ফারুক আহমদ, উখিয়া:
উখিয়ায় নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে কতিপয় চিহ্নিত দালাল চক্র লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেএমন অভিযোগে তদন্তে নেমেছেন পল্লী বিদ্যুত সমিতি।
উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উখিয়া পল্লী বিদ্যুত সমিতির ডিজিএম সরওয়ার গোলাম মুস্তাফার নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল গত রবিবার বিকালে হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বড়বিল খেজুর তলা গ্রামে সরজমিন পরিদর্শনে যান।
এসময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম সহ বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত কালে শত শত গ্রামবাসি ও ভুক্তভোগীদের উপস্থিতিতে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের নামে টাকা নিয়েছে বলে তদন্ত টিমের সদস্যদের নিকট জবানবন্দি দেওয়া হয়।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম সরোয়ার গোলাম মুস্তাফা সত্যতা স্বীকার করে বলেন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
উল্লেখ্য বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল এ সংক্রান্ত সংবাদ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হলে বিদ্যুৎ বিভাগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, উপজেলার হলদিয়াপালং ৩নং ওয়ার্ডের ছায়া খোলা, রেঙ্গুরবিল, বড়ুয়াপাড়া, সাতগড়িয়া পাড়া ও তুলাতলী নামক গ্রামে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে টাকা হাতিযে নিচ্ছে স্থানীয় একটি দালাল চক্রের সিন্ডিকেট।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধান মন্ত্রীর উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এ কর্মসূচীর আওতায় সারাদেশের ন্যায় উখিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে।
প্রান্তিক ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে বিদ্যুৎ সেবা পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নিরলস ভাবে কাজ করে গেলেও স্থানীয় কিছু চিহ্নিত দালাল চক্র এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হত দরিদ্র পরিবারের নিকট হতে হাতিযে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত রয়েছে বিদ্যুৎ অফিসের লাইন সম্প্রসারণ কাজের ঠিকাদার ও ফোর ম্যান ও স্থানীয় দালালচক্র। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে নানা অজুহাত দেখিয়ে ওই দালাল চক্র এ কাজটি করে যাচ্ছে বলে অনেকের অভিমত।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ছায়া খোলা রেঙ্গুলবিল, বড়ুয়া পাড়া, সাতগড়িয়া পাড়া ও তুলাতলী ও পার্শ্ববতী এলাকায় প্রায় ৩শত ৫০ পরিবার রয়েছে। ওই গ্রামের সুবিধা বঞ্চিত পরিবারে নতুন বিদ্যুৎ পৌছে দিতে সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় কাজ শুরু করেন। বর্তমানে বড়ুয়া পাড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়েছে।
স্হানীয় সমাজ সেবক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা জামাল উদ্দিন, মুন্সি ছৈয়দ নুর ও আয়াছ মিয়া সহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, নতুন বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগের নামে ৩হাজার ৪ হাজা টাকা করে প্রতিটি পরিবার থেকে আদায় করছে।
স্থানীয় মেম্বার হোসেন মোহাম্মদ মোক্তারের এর নির্দেশে দালালচক্রের সদস্যরা খুঁটি, বিদ্যুৎ সংযোগ ও মিটারের কথা বলে টাকা গুলো আদায় করছে।
অভিযোগে আরো জানা যায়, টাকা আদায়কারী সিন্ডিকেট সদস্যরা হচ্ছে মনিয়া, ছৈয়দ আলম, আলী হোছন, জয়নাল, খুইল্ল্যা মিয়া, টিটু বড়ুয়া, পুতিয়া, জাফর আলম, আলী হোছন ও আহমদ হোছন। উক্ত সংঘবদ্ধ দালাল চক্র জোরপূর্বক বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে উৎকোচের টাকা উত্তোলন করছে।স্থানীয় জনগনের অভিমত সরকার বিনা খরচে প্রান্তিক এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারন ও সংযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও কতিপয় চিহ্নিত দালাল চক্র এ সুযোগে জোর পূর্বক টাকা আদায় করা খুবই দু:খ জনক।
তারা আরও বলেন, কেউ টাকা দিতে অনিহা প্রকাশ করলে তাকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে অসহায় গরীব মানুষ টাকা দালালদের হাতে তুলে দেয়। এভাবে শুধু মাত্র ৩নং ওয়ার্ড থেকে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সাধারণ ও নিরহ জনগণ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে এ চক্রটি।
দালাল চক্রের সাথে উখিয়া ও কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যাতা ও যোগসাজস রয়েছে বলে জানা গেছে।এদিকে স্থানীয় জনগণ ইতিমধ্যে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম এর কাছে গিয়ে নতুন সংযোগের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করলে বিষয়টি তিনি উখিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএমকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন বলে জানা গেছে।
দায়িত্বশীলসূত্রে জানা গেছে, তদন্তে কালে সেহের আলী প্রকাশ পুতিয়া আলী মোকতার আলী হোসেন ও জাফর আলম তদন্ত টিম কে লিখিতভাবে জবানবন্দি প্রদান করেন যে বিদ্যুৎ সংযোগ নামে নতুন গ্রাহকদের নিকট হতে আদায়কৃত টাকা স্থানীয় মেম্বার হোসেন মোহাম্মদ মুক্তার কে দেওয়া হয়েছে।
এ সময় শত শত ভুক্তভোগী গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম প্রতিশ্রতি দেন যে প্রমাণিত হলেই আদায় কৃত টাকা পুনরায় জনগণকে ফেরত দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম সরোয়ার গোলাম মোস্তফা জানান তদন্ত কার্যক্রম আমরা অনেক দূর এগিয়েছি এবং তদন্ত চলমান।
তিনি আরো বলেন তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলে নতুন গ্রাহকদের নিকট কি পরিমাণ টাকা দালালচক্র হাতিয়ে নিয়েছে তা আমরা পরে প্রমাণ সাপেক্ষে গণমাধ্যমকে জানানো হবে। স্থানীয় মেম্বার হোসেন মোহাম্মদ মুক্তার বলেন তিনি কারো কাছ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের নামে টাকা নেইনি প্রতিপক্ষরা দুর্নাম করতে তার বিরুদ্ধে অহেতুক অভিযোগ করছে। সচেতন নাগরিক জাহাঙ্গীর আলম জানান মেম্বার মুক্তারের নেতৃত্বে লক্ষ লক্ষ ঢাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
স্থানীয় জনগন বিদ্যুৎ সংযোগের নামে বিপুল পরিমান টাকা নিরহ ব্যক্তির নিকট হতে আদায়কারী চিহ্নিত দালাল চক্রদেরকে সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট দাবী জানিয়েছেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-