ইকবাল হোসেন •
বাংলাদেশের মোট আয়তনের এক-দশমাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। এই তিন পার্বত্য জেলা সীমান্ত পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও নিরাপদ করতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১১শ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
ইতিমধ্যে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ১৭শ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩১৭ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণ শুরু করেছে। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সীমান্তের মাদক, অস্ত্র ও চোরাচালান বন্ধসহ পর্যটন শিল্পে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ৫৪০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকাটি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত না থাকার সুযোগে চোরাচালান, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক পাচারের ঘটনা ঘটাচ্ছে দুস্কৃতিকারীরা। তাই সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে বিস্তীর্ণ বনজ সম্পদ রক্ষা ও পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য ১১শ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পদক্ষেপ নেয় সরকার। তন্মধ্যে ৩১৭ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে ১৬৯৯ কোটি ৮৪ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘সীমান্ত সড়ক (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা) নির্মাণ প্রকল্প ১ম পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। গত ২০১৮ সালের ২০ মার্চ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ১ম পর্যায়ের একাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি, বরকল ও রাজস্থলী উপজেলা, খাগড়াছড়ি জেলার বাঘাইছড়ি, বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কঙবাজার জেলার উখিয়া উপজেলায় প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এরমধ্যে ঠ্যাগামুখ-লইতংপাড়া-থানচি-দুমদুমিয়া-রাজস্থলী পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার, সাজেক-দোকানঘাট-ঠ্যাগামুখ পর্যন্ত ৯৫ কিলোমিটার, সাজেক-শিলদা-বেতলিং পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার এবং উখিয়া-আশারতলী-ফুলতলী পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে।
এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) গত সেপ্টেম্বর মাসের এক প্রতিবেদনে প্রকল্পটিকে ভালো অগ্রগতি সম্পন্ন প্রকল্প হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় নির্মিতব্য সড়কের পাশের পাহাড়ের ঢাল হতে মাটি যাতে ধুয়ে সড়কে নেমে না আসে সেজন্য স্থানগুলোতে পাহাড় প্রটেকশনের ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে মন্তব্য করা হয়।
সড়ক ও জনপথ রাঙামাটি জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত দৈনিক আজাদীকে বলেন, সীমান্ত এলাকা সুরক্ষার পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরির লক্ষ্যে সীমান্ত সড়ক প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পুরো প্রকল্পে ১১শ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে।
তিন পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এখন প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন সীমান্ত সড়কটি নির্মিত হলে এতদঞ্চলের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি সাধিত হবে। পার্বত্য অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের আরো বিকাশ ঘটবে। পাশাপাশি ভারত ও মিয়ানমারের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য সমপ্রসারিত হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক কর্নেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েম দৈনিক আজাদীকে বলেন, সীমান্ত সড়ক প্রকল্পটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকায় যোগাযোগ সুবিধা নেই। অনেক এলাকা এখনও অরক্ষিত। সীমান্ত সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে পুরো সীমান্ত এলাকা সুরক্ষিত হবে। এতে সীমান্তের অনেক এলাকা আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
তিনি বলেন, সীমান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অনেক জায়গা অত্যন্ত দুর্গম। অনেক জায়গায় যাতায়াতেরও কোনো সুযোগ নেই। অনেক বাধা মোকাবেলা করতে হয়েছে। যে কারণে প্রকল্পের প্রথম দিকে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। আমরা আশা করছি এ বছর প্রকল্পটির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-