শিশুটির পরিচয় কি হবে?

জাহেদুল ইসলাম, লোহাগাড়া •
শওরফা জন্মের পর বেড়ে ওঠেছে মায়ের কোলে। পৃথিবীতে আপন বলতে তার মা ছাড়া কেউ নেই তার। কার পরিচয়ে বেড়ে ওঠবে সে? জন্ম ১৪ জানুয়ারি ২০১৯, বয়স ৯ মাস অতিক্রম করছে। কি তার পরিচয়? কে তার জন্মদাতা পিতা? কি অপরাধ তার? এমনটা প্রশ্ন এলাকাবাসীর।

শওরাফার মায়ের বাড়ি কক্সবাজার জেলার খুটাখালি পীর সাহেরের বাড়ি সংলগ্ন। জন্মের পর তার বাবা নুরুল হক মারা যাওয়ায় নানার বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি সাতগড় কুলাল পাড়ায় (কুমার পাড়া) চলে এসে শওরপার মা। সেখানেই বড় হয় সে। নানার বাড়িতে বড় হয়ে লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর গুল এ-জ¦ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালেয়ে ২০১৮ সনে আষ্টম শ্রেণিতে পড়াবস্থায় রাস্তা-ঘাটে বিরক্ত করত উপজেলার চুনতি সাতগড় মাঝির পাড়া এলাকার মো: কামাল উদ্দিনের ছেলে মো. শওরফ হোসেন। শওরফার মাকে বাড়িতে একা পেয়ে শওরফ হোসেন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম আদালতে মামলা করেছে ধর্ষিতা কিশোরী।

ভিকটিম ধর্ষিতা কিশোরী বলেন, বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় প্রায় সময় বিরক্ত করত শওরফ। কয়েকবার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও বলেছে। হঠাৎ একদিন নানার বাড়িতে রাতে কেউ না থাকার সুযোগে শওরফ বাড়ির দরজা খুলতে বলেন। বাড়ির দরজা খুললেই সঙ্গে সঙ্গে মুখ চেপে ধরে বিয়ের প্রলোভন দেখায়। সেইদিন রাতেই জোর পূর্বক ধর্ষণ করে শওরফ।

তিনি আরো বলেন, যখন সে তিন মাসের অন্ত:সত্বা তখন গভীর রাতে শওরফের মা আসে তাদের বাড়িতে। টাকার লোভ দেখিয়ে গর্বজাত নষ্ট করতে বলে হুমকি দেয়। কয়েকবার গ্রাম্য শালিসও হয়। কোন বিচার হয়নি। বিয়ে করবে বলে প্রলোভন দেখিয়ে চকরিয়া নিয়ে যায় তাকে। সেখানেও ধর্ষণ করে। বিয়ে না করে বাড়িতে চলে আসে ওইদিন। ওই দিনই পরিবারের কাছে বিষয়টি খুলে বলে ধর্ষিতা কিশোরী। এলাকায় জানাজানি হলে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন কিশোরী।
ঘটনা এখানে শেষ নয়। কিশোরীর নানা হাজী জাফর চুনতি ইউনিয়ন পরিষদে বিচার দেন। পরিষদে কয়েকবার বিচারকার্য বসে। ধর্ষকের পরিবার থেকে কয়েক দফা হুমকি দেয় ধর্ষিতার পরিবারকে। বিচার কার্যেও কয়েকমাস সময় নিয়ে তড়িগড়ি করে ধর্ষক শওরফের পরিবার। শওরফের পার্সপোর্ট রেডি করে কয়েক মাসের মধ্যে বিদেশ চলে যায় সে।

ধর্ষিতা কিশোরী আশ্রয় নেন আদালতের। আদালতের মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয় বলে জানান কিশোরীর নানা হাজী জাফর। তিনি আরো বলেন, মামলা পরিচালনা করতে আদালতে যেতেও ভয় পান তারা। নির্ধারিত তারিখেও আদালতে হাজির হতে পারেনি।

ধর্ষিতা কিশোরীর ঘরে এলো ফুটফুটে কন্যা সন্তান। এলাকায় হৈ চৈ শুরু হয়। কিশোরী না পারছে মরে যেতে, না পারছে বাড়ি থেকে বের হতে। সন্তানের কি হবে পরিচয়। একদিকে ধর্ষকের মায়ের হুমকি, অন্যদিকে সমাজ থেকে একঘর। মামলাও নিয়মিত চালাতে হিমসিম খাচ্ছে। ধর্ষিতা কিশোরীর একটাই দাবী হচ্ছে ভুমিষ্ট সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও স্ত্রীর মর্যাদা।

কিশোরীর বৃদ্ধা নানী বলেন, পিতা মারা যাওয়ার পর নানার বাড়িতে বড় হয় । নানার বাড়িতে বুড়ো নানা-সানি ছাড়া কেউ নেই। মাকে অন্যত্রে বিয়ে দিয়ে দেয়। নানা-নানির অভাবের সংসারে বড় হয় কিশোরী। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে তারা। নানি হাড়ি পাতিল বানিয়ে সংসারের বরণ পোষনও হয় না।

ধর্ষনের অভিযুক্ত শওরফ হোসেনর মা আয়েশা বেগম’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার ছেলের বিরুদ্ধে আদলতে একটি মামলা হয়েছে। চেলে এখন বিদেশে রয়েছে। আদালত যদি প্রমাণ করতে পারে আমার ছেলে ধর্ষণ করেছে, আইনে যেটা হবে সেটা মেনে নিব। তবে তিনি ধর্ষিতা কিশোরীর পরিবারকে হুমকির বিষয়টি নাচক করে দেন।

স্থানীয়রা কেউ ধর্ষনের অভিযুক্ত পরিবারের ভয়ে এ ব্যপারে কথা বলতে রাজি নন তবে উপযুক্ত বিচার দাবী করেন তারা।

আরও খবর