ভাসানচরে হচ্ছে পুলিশি থানা

বাংলা ট্রিবিউন •

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বিচ্ছিন্ন ভাসানচরে অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ঘোষণার পর এ চরকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করার নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এখানকার নিরাপত্তার বিষযটিকে বিবেচনায় নিয়ে সরকার অবশেষে ভাসানচরে একটি পুলিশি থানা গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সোমবার (২১ অক্টোবর) সরকারের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় এমন একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহম্মদ শফিউল আলম। তিনি জানান, ভাসানচরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে ফেরত পাঠানোর আগ পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো থেকে ভাসানচরে অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরে গত বছর সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয়ভাবে অনেক নামে পরিচিতি থাকলেও এই ভূখণ্ডটির জন্য ভাসানচর নামটি নির্বাচন করেন শেখ হাসিনা এবং এই চরটির উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণে দ্রুত বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এ ঘোষণার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বছরখানেক আগে ভাসানচর এলাকা ঘুরেও এসেছেন। এরইমধ্যে সরকার সাগরবর্তী এই বিস্তীর্ণ চরটির উন্নয়নে ২৮ কোটি ডলার ব্যয় করছে বাংলাদেশ। নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই চরটির উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, চরটির নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়ায় এখানে বসবাসে আসা নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে সরকার। এ কারণে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এখানে পুলিশের থানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভাসানচর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে।

ভাসানচরে দুটি পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কথা চিন্তাভাবনা করে স্থানীয় প্রশাসন। পদ্ধতিগুলো হচ্ছে গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ন প্রকল্প। এরমধ্যে পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে গুচ্ছগ্রাম পদ্ধতিটি ভালো বলে মনে করছে স্থানীয় প্রশাসন।

জানা গেছে, গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে হাতিয়ার ভাসানচরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বর্তমানে বরাদ্দ করা পাঁচ হাজার একর জমিতে গুচ্ছগ্রাম পদ্ধতিতে আড়াই লাখ ও আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে চার লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে পুনর্বাসন করা যাবে।

ভাসানচরে বর্তমানে জমির পরিমাণ ১৩ হাজার একর। এরমধ্যে অতি জোয়ারে জলমগ্ন থাকে দুই হাজার ৬০০ একর। পুরো চরটিতে খাল ও শাখা খালের জমির পরিমাণ এক হাজার ৫০০ একর। এতে পাঁচ হাজার একর জমিতে গুচ্ছগ্রাম বা আশ্রয়ণ প্রকল্প করা যেতে পারে। বাকি তিন হাজার ৯০০ একর ভূমি বেড়িবাঁধ, রাস্তাঘাট, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, স্যানিটেশন, নলকূপ, পুকুরসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হতে পারে।

হাতিয়ার ভাসানচর জেলা সদর থেকে প্রায় ৭২ কিলোমিটার দূরে। এটি হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাট থেকে ৩৫ কিলোমিটার এবং নলচিরা ঘাট থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মূল ভূখণ্ড থেকে চরটির দূরত্ব ৭ কিলোমিটার।

জানা গেছে, ভাসানচরে স্বাভাবিক জোয়ারে পুরো চরে ৩-৪ ফুট পানি ওঠে। আর ভরা পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় স্থানভেদে ৪-৮ ফুট পর্যন্ত পানি ওঠে। চরটিতে নদীর স্বাভাবিক ভাটায় প্রায় ৫০ হাজার একর পর্যন্ত জমি ভেসে উঠে। চরটি জেগে ওঠার পর ২০০০-২০০১ থেকে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর পর্যন্ত ১৬ হাজার ১১১ একর ম্যানগ্রোভ ও ৩৯ একর মাউন্ট (উঁচুস্থানে) বনায়ন করেছে বনবিভাগ।

তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর প্ররোচনায় টেকনাফ ও উখিয়ার ক্যাম্পগুলো ছেড়ে ভাসানচরে যেতে অস্বীকৃতি জানায় রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘ থেকেও বলা হয় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে না গেলে তাদের সেখানে জোর করে নেওয়া যাবে না।

এবিষয়ে সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সরকার ভাসানচর নিয়ে কোনও লুকোচুরি করছে না। সব নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলে আগ্রহী কূটনীতিকদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি বলেন,‘আমরা স্বচ্ছ। কোনও কিছু লুকোচুরি খেলতে চাই না। তবে আগে কাজ শেষ হোক।’

আরও খবর