ধর্ম ডেস্ক •
আবদুলাহ ইবনে আযদি সাবা উপত্যকার অধিবাসী ছিলেন। মদিনার আনসারগণ তারই বংশধর। তিনি সন্তানদেরকে ওসিয়ত করেছিলেন, তোমরা শেষ নবীর (সা.) ওপর ঈমান এনো।
তিনি রাসূল (সা.) এর আগমনের ভবিষ্যতবাণীও করেছিলেন। সাবার প্রসিদ্ধ বাঁধ রক্ষার কৌশল তার গোত্রকে বলেছিলেন। পবিত্র কোরআনে এ ঘটনার বিবরণ রয়েছে:
لقد كان لسباء فى مسكنهم اية
(সূরা সাবা-৩৪, আয়ত: ১৫)
এই আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সাবা উপত্যকার অধিবাসীদেরকে আল্লাহ তায়ালা শস্য-শ্যামল বাগ-বাগিচা দান করেছিলেন। ঠাণ্ডা গরম উভয় মৌসুমেই তাতে ফল উৎপাদিত হত। কিন্তু তারা এ নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা করে ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে পড়ল। এর শাস্তিস্বরূপ মহান আল্লাহ তাদের ওপর আজাব পাঠালেন। তাদের বন্যা নিয়ন্ত্রক বাঁধ ভেঙে গেল এবং বসতবাড়ি বাগ বাগিচা সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল।
এ সুদৃঢ় ও মজবুত বাঁধ ধ্বংসের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা বিশাল আকৃতির ইঁদুর পাঠালেন। তাদের নখর ও দাঁত লোহার মতো শক্ত ছিল। ইঁদুরগুলো বাঁধ ভাঙ্গা শুরু করল। আবদুলাহ ইবনে আযাদি ওই উপত্যকার অধিবাসী ছিলেন। তিনি একদিন পাহাড়ে উঠে দেখতে পেলেন বিশাল আকৃতির ইদুঁরগুলো নখ দিয়ে বাঁধের মাটি খনন করছে। আর দাঁত দিয়ে বাঁধের শক্ত বাঁধনগুলো কেটে ফেলছে। তিনি ফিরে এসে পরিবারের লোকদেরকে এ ঘটনা শুনালেন এবং সকলকে তা দেখালেন।
সাবার অধিবাসীরা ইদুরগুলো তাড়ানোর বহু চেষ্টা করল কিন্তু সব ব্যর্থ হলো। পরিশেষে বিড়াল এনে ইঁদুরের ওপর ছেড়ে দিল। কিন্তু ইদুঁরগুলো এতো বিশাল আকৃতির ছিল, বিড়াল দেখে ভয় তো পেলই না বরং উল্টো বিড়ালগুলোকে ধাওয়া করল। বিড়ালগুলো পালিয়ে প্রাণ বাঁচাল।
আবদুলাহ ইবনে আযদি তাঁর ঘনিষ্ঠজন এবং সন্তানদের বললেন মনে হচ্ছে এ বাঁধ কোনোভাবেই রক্ষা করা সম্ভব নয়। এটা আল্লাহর গজব বলেই মনে হয়। এজন্য এ এলাকা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ত্যাগ করতে হবে। এলাকা ছাড়ার এমন কোনো বুদ্ধি বের করো, যেন লোকেরা বুঝতে না পারে যে, আমরা স্বেচ্ছায় এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
তিনি গোত্রের বিশিষ্ট এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। সকলেই তাকে সমীহ করতো। প্রতি সন্ধ্যায় এলাকার গণ্যমান্য লোকেরা তার বাসায় সমবেত হয়ে এলাকার বিভিন্ন অবস্থা নিয়ে আলোচনা করতো। একদিন তিনি গোপনে সন্তানদের নিয়ে বসলেন। ছোট ছেলেকে বললেন, আজ সন্ধ্যায় যখন এলাকার গণ্যমান্য লোকেরা আমার বাসায় আসবে, আমি তাদের সামনে তোমাকে একটি কাজ করতে বলব। তুমি গোয়ার্তুমি করে বলবে ‘পারব না’ আপনার কাজ করতে। এতে আমি তোমাকে গালমন্দ করতে থাকব। তখন তুমি এসে জোরে আমার গালে এক থাপ্পড় মেরে দিও। অন্যান্য সন্তানদেরকে বললেন, তোমরা এর কোনো প্রতিবাদ করবে না। যখন মজলিসের লোকেরা দেখবে, তোমরা এর কোনো প্রতিবাদ করছ না, তখন তারাও কোনো প্রতিবাদ করবে না। করার সাহসও পাবে না। এরপর যা করার আমিই করব।
সন্ধ্যায় লোকেরা তার বাড়িতে সমবেত হলো। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ এগুতে লাগল। যখন ছোট ছেলে বাবার গালে প্রচণ্ড জোরে থাপ্পড় মেরে বসল। মজলিসের লোকেরা হতভম্ব হয়ে গেল। আর আবদুল্লাহর অন্যান্য পুত্রেরা এর কোনো প্রতিবাদ করল না। ফলে তারাও কিছু বলতে সাহস পেল না। আবদুল্লাহ ইবনে আযদি অত্যন্ত ব্যথিত কন্ঠে উপস্থিত লোকদের বললেন, একটা ছোট্ট ছেলে আমার গালে চপেটাঘাত করল আর তোমরা কিছুই বললে না। তোমাদের কী বিবেক বুদ্ধি সব নষ্ট হয়ে গেছে? আমাকে এত বড় অপমান করা হলো আর তোমরা কোনো প্রতিবাদ না করে বসে বসে তামাশা দেখলে।
আমি কসম করে বলছি, তোমাদের মাঝে আমি আর থাকব না। যেখানে মান সম্মানই থাকল না সেখানে কী আর থাকা যায়? গোত্রের লোকেরা তখন বলে উঠল, আপনি উত্তেজিত হবেন না। আমরা মনে করেছি, ছোট্ট ছেলের এ ভুলের কারণে আপনি বেশি প্রভাবিত হবেন না। ছোটরা তো ভুল করতেই পারে। এজন্য আমরা তাকে কিছু বলিনি।
আবদুল্লাহ সক্রোধে বললেন, যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। এখান থেকে চলে যাওয়ার কসমও খেয়েই ফেলেছি। এবার তো অন্য কোথাও চলে যেতেই হবে। আর ঘরের এতো মালপত্র তো সঙ্গে নিয়ে যেতে পারব না। তোমরা আমার মালপত্রগুলো কিনে নাও।
এ কথা বলে ঘরের মালপত্রগুলো তাদের সামনে এনে রাখতে লাগলেন। উন্নত ও মূল্যবান মালামাল দেখে লোকেরাও তা চড়া দামে কিনে নিতে শুরু করল। তিনি মালের উপযুক্ত মূল্য বুঝে পেয়ে পরিবার পরিজনসহ সেখান থেকে বিদায় নিয়ে অন্যত্র চলে গেলেন।
তিনি চলে যাওয়ার পর কিছুদিন যেতে না যেতেই উক্ত বাঁধ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেল। একদিন রাতে হঠাৎ তা ধ্বসে পড়ল। সকলে তখন আরামের ঘুমে বিভোর ছিল। হঠাৎ বন্যার পানি তীব্র গতিতে এসে ঘরবাড়িতে আছড়ে পড়ল। কী থেকে কী হয়ে গেল তা বুঝার আগেই অনেকেরই সলিল সমাধি হয়ে গেল।
প্রচণ্ড শক্তিশালি স্রোত গবাদি পশু, মালপত্রগুলোকে খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে নিয়ে গেল। সাবা গোত্রের এ ধ্বংস পরবর্তীদের জন্য শিক্ষণীয় উপদেশ হয়ে রইল।
কোরআনুল কারীমে এ ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে যে জাতি আল্লাহর না শুকরিয়া আদায় করে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। যেভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল সাবা উপত্যকা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-