এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥
মিয়ানমারের নাগরিকত্বের জন্য বাংলাদেশে অবস্থান করে আন্দোলনের ডাক দিলেও রোহিঙ্গারা কামাই করে টাকা পৌঁছে দিচ্ছে মিয়ানমার সরকারকে। তারা উখিয়া টেকনাফে ৩২ আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করে ফ্রি রেশন সামগ্রী ভোগ করছে বাংলাদেশ ও বিভিন্ন এনজিওর। মিয়ানমার সরকারের কিছু ভোগ না করেও নগদ কিয়েত পৌঁছে দিচ্ছে মিয়ানমারে। প্রতিদিন লাখ লাখ কিয়েত পৌঁছে যাচ্ছে মিয়ানমার সরকারের এ্যাকাউন্টে। তাই রোহিঙ্গাদের অকৃতজ্ঞ জাতি বলে আখ্যা দিয়েছে সচেতন মহল।
সীমান্ত এলাকায় টাওয়ার স্থাপনের কারণে নেটওয়ার্ক ব্যবসা করে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের ভূ-খন্ড থেকে কিয়েত কামাই করে নিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার সরকারকে প্রত্যহ লাখ লাখ কিয়েত কামানোর পক্ষে সহযোগিতা দিচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী। ৩২ আশ্রয় শিবিরে অন্তত ৫ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সিম ব্যবহার করছে। প্রতিদিন কিয়েত কার্ডে এক কোটি কিয়েত ব্যবহার করছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গা শিবিরে ওপারের সিমের কদর বেড়েছে জানতে পেরে মিয়ানমারের মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ‘এমপিটি’ সীমান্ত এলাকায় তাদের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গারা দাবি করেছে মিয়ানমার সরকারের বাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর অত্যাচার, জ্বালাওপোড়াও, ধর্ষণ ও গণহত্যা চালিয়েছে। এ কারণে প্রাণে বাঁচতে তারা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।
বাংলাদেশ সরকার অন্তত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে তাদের বাসস্থান, খাওয়া-দাওয়া ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছে। ওপারে পরিস্থিতি শান্ত এবং মিয়ানমার সরকার রাজি হওয়ায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ। দিন তারিখও ধার্য করা হয়। ওপার থেকে পাওয়া তালিকা মতে রোহিঙ্গাদের ট্রানজিট ঘাটে সম্মানের সহিত নিয়ে আসতে আশ্রয় শিবিরে গাড়ি পাঠানো হয়। এর আগে মিয়ানমারের মন্ত্রী ও উচ্চ পর্যায়ে প্রতিনিধিদল আশ্রয় শিবিরে এসে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে আহ্বান জানান। দুইবার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তাদের গ্রহণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতিও নিয়েছিল মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রোহিঙ্গারা ফ্রি রেশন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ছে দেখে প্রত্যাবাসনে বেঁকে বসে। তাদের দাবি হচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থানকালীন তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে সরকারের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে উল্টো ২৫ আগস্ট মহাসমাবেশের আয়োজন করে রোহিঙ্গারা। মুঠোফোনে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা অন্য ক্যাম্পে অবস্থানকারী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিবিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে থাকে। ইন্টারনেটের সাহায্যে রোহিঙ্গারা দেশের দুর্নাম রটাতে থাকে বহির্বিশ্বে।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে আসে। শরণার্থী আইনে আশ্রিত দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহার আইন বহির্ভূত হওয়ায় সরকার উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় বাংলাদেশী মোবাইল কোম্পানির থ্রি-জি ফোর-জি বন্ধ করে দেয়। এতে বেকায়দায় পড়ে যায় ৩২ ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। আশ্রিত দেশের সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত না জানিয়ে উল্টো পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিমক হারাম রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের সিম ব্যবহারে মরিয়া হয়ে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে খবর পাঠিয়ে কৌশলে এপারে (উখিয়া-টেকনাফ) নিয়ে আসে লাখ লাখ সিম। ইতিপূর্বে টেকনাফ ও উখিয়া পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ সিমসহ চার রোহিঙ্গাকে আটক করেছে।
সূত্র মতে, বিভিন্ন এনজিওতে চাকরি, ত্রাণ সামগ্রী বিক্রি ও ক্যাম্প অভ্যন্তরে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করে কামানো টাকা থেকে ওপারের কার্ড কিনে কথা বলে প্রত্যহ লাখ লাখ কিয়েত পৌঁছে দেয়া হচ্ছে মিয়ানমারে। উখিয়া টেকনাফে ৩২ আশ্রয় ক্যাম্পে অন্তত ৫ লাখের বেশি মিয়ানমারের সিম ব্যবহার করছে রোহিঙ্গারা। ওই সিম থেকে ইন্টারনেট ও কথাবার্তা আদান-প্রদানে বহু গোপনীয়তা ফাঁস হচ্ছে মিয়ানমারে। বাংলাদেশের বহু গোপন তথ্য জেনে যাচ্ছে মিয়ানমারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। একটি পরিসংখ্যান মতে একজন রোহিঙ্গা যদি এমপিটি সিমের সাহায্যে প্রত্যহ ২০ কিয়েত খরচ করে, তাহলে প্রতিদিন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মিয়ানমার পাচ্ছে এক কোটি কিয়েত। এক মাসে ৩ কোটি এবং গত ৪৫ দিনে ৪ কোটি কিয়েত পৌঁছে দিয়েছে রোহিঙ্গারা।
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ থেকে ক্যাম্পে মিয়ানমারের সিম ব্যবহার শুরু হয়েছে। অভিজ্ঞমহল বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের এমপিটি সিম ব্যবহার সম্পূর্ণ অবৈধ। এই ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। মিয়ানমারের মোবাইলের নেটওয়ার্ক সীমান্তে পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় কিন্তু সেই নেটওয়ার্কের সিম এপারে ব্যবহার হওয়া আমাদের জন্য চরম ঝুঁকির বিষয়। জনকণ্ঠ
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-