কক্সবাজার জার্নাল •
বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের শেষ কার্যদিবস আগামীকাল রোববার (২৭ অক্টোবর)। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এই দিনই তিনি শেষ অফিস করবেন। এরপর তিনি ২৮ অক্টোবর রাতে বিশ্বব্যাংকে যোগদানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন। এর আগে, সকালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অনুষ্ঠিতব্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নিয়ে বিদায় নেবেন। একই বৈঠকে নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামও উপস্থিত থাকবেন।
বিদায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম ১ নভেম্বর (শুক্রবার) বিশ্বব্যংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগদান করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়ার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। ২ নভেম্বর তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তবে এর ৫ দিন আগে (২৭ অক্টোবর) তিনি তার দীর্ঘ দিনের কর্মস্থল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিদায় নেবেন। এই দিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাসিক সভা আহ্বান করা হয়েছে। এই সভায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে বিদায় জানাবেন। এ উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত বিদায় অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হচ্ছে।
তবে এর পরদিন (২৮ অক্টাবর) মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গের কাছ থেকে বিদায় নেবেন। একইসঙ্গে নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। আনোয়ারুল ইসলাম বর্তমানে সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন।
শফিউল আলম ১৯৮২র বিসিএস (প্রশাসন) ব্যাচের কর্মকর্তা। ‘মন্ত্রিপরিষদ সচিব’ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের শেষলগ্নে তাকে বিশ্বব্যংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে ৩ বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়।
এর আগে, এক সাক্ষাৎকারে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম তার দীর্ঘ দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ক্যাডার সার্ভিসের চাকরি জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। সব কর্মস্থলেই সবার সহযোগিতা পেয়েছি। প্রত্যাশা কম থাকলে প্রাপ্তির হিসেবে অমিল থাকে না। সেবার মনোবৃত্তি থাকলে, হতাশা স্পর্শ করে না। আর দায়িত্ব পালনে শততা ও নিষ্ঠা সব পেশায়ই সাফল্য এনে দেয়।
বর্ণাঢ্য জীবন : মোহাম্মদ শফিউল আলম ১৯৫৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের রুমখা পালং গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম ছৈয়দ হোসাইন ও মাতা আলমাছ খাতুন। তিনি পালং মডেল হাই স্কুল থেকে ১৯৭৫ সালে এসএসসি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা থেকে ১৯৭৭ সালে এইচএসসি, চট্টগ্রাম ওমর গণি এমইএস কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে বিএ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে ইংরেজী বিষয়ে এমএ, চট্টগ্রাম বঙ্গবন্ধু ‘ল’ টেম্পল থেকে ১৯৯০ সালে এলএলবি এবং বৃটেনের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে উন্নয়ন প্রশাসন (ডেভেলপমেন্ট এডমিনিসট্রেশন) বিষয়ে প্রথম বিভাগে এমএসএস ডিগ্রী অর্জন করেন।
মোহাম্মদ শফিউল আলম ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠিত ১ম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৩ সালে ২৭ অক্টোবর সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। সিভিল অফিসার্স ট্রেনিং একাডেমি (কোটা) থেকে প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৮৪ সালে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে সুনামগঞ্জ জেলার সুনামগঞ্জ সদরে উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
পরে তাকে ঢাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বদলি করা হয়। তিনি সেখানে চার মাস কর্মরত থাকার পর পদোন্নতি পেয়ে রাজধানী ঢাকার শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমীতে উপ-পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। বিসিএস প্রশাসন একাডেমী থেকে ১৯৯২ সালে বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য যুক্তরাজ্য গমন করেন।
প্রশিক্ষণ শেষে মোহাম্মদ শফিউল আলম ১৯৯৪ সালে ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার থানা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সাত মাস পরেই তাকে ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
১৯৯৭ সালে তাকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০০ সালে তাকে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয় এবং ২০০১ সালে উপ-সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান এবং মাগুরা জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলি হন। ২০০৩ সালে তাকে মাগুরা থেকে ময়মনসিংহ জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে ২০০৪ সালের ১৯ জুলাই তাকে সাভারের বিপিএটিসিতে বদলি করা হয়। ২০০৬ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেলে তাকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
২০০৭ সালে রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৮ সালে আবার বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন সংস্থার (বিএফআইডিসি) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০৮ সালে তাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, ২০০৯ সালের ৪ মার্চ রাষ্ট্রপতির ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তিনি সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে রাষ্ট্রপতির সচিব এবং ভ’মি মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস
নিজের কর্মদিবসের স্মৃতিচারণ করে বিদায়ী কেবিনেট সেক্রেটারি মোহাম্মদ শফিউল আলম আবেগে আপ্লুত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাঁর নিজস্ব আইডিতে তিনি একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যেখানে তিনি লিখেছেন: “বিসিএস প্রথম ব্যাচের সদস্য হিসেবে ১৯৮৩ সালের ২৭ অক্টোবর আমরা ৫৫ জন কোটায় সরাসরি যোগদান করি। আজ ৩৬ বছর পূর্ণ হল। আগামীকাল রোববার ৩৬ বছর পর বহু চড়াই-উতরাই পার হয়ে সিভিল সার্ভিসকে বিদায় জানাচ্ছি। মনটা বড়ই বিষণ্ণ। অনেক স্মৃতি অনেক স্মৃতি। অনেককে হারিয়েছি। কত কিছুই করার ছিলো, করতে পারিনি। অম্লমধুর অভিজ্ঞতা নিয়ে বিদায় নিচ্ছি। ভালোয় ভালোয় শেষ করার জন্য আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া। তার সাথে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সহযোগী সহকর্মীদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা। চলার পথে আমার কথা-কর্ম বা আচরণে কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে আমাকে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন। মহান আল্লাহ আপনাদের সবার প্রতি সহায় হোন আজকের দিনে এই কামনা।”
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-