চট্টগ্রামের চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা: আ’লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ

এন.এইচ নীরব, চট্টগ্রাম •

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম ভেঙ্গে ভুক্তভুগী মানুষের ক্ষতিসাধন করে যাচ্ছে বেশ কিছু মহল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য যুক্ত হচ্ছেন জামায়াত – বিএনপির অনেক নেতা – কর্মী। নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন তারা।

সাম্প্রতিক নানা ধরনের অভিযোগ উঠে আসে, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদস্য ডাঃ একেএম ফজলুল হক সিদ্দীকীর নামে, তিনি চট্টগ্রামের সাবেক জাতীয়তাবাদী জিয়া সমাজকল্যাণ পরিষদ পরে জিয়াউর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটি ( ২০১৪ – ২০১৭ ) এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন।

মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করে দেখা যায় তিনি কখনও ছাত্রজীবনে আওয়ামীলীগের দ্বারে কিনারে ও ছিলেন না । কিন্তু দেখা যায় বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদস্য মনোনয়নে এই পদের জন্য ছয়জন প্রবীণ ও আওয়ামী লীগ সমর্থক হোমিও চিকিৎসক আবেদন করেছিলেন।

চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় গত ২৪শে জুন ২০১৮ ইংরেজীতে চট্টগ্রামের হোমিও চিকিৎসকরা এক বিবৃতি দিয়ে স্বল্প শিক্ষিত, অযোগ্য ব্যক্তিকে হোমিওপ্যাথিক বোর্ডে প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগ না দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন হোমিও নেতৃত্বধারী চিকিৎসকবৃন্দ ।

তারা বিবৃতিতে দাবি তোলেন, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদস্য মনোনয়নে কোন স্বল্প শিক্ষিত চিকিৎসক ও অন্য চিকিৎসা পেশার মধ্যেও যুক্ত আছে এমন চিকিৎসককে মনোনয়ন দিলে অসন্তোষ তৈরী হবে । কারণ হোমিও কলেজগুলোত অধ্যক্ষবৃন্দ সকলই উচ্চশিক্ষিত। সেখানে কলেজগুলারে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের প্রতিনিধি যদি এসএসসি পাশ হন তবে তা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াই স্বাভাবিক । কিন্তু হোমিও চিকিৎসকদের এই আবেদন শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছলেও তা গ্রহণ করা হয়নি কোন এক মধ্যস্থকারী মহলের উদ্দেশ্যমূলক কারণে।

ডা : ফজলুল হক সিদ্দীকী এসএসসি পাশ হাকীম । এদিকে ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ সালে চট্টগ্রামের আরেকটি স্থানীয় পত্রিকায় এক সংবাদে দেখা যায় ইউনানী মেডিক্যাল অ্যাসাসিয়েশনের জেলা শাখার দোয়া মাহফিল প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে হাকীম একেএম ফজলুল হক সিদ্দীকী সঞ্চালন করেছিলেন। উক্ত বিএনপির সক্রিয় নেতা একই ব্যক্তি কখনও তথাকথিত হোমিও ডাক্তার , কখনও ডেন্টিস্ট, কখনও ইউনানী হাকীম হওয়ার ঘটনা ইতিহাসে বিরল । এটি পেশার সাথে প্রতারণা ।

অনুসন্ধানে সূত্রমতে জানা যায়, ১০ এপ্রিল ২০১৪ সালে হোমিওপ্যাথি দিবস উদযাপন ও হোমিও চেতনা এক যুগপূর্তি উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত, আলাচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কর্মসূচীতে সম্মানিত অতিথিবৃন্দের তালিকায় ডাঃ ফজলুল হক সিদ্দীকী , সাধারণ সম্পাদক , বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হোমিও চিকিৎসক দল হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে । এবং সেই পদবী নিয়ে তিনি সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্যও দিয়েছিলেন।

অপরদিকে হোমিও চিকিৎসকরা জানান, বর্তমানে তিনি চিকিৎসক নামে পরিচিত দিচ্ছে কিন্তু দেখা যাচ্ছে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করতেছেন ফজলুল হক।

তার নামে অভিযোগ আছে পাইলস অপারেশনের নাম বলে রোগীর পায়ু পথে ওষুধের নামে প্রয়োগ করছে এসিড ফলে দেখা যায় রোগীর পায়ু পথে ক্যান্সারের মত জীবনঘাতি রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। হোমিও চিকিৎসকরা আরো বলেন, হোমিও চিকিৎসা একটি আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন বৈজ্ঞানিক ও কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি যা অতি সূক্ষ্ম মাত্রার ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে, তার জন্য যেমন লাগে সুদক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তেমনি লাগে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি চর্চা । কিন্তু দুঃখের বিষয় একেএম ফজলুল হক বর্তমানে নিজের ইচ্ছামত পাইলস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেজে যা হোমিও পদ্ধতিতে কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। হোমিও ওষুধের নামে দিচ্ছে ইউনানী সালসা সহ নিয়মনীতি বিরোধি ওষুধ যা দণ্ডনীয় অপরাধ।

সূত্রে জানা যায়, ফজলুল হক বোর্ড সদস্য মনোনীত হওয়ার পর চট্টগ্রাম বিভাগে হোমিওপ্যাথিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যক্ষ, শিক্ষক,ম্যনেজিং কমিটির মধ্যে দলাদলি সংঘাত, অশান্তি সৃষ্ঠি করে।

বর্তমানে সকল বৃহৎ রেজিস্টার্ড হোমিও সংগঠনের ও কলেজ সমূহের সচেতন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের মনে প্রশ্ন একটাই এত অদক্ষ, অযোগ্য এবং সরকারি দলে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তি কিভাবে ডাক্তার দেখিয়ে বোর্ডে সদস্য উপনীত হলেন ? হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা মনে করেন তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে দক্ষ ও কর্মঠু বোর্ড প্রতিনিধি থেকে। এই অযোগ্য ফজলুল হক ফাসাদ সৃষ্ঠি করে হোমিওপ্যাথিকে উন্নতির দিকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান প্রয়োজনের তুলনায় অত্যাধিক কম, চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে তার কোন জ্ঞান নাই।

চট্টগ্রামে অনেক উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন সুশিক্ষিত হোমিও চিকিৎসক থাকা সত্যেও আরো ছয়জন উচ্চশিক্ষিত দক্ষ আওয়ামীলীগার প্রার্থী থাকলে ও এ ধরনের অযোগ্য ব্যক্তিকে কেন দেওয়া হলো ?

অভিজ্ঞ চিকিৎসক মহলের প্রশ্ন- এরপরেও এই অযোগ্য, অদক্ষ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের কোটায় বোর্ড সদস্য মনোনীত করার পেছনে কোন উৎকোচ আদান প্রদানের রহস্য আছে কিনা খতিয়ে দেখা জরুরী নয়কি?
পরিশেষে হোমিও চিকিৎসকরা এক হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন – সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়ার আগে ভালমত যাচাই বাচাই না করার কারণে বিএনপি – জামায়াতের সুবিধাভাগী ব্যক্তিরা উচ্চপদস্থ সুবিধাভোগ করার সুবিধা পাছেন । এই সময়ের দাবী হলো সত্যতা যাচাই করে জনগণের সামনে মুখোশধারীদের মুখোশ খুলে দেওয়া হোক। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সঠিক সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়ে এইসব নব্য আওয়ামী লীগার অদক্ষ ,অযোগ্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ।

পরিশেষে তাঁরা সকলেই এক বাক্যে বলতে চায় যথাশীঘ্রই ফজলুল হকের অপসারণ করা হোক ।

আরও খবর