খেলার মাঠ সংকটে পিছিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারের ক্রীড়াঙ্গন

শাহীন মাহমুদ রাসেল •

একদিকে সরকার জাতীয় ক্রীড়ার মান উন্নয়নের কথা বলছে অন্যদিকে নানাভাবে খেলার মাঠসহ খেলাধুলার নানা সুযোগ ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে। বিদ্যমান খেলার মাঠগুলোকে আনুষ্ঠানিক ও আইনগতভাবে খেলার মাঠ হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়া, নতুন মাঠ তৈরি না করা এবং খেলোয়াড় তৈরি ব্যাতিরেকে অবকাঠামো তৈরিতে অধিক মনোযোগী হওয়ায় বর্তমান প্রজন্ম ক্রীড়াবিমুখ হয়ে বেড়ে উঠছে।

শুধু শহরাঞ্চল নয় এখন গ্রামেও খেলার মাঠের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে শৈশব কৈশোরের দূরন্তপনা আজ আটকা পড়েছে টিভি কার্টুন আর কম্পিউটার গেম্স-এর বেড়াজালে। পর্যাপ্ত খেলার জায়গা না থাকায় শিশু-কিশোররা ঘরে বসে ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়ছে। হচ্ছে মস্তিস্ক নির্ভর খেলায় অভ্যস্ত, শরীর নির্ভর খেলা ভূলে যাচ্ছে। শারীরিকভাবে অলস হয়ে যাচ্ছে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি সঠিকভাবে হচ্ছে না, এতে প্রায় শিশুরা খিটখিটে মেজাজের, অপরিপক্ক আচরণ এবং বিপথে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দিন দিন বেড়ে চলেছে।

কক্সবাজারে খেলার মাঠ সংকটে ঝিমিয়ে পড়ছে ক্রীড়াঙ্গন। তৈরি হচ্ছে না মানসম্পন্ন খেলোয়াড়। জেলায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি খেলার মাঠ থাকলেও খেলাধুলার পরিবেশ রয়েছে মাত্র চারটি মাঠে। জেলা পর্যায়ের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম, রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। তা ছাড়া জোয়ারিয়ানালা উচ্চ বিদ্যালয় (বিজয়মেলা মাঠ) বর্তমানে খেলাধুলার পরিবেশ নেই। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের বা উপজেলা পর্যায়ের মাঠগুলো হাট-বাজারে পরিণত হয়েছে। মাঠের অভাবে চর্চা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে জেলার ক্রীড়া সংগঠনগুলো।

এমতাবস্থায় দিন দিন যেভাবে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ তাতে সামনের দিনগুলোতে খেলাধুলা চালানো আরো কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কক্সবাজারের ক্রীড়া সংগঠকরা। এছাড়া বিভিন্ন কলেজ/ বিদ্যালয়ের মাঠ সারা বছরই ব্যস্ত থাকে তাদের নিজস্ব কার্যক্রম নিয়ে। সেখানেও সাধারণের খেলার কোন সুযোগ নেই। ফলে দিন দিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে খেলাধুলার সুযোগ। এই মাঠ সংকটের কারণে মান সম্পন্ন খেলাধুলা হতে পারছে না। ফলে বেরিয়ে আসছে না জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করার মত কোন ক্রিড়াবিদ। তারপরও থেমে নেই কক্সবাজারের ক্রীড়াঙ্গণ। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। যদিও সেটা কচ্ছপ গতিতে। যেটা হওয়ার কথা ছিল খরগোষ গতিতে।

জানা যায়, বিভিন্ন উপজেলায় অনেক মাঠ পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট ও ফুটবল মাঠ হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়েছিল কিন্তু সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও রাজনৈতিক-প্রাতিষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের জন্য সারা বছর ধরেই দখলে থাকে মাঠ গুলি। এছাড়াও জেলায় তেমন কোনো বড় মাঠ না থাকায় বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামেই ক্রীড়াঙ্গনের সব কিছু চলছে ঠাসাঠাসি করে।

এ বিষয়ে ক্রীড়া লেখক সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, এক সময় জেলায় অনেক খোলা জায়গা ছিল যা খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে সে সকল খোলা জায়গা অপরিকল্পিতভাবে দালান কোঠা নির্মাণ ও বিভিন্নভাবে দখলের ফলে আজ প্রায় বিলীনের পথে। যতটুকু অবশিষ্ট আছে তা আনুষ্ঠানিক ও আইনগত ভাবে খেলার মাঠ হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার কারণে বিভিন্নভাবে দখল করার পায়তারা চলছে এবং এভাবে চলতে থাকলে এক সময় তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক এক খেলোয়াড় বলেন, সরকারীভাবে মাঝে মাঝে মাঠ সংরক্ষণের আশার বাণী দেওয়া হলেও বাস্তবিক অর্থে মাঠ তৈরির ক্ষেত্রে এবং এখনও যে সকল মাঠ আছে তা সংরক্ষণের উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি। আগামী প্রজন্মের সুস্থ-স্বাভাবিক ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে এবং দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রকে অধিকতর কার্যকর করতে প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় পর্যাপ্ত খেলার মাঠের বিকল্প নেই।

যা আগামী প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার বড় প্রতিবন্ধকতা এবং একটি সুস্থ শক্তিশালী জাতি গঠনের পথে হুমকি স্বরুপ। সুস্থ-স্বাভাবিক ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে এবং দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রকে অধিকতর কার্যকর করতে প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নিশ্চিত করণ ও ক্রীড়াকে ক্যারিয়ার গঠনের উপায় হিসেবে নিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো জরুরী বলে মনে করছেন অনেকে। আর এই মাঠ সংকট কবে কাটবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। তাইতো কক্সবাজারে অন্তত একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের দাবি উঠেছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু কেউ যেন শুনছে না ক্রিড়াবিদ এবং ক্রিড়া সংগঠকদের সে আকুতি।

আরও খবর