মাঈনুদ্দিন খালেদ :
আলি আজগর । তিনি মটর বাইক নিয়ে যাত্রি আনা নেয়া করেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে চাকঢালা সড়কে। তার বাড়ি চেরারকূল। তার কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স,গাড়ির লাইসেন্স,চালকের পোষাক কিছুই নেই। গাড়ির ফিটনেসের কোন কাগজ পত্রও নেই তার। তিনি রামুর শো-রুম থেকে এনেই নিয়মিত এ ছোট মানের গাড়িটি নিয়ে যাত্রি পরিবহন করছেন। এই সড়কের অপর বাহন সিএনজি চালক শফিউল আলমের বাড়ি ফদ্দান ঝিরি। তার গাড়ির ও অনুরূপ কোন কাগজ পত্র নেই। কেউ তাদের কখনও জানানও নেই। তাই তারা এভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন কাগজ-পত্র ছাড়াই।
গতকাল পহেলা নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সর্ম্পকেও কিছুই জানে না রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার এসব গাড়ি চালকরা। তাই তারা আগের মতোই গতকাল শুক্রবারও সারা দিন গাড়ি চলিয়েছেন স্ব স্ব সড়কে।
তাদের কাছে জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে তারা জানান,এ সব আইন তারা কখনও শুনেন নি। আর নতুন আইন বিষয়ে কেই বলেন নি। তাই তারা এভাবে কাগজ পত্র ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছেন।
প্রতিবেদক গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল অবধি রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির অনেক গাড়ি চালককে প্রশ্ন করলে তারা প্রতেক্যেই একই উত্তর দেন এ প্রতিবেদককে।
স্থানীয় সূত্র গুলো জানান, রামু উপজেলার সদর সহ ১১ ইউনিয়নের সর্বত্র পরিবহনের সংখ্যা কয়েক হাজার। আর নাইক্ষ্যংছড়িতে হাজারাধিক। এ সব গাড়ির মধ্যে নতুন সংযোজন হলো পাহাড়ি জনপদের মটর বাইক বা মটার সাইকেল , আর সমতলে টমটম ও অটোরিক্স। এসব ছোট পরিবহন এ দু উপজেলায় খুবই জনপ্রিয়। তাই এর সংখ্য্ওা বেশী। অন্যান্য পরিবহন যথাক্রমে সিএনজি,মাইক্রোবাস,জীপ সহ অপর সকল পরিবহন এ দু উপজেলায় রয়েছে। যাদের অধিকাংশেরই সে আলি আজগর,শফিউল আলমের মতো গাড়ির কোন ধরনের কাগজ পত্র নেই। যাদের একটু আধটু আছে তা-ও মেয়াদোর্ত্তীণ। এ অবস্থায় পুলিশী যাতাকলে তারা গাড়ি চালায় থানার ম্যানেজারদের সাথে সু-সর্ম্পক রেখে।
উপজেলা দ্বয়ের সাথে সংযোগস্থাপনকারী রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কে যাতায়াত কারী যাত্রি আবুল কালাম এ প্রতিবেদককে জানান, এ এলাকায় পরিবহন আইন বলতে কিছুই নেই। ইচ্ছামাফিক ভাড়া আদায়, গাড়ি চালকদের দূর্ব্যবহার,সন্ধ্যার পর ডাবল ভাড়া,রাতে আরো বেশী ভাড়া আদায়,অতিরিক্ত যাত্রি নেয়া সহ আরো অসংখ্য অনিয়ম এখানকার নিয়ম। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কতিপয় সদস্য এসব অনিয়ম কারীদের সাথে সখ্যতা রয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে এ সব অস্বীকার করা হয়েছে।
তবে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আনোয়ার হোসেন জানান, নতুন পরিবহন আইন নিয়ে তিনি আজ কালের মধ্যেই কাজ শুরু করবেন। শ্রমিক-মালিক সংগঠন গুলোকে ডেকে বিষয়টি অবহিত করবেন। এর পরে কাজ না হলেই ব্যবস্থা নেবেন আইন মতে।
উল্লেখ্য ১ নভেম্বর শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। এর মাধ্যমে বাতিল হচ্ছে ৭৯ বছরের পুরোনো মোটরযান অধ্যাদেশ।
নতুন আইনে বেপরোয়া গাড়ি চালকের কারণে মৃত্যু হলে পাঁচ বছর কারাদ- বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যাকা- ঘটালে সর্বোচ্চ সাঁজা মৃত্যুদন্ড ভোগ করতে হবে তাদের।
এ ছাড়া এই আইনে রয়েছে নিয়োগপত্র ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যক্তিকে গণপরিবহনের চালক হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে না। নিয়োগপ্রাপ্ত চালক তার কাগজপত্র গাড়িতে প্রদর্শন করবেন। এ ছাড়া কন্ডাকটরকে লাইসেন্স ছাড়া কন্ডাকটর নিয়োগ করা যাবে না। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদ- বা অনধিক ২৫ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। আগে এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল চার মাসের কারাদ- বা ৫০০ টাকা অর্থদ-। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে অনধিক ছয় মাসের জেল বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রয়েছে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালালে ছয় মাসের জেল বা অনধিক ২৫ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ- দেওয়া হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-