ইমাম খাইর •
তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে ভাঙ্গাচোরা জেটি দিয়ে স্বপ্নের সেন্টমার্টিন যাবে পর্যটকরা। আজ শুক্রবার থেকে যাতায়াত করছে পর্যটক প্রমোদতরণী কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন, দ্যা আটলান্টিক ও এমভি ফারহান।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার। তবে, ঝুঁকিপূর্ণ জেটিটির বারবার সংস্কারের দাবী উঠলেও যেই জেটি সেই জেটিই রয়ে গেল। তবুও শংকা নিয়েই আনন্দ ভ্রমনে সেন্টমার্টিন ভীড়বে দেশবিদেশী ভ্রমনপ্রিয়াসীরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক নয়ন শীল বলেন, নৌপথে চলাচলের জন্য ২০২০ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ও সম্ভাবনায় ভরপুর সাগর-নদী-পাহাড় ঘেরা দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। তবে, স্বাধীনতার এতো বছর পরেও আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে ওঠেনি। অথচ পরিকল্পিত উপায়ে আধুনিক পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তোলা হলে তা শুধু দেশে নয়, গোটা দুনিয়া জুড়ে খ্যাতি অর্জন হতো।
কারণ সাগর-নদী-পাহাড়-সমুদ্র সৈকত-প্রবালদ্বীপ ও অপার সম্ভাবনা আর প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সব কিছুর সমন্বয়ে এমন পর্যটন অঞ্চল বিশ্বে কমই আছে। তবে তখনকার দেরিতে হলেও সরকার পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার একর জমি নিয়ে মাস্টারপ্ল্যানের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার ও দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটন শিল্পের প্রসার শুরু হয় মূলত কয়েক যুগ আগে থেকেই।
বিপুলসংখ্যক পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে দেখা দেয় আবাসন, বিনোদনসহ নানা সংকট। আর এই সুযোগে পর্যটকদের সুবিধা দিতে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত গড়ে উঠেছে শত শত বহুতল ভবন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালী পৌরসভা ও আদিনাথ মন্দির এলাকা থেকে শুরু করে কক্সবাজার পৌরসভা, কক্সবাজার সদর উপজেলার একাংশ, সমুদ্রসৈকত থেকে টেকনাফ সৈকত পর্যন্ত এলাকা, রামু ও উখিয়া উপজেলার একাংশ, টেকনাফ পৌরসভা, সাবরাং ইউনিয়নের একাংশ এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ প্রায় ৮০ হাজার একর জমি নিয়ে মাস্টারপ্ল্যানটি প্রণয়ন করা হয়।
এর মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভা ও সদর উপজেলার একাংশে হোটেল-মোটেল জোন, খেলার মাঠ, সরকারি অফিস-আদালত, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, পিকনিক স্পট, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাকৃতিক বনসহ ইকোট্যুরিজম, রেল স্টেশন, চেইন্দায় শিল্প এলাকা, ময়লা-আবর্জনার ডাম্পিং জোন, খুরুশকুলে প্রাকৃতিক বন, পার্ক, মৎস্য জোন, মহেশখালীতে পার্ক, ইকোট্যুরিজম, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, টেকনাফে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন, সেন্টমার্টিনে ইকোট্যুরিজমসহ নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সেখানে সাবরাং এক্সক্লোসিভ ট্যুরিষ্ট জোনের কাজ চলমান।
দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের সাগরের তলদেশে রয়েছে মনোমুগ্ধকর বিচিত্র প্রাণী ও হরেক রকম জীব। রয়েছে নানান আকারের পাথরের স্তুপ, দুর্লভ প্রবাল, পাথরের ফুল। সাগরের জলরাশি ও সৌন্দর্যে ভরা বিচিত্র জীব-প্রাণী যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের। সাগরের তলদেশে এসব বিচিত্র জীব অবাক হওয়ার মত, দেখলে মনে হবে সাগরের তলদেশে রয়েছে সৃষ্টির রহস্যময় এক জগত।
সেন্টমার্টিনের ছেড়াদ্বিয়া (স্থানীয় ভাষায়-চিরাদিয়া) ভ্রমণ করে এসব সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারেন যে কোন পর্যটক। দেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রতি বছর ভ্রমনে আসেন দেশী-বিদেশী কয়েক লাখ পর্যটক। কিন্তু পর্যটকরা নানান কারণে দ্বীপের এই সৌন্দর্য না দেখে ফিরে যান। সেন্টমার্টিনের এসব সাগর রত্ন না দেখে ফিরে যাওয়াকে দুর্ভাগ্য বলেই অনেকে মনে করেন। এসব সাগর রত্ন দেখতে হলে অবশ্যই সেন্টমার্টিনে থাকতে হবে। এখানে পর্যটকদের থাকার সুযোগ-সুবিধা রয়েছে অনেক।
সেন্টমার্টিনের প্যানেল চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খাঁন জানান, দ্বীপের মানুষ পর্যটকদের বরণ করতে সদাপ্রস্তুত।
“অপূর্ব সুন্দর স্থান সেন্টমার্টিন দ্বীপ, স্বচ্ছ নীল পানিতে ঘেরা এই দ্বীপের মানুষও অসম্ভব ভালো। চুরি ডাকাতির রেকর্ড নেই। সারারাত ঘুরতে পারা যায় নির্ভয়ে-নির্জনে।
কিন্তু এই কোলাহল নান্দনিক সেন্টমার্টিনের একমাত্র জেটিটি এখনো ভাঙ্গায় বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। এ অবস্থায় এবছরেও বেহাল দশায় পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে কাল বা পরশু।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, সাগর উত্তাল থাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে এতদিন জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। আবহাওয়া ভালো থাকলে ১ নভেম্বর থেকে আবার পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু করবে। অতিরিক্ত যাত্রীবহন করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর আহমদ বলেন, পর্যটকদের বরণে দ্বীপে পর্যটক ব্যবসায়ীরা হোটেল ও কটেজগুলো সাজিয়ে রেখেছেন। জাহাজ চলাচলের খবর দ্বীপে পৌঁছানোর পর সব শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরেছে। তবে বর্তমানে জেটির অবস্থা খুবই কাহিল। পর্যটকবাহী জাহাজ ভিড়ার উপযোগী নয়। জেটি এবং পল্টন উভয়টির খুব খারাপ অবস্থা। বিষয়টি নিয়ে টেকনাফ উপজেলা মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার উত্থাপন করা হলেও জেলা পরিষদ থেকে এখনও জেটি মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
তিনি আরো জানান, দ্বীপের মানুষ সবসময় পর্যটকবান্ধব। পর্যটন মৌসুমে যাতে দেশী-বিদেশী পর্যটক শিক্ষার্থীরা নিরাপদে দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারেন সেজন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সবপ্রস্তুতি নেয়া হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-