ডেস্ক রিপোর্ট • যুবলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক মিলে ৩৪ জন নেতা গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর একজন, দুজন যুগ্ম সম্পাদক ও তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদকের বয়স ৫৫ বছরের নিচে। তবে বয়স সীমা ৪৫ বছর নির্ধারণ করা হলে এঁরা সবাই বাদ পড়তেন।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আগামী ২৩ নভেম্বর। এ সম্মেলন সামনে রেখে এখন সব আলোচনা বয়স নিয়ে। গতকাল সোমবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে নেতা-কর্মীদের তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা কেউ কার্যালয়ে আসেননি। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম ও সদস্যসচিব হারুনুর রশীদ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে। সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে কর্মকৌশল ও উপকমিটি গঠন নিয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তাঁরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে কার্যালয়ে আসার কথা রয়েছে।
গত রোববার সন্ধ্যায় গণভবনে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নেতৃত্ব নির্বাচনে বয়সসীমা বেঁধে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন, শুরুতে ৪৫ বছরের মধ্যে নেতা নির্বাচনের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় যুবনীতি অনুসারে, ৩৫ বছর পর্যন্ত যুবক থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি। এরপর সবার মত জানতে চাইলে অনেকেই বয়স বাড়ানোর পক্ষে মত দেন। যুক্তি হিসেবে নেতারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যারা যুবলীগের রাজনীতি করছেন তাদের সবাই সংগঠন থেকে বাদ পড়ে যাবে। এমনকি বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে এ বয়সের মধ্যে নেতা নির্বাচন করা দুষ্কর হয়ে পড়বে। একপর্যায়ে বয়স সীমা ৫৫ করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠক সূত্র জানায়, বয়স সীমা ৫৫ থেকে বাড়াতে মত দেন যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন নেতা। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, সরকারি চাকরি ছাড়ার বয়সের সঙ্গে মিলিয়ে ৬০ করা যেতে পারে। এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময় যুবলীগ করতে হবে কেন। এলাকায় গিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এরপর দুই জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসেনর আমুর পরামর্শ চান প্রধানমন্ত্রী। ৫৫ বছরের বয়সসীমা যথার্থ আছে বলে মত দেন তাঁরা। তারপর ৫৫ বছরের বয়সসীমা চূড়ান্ত করা হয়।
এ বিষয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বলেন, সব দিক বিবেচনা করেই সাংগঠনিক নেত্রী বয়সের সীমা নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্য থেকেই সংগঠনের যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। ইতিমধ্যেই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়কের সঙ্গে মিলে প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে।
বয়স সীমা নিয়ে যুবলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সম্মেলনর তারিখ ঘোষণার পর থেকেই নেতা হতে অনেকে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। তাঁরা এখন হতাশার মধ্যে পড়ে গেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নেতা বলেন, যুবলীগের প্রথম গঠনতন্ত্রে ৩৫ বছরের বয়স সীমা ছিল। পরে এটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গত চার দশকে যুবলীগের নেতাদের বয়স বেড়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতা হুট করে বাদ পড়ে যাওয়ায় হতাশা তৈরি হয়েছে। তাদের অনুসারীরাও নতুন নেতা খুঁজতে শুরু করেছেন। সংগঠনের বাইরে থেকে নেতা নির্বাচনের বিষয়টিও আলোচনায় চলে এসেছে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্য থেকেও নেতা নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে সংগঠনে। সাংগঠনিক জেলা, উপজেলা পর্যায়ের নেতাদেরও অধিকাংশের বয়স ৫৫ পেরিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
যুবলীগের শীর্ষ নেতা হতে আলোচনায় ছিলেন যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাইদুর রহমান শহীদ (শহীদ সেরনিয়াবাত)। তিনিও বয়সের কারণে বাদ পড়েছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বাদ পড়লেও এটা নিয়ে কারও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সংগঠনের স্বার্থ চিন্তা করেই সাংগঠনিক নেত্রী বয়স নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
তবে সংগঠনের তরুণ কয়েকজন নেতা জানান, ২০০৬ সালে ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনে বয়স সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। ওই সময়েও হঠাৎ করে হাজারো নেতা বাদ পড়েন ছাত্রলীগ থেকে। গত ১৩ বছরেও যাদের অনেকেই পদ পাননি আওয়ামী লীগের অন্য কোনো সংগঠনে। তাই বয়স বেঁধে দেওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তাঁরা। তাঁরা বলেন, ওমর ফারুক চৌধুরী ৬৪ বছর বয়সে চেয়ারম্যান হয়েছেন সর্বশেষ। ৭১ বছর বয়সে নানা সমালোচনার মুখে অব্যাহতি পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে বয়স সীমার মধ্যে আছেন আতাউর রহমান ও নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। নানা কারণে বিতর্কিত নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। গণভবনের বৈঠকেও তাকে ডাকা হয়নি। তাঁর বহিষ্কারের বিষয়টি আলোচনায় আছে যুবলীগের ভেতরে।
আতাউর রহমানবলেন, বয়সের কারণে অভিজ্ঞ অনেকেই যুবলীগ থেকে বাদ পড়ছেন। তাদের জন্য সমবেদনা ও শুভকামনা থাকবে। যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে যুক্ত করা হবে।
এদিকে ব্যাপক বিতর্কের মুখে ওমর ফারুক চৌধুরীকে অব্যাহতি দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যুবলীগের বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। তারাঁ বলছেন, সংগঠনের বিভিন্ন ধাপে কমিটির নামে বাণিজ্য হয়েছে। ওমর ফারুকের নামেই এসব বাণিজ্য করেছে বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান। তাই শুধু অব্যাহতি নয়, বিভিন্ন অনিয়ম তদন্ত করে ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও যুবলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দায়ী করেন উপস্থিত নেতারা। তবে তাঁরা সরাসরি ওমর ফারুক চৌধুরীর নাম বলেননি।
ইতিমধ্যেই ওমর ফারুক ও তাঁর পরিবারের সব সদস্যদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া তাঁর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে সংগঠনের কার্যক্রম থেকে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন ওমর ফারুক চৌধুরী।
জানা গেছে, তামাকের বিকল্প ‘টেন্ডু পাতা’ থেকে শুরু করে তৈরি পোশাকের ব্যবসা করেছেন। বিভিন্ন সময় বিড়ি শ্রমিক লীগ, জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগর রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন ওমর ফারুক চৌধুরী। ২০০৯ সালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আর ২০১২ সালে যুবলীগের চেয়ারম্যান হন তিনি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-