ডেস্ক রিপোর্ট • পরিবর্তন আসছে ভোটার তালিকা আইন ও বিধিতে। ভোটার তালিকা হালনাগাদের খসড়া ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য আইন ও বিধি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। ভোটার তালিকা আইনে হালনাগাদের যে তারিখ রয়েছে তা তুলে দিয়ে কমিশন নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছে।
গতকাল নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোটার তালিকা আইনের সংশোধনীর বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আইনে রয়েছে প্রতিবছর ২ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ হবে। আমরা সেখানে সংশোধনী আনছি।
প্রতিবছর ২ জানুয়ারি থেকে ১ মার্চের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ হবে। ’ ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটার তালিকা আইনের ১১ ধারায় বলা আছে, ‘কম্পিউটার ডাটাবেজ সংরক্ষিত বিদ্যমান সকল ভোটার তালিকা, প্রতি বৎসর ২ জানুয়ারি হইতে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, …হালনাগাদ করা হইবে। ”
তারা বলেন, আইন অনুযায়ী বর্তমানে ভোটার তালিকা হালনাগাদের খসড়া প্রকাশ করা হয় ২ জানুয়ারি। আর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয় ৩১ জানুয়ারি। ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ২০১৯-এর খসড়া প্রকাশ হবে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি।
আর ২০২০ সালের ১ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবসে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে। এ জন্য ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশের পর ভোটারদের দাবি-আপত্তি ও নিষ্পত্তির তারিখও সে অনুযায়ী নির্ধারণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভোটার তালিকা আইনে খসড়া প্রকাশের যে তারিখ উল্লেখ রয়েছে, তা তুলে দিয়ে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত তারিখে ভোটার তালিকা প্রকাশের ক্ষমতা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের হাতে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন সহায়তা-২ শাখা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের একজন যুগ্ম-সচিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এটা আগামী বছর কার্যকর হবে
এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে সচিবালয়। আত্তীকরণ হচ্ছে দক্ষ জনবল : আইডিইএ প্রকল্পের দক্ষ জনবলকে আত্তীকরণের বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব কমিশন সভায় উপস্থাপনের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগ কমিটি। এ ছাড়া কমিশনে এই আত্তীকরণের প্রস্তাব অনুমোদনের পর তা বিশেষ সামারি আকারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। পরিবর্তন আসছে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে : ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে পরিবর্তন আসছে। আগামীতে হালনাগাদে বাড়ি বাড়ি যাওয়া বন্ধ করার চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে ভোটার হতে হলে নির্ধারিত নিবন্ধন কেন্দ্রে ভোটারদের আসতে হবে। এদিকে ভোটার হালনাগাদে বাড়ি বাড়ি যাওয়া, না যাওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে।
একাধিক নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, বাড়ি বাড়ি না গিয়ে নির্ধারিত স্থানে ভোটার করা যেতে পারে। আবার কেউ বলেছেন অনলাইনে ভোটার হওয়ার সুযোগ দেওয়ার কথা। একজন নির্বাচন কমিশনার বাড়ি বাড়ি না যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, বাড়ি বাড়ি না গেলে মৃত ভোটারের তথ্য পাওয়া যাবে না। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম যুগোপযোগীকরণ এবং ভোটার নিবন্ধন-সংক্রান্ত ফরমসমূহ পুনর্বিন্যাসকরণ কর্মশালায় নতুন কর্মপন্থা নিয়ে প্রস্তাব করেছেন ইসি কর্মকর্তারা। ভোটার তালিকা হালনাগাদে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহে ভবিষ্যতে ‘ডিজিটালাইজড’ কর্মপন্থা বের করার সুপারিশ এসেছে। সে ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ ও নিবন্ধন কাজ চলমান রেখে এলাকাভিত্তিক ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালুর প্রস্তাবও এসেছে।
ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। এরপর থেকে নতুন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ, মৃতদের বাদ দেওয়াসহ হালনাগাদ কাজ চলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে। ২০০৯, ২০১২, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে হালনাগাদ করা হয়। বর্তমানে ১০ কোটি ৪২ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছেন। একই সঙ্গে এবারের হালনাগাদে (১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী) চার বছরের তথ্য সংগ্রহ চলছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-