পেঁয়াজ কারসাজিতে কক্সবাজার ও টেকনাফের সিন্ডিকেট

কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক •

কারসাজিতে জড়িত থাকার বিষয়ে খাতুনগঞ্জ ও কক্সবাজারের ১৫ জনের একটি সিন্ডিকেটের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। তাদের নামসহ বিস্তারিত উল্লেখ করে একটি তালিকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রামের কমিশন এজেন্ট, আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, আড়তদার ও দালালদের ১৫ জনের সিন্ডিকেটের যোগসাজশে মিয়ানমার থেকে ৪২ টাকা দরে আমদানিকৃত পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ১০০ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য করার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

১৫ জনের এই সিন্ডিকেটে আছে- খাতুনগঞ্জের মেসার্স আজমীর ভান্ডার, মেসার্স সৌরভ এন্টারপ্রাইজ, হোসেন ব্রাদার্স ও মেসার্স আল্লার স্টোর; কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কাদের, টেকনাফের আমদানিকারক সজিব, জহির, সাদ্দাম এবং পেঁয়াজ বিক্রেতা মম (মগ), গফুর, মিন্টু, খালেক ও টিপু, পেঁয়াজের দালাল শফি এবং কক্সবাজারের টেকনাফের কে কে পাড়ার মেসার্স আলীফ এন্টারপ্রাইজ।

১৫ জনের এই সিন্ডিকেটের তালিকা চট্টগ্রাম থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সোমবার রাতে এসব বিষয় নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, পেঁয়াজের বাজারকে অস্থির করে তোলার পেছনে খাতুনগঞ্জের অনেক অসাধু ব্যবসায়ী জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছি আমরা। জড়িতদের একটি তালিকাও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

মিয়ানমার থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা হয়েছে ৪২ টাকা দরে। কিন্তু সেই পেঁয়াজ অছি উদ্দিন ট্রেডার্স প্রতি কেজি বিক্রি করছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। মেসার্স খাতুনগঞ্জ ট্রেডিংয়ের চালানে প্রতি কেজির দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা লেখা থাকলেও কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্রির উদ্দেশ্যে ট্রাকে মজুদ করা পেঁয়াজের দাম রাখা হয়েছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা! আড়তে টাঙানো মূল্য তালিকার সঙ্গে বিক্রয় করা পণ্যের দামের অনেক বড় ব্যবধানের প্রমাণও পাওয়া গেছে। এমন অনিয়ম ও কারসাজির চিত্র দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের।

এতে জড়িত অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী আড়তদার। কারসাজিতে জড়িতদের বারবার সতর্ক করা হলেও সংকট দেখিয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা থেকে পিছপা হচ্ছে না তারা। তাদের এমন অনৈতিক কাজে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খাতুনগঞ্জ পরিদর্শন করতে আসা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ টিম। তবে যে কোনো মূল্যে কারসাজিতে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের মূল্যসন্ত্রাস ঠেকাতে সোমবার খাতুনগঞ্জে পরিদর্শনে আসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ টিম।

টিমের নেতৃত্ব দেওয়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সেলিম হোসেন বলেন, পরিবহন খরচ, লাভসহ সব খরচ বাদ দিয়ে মিয়ানমার থেকে ৪২ টাকা দরে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজের বিক্রয়মূল্য ৬০ টাকার বেশি হতে পারে না। কিন্তু খাতুনগঞ্জের আড়তে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। এতে জড়িতদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। তারপরও তারা সঠিক পথে না এলে মোটা অঙ্কের জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ড দেওয়া হবে।

খাতুনগঞ্জে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, যে কোনো মূল্যে পেঁয়াজের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে প্রশাসন শক্ত অবস্থানে আছে। পাইকারিতে মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকার বেশি হলে জেল-জরিমানা করা হবে।

ক্যাবের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি খুচরা বাজারেও মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

পাইকারি বাজারে কারসাজির কারণে বর্তমানে চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়।

আরও খবর