। কিন্তু আমাদের জায়গা সংকটের কারণে হয়তো এসব জায়গায় অনেকে আশ্রয় পাবেনা। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারবেন না আমরা তাদের ক্যাম্পের ভেতর থাকা গোডাউনগুলোতে থাকার ব্যবস্থা করব। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থিত মসজিদ, স্কুল ও আশপাশের স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রলোতে অবস্থান নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের আগে থেকেই নির্দেশনা দিয়ে রাখা হয়েছে।

ক্যাম্পের ভেতরে শক্ত রশি ও শক্ত খুঁটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশি বাতাসের সময় রোহিঙ্গারা এসব খুঁটি ধরে দাঁড়াতে পারবে।

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’ এর ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পেরও খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।

উপকূলীয় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১৩টি জেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৩টি জেলার প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সওজ, এলজিইডিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিভাগ, এনজিও ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আঘাত হানার সময় করণীয় বিষয়গুলো জানিয়ে মাইকিং করে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু দ্দৌজা বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রেডক্রস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দমকল বাহিনী বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কর্মী বাহিনীসহ রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। কক্সবাজারের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত আছেন। পাশাপাশি পাহাড়ে অতি ঝুকিঁপূর্ণদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

এদিকে আজ সকালে ক্যাম্পে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে বৈঠক করা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের মসজিদে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। পাহাড়ে ঝুকিঁপূর্ণ বসতিদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।

আরও খবর