দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার
প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের তীরে লাখো মানুষের মিলন মেলার মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন।
মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার শেষদিন বিজয়া দশমীতে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ।
জেলার ৭১টি ইউনিয়নের ৩১০টি পূজাম-পে আয়োজন করা হয় শারদীয় দুর্গাপূজার। এছাড়াও মিয়ানমার থেকে এসে আশ্রয় নেওয়া উখিয়ার কুতুপালং হিন্দু শরনার্থী ক্যাম্পেও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়।
আয়োজকেরা জানান, জেলার রামুসহ কয়েকটি উপজেলায় পৃথক প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান হলেও শুধু সৈকতের এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ২৫০টির অধিক প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানকে ঘিরে বেলা ২টার পর থেকে ট্রাকে করে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা নিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে আসতে শুরু করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বিসর্জনের আগ পর্যন্ত সৈকতের বালুচরে রাখা দুর্গা প্রতিমা ঘিরে ধরে চলে ভক্তদের শেষ আরাধনা ও আরতি।
শুধু তাই নয়, নাচে-গানে এক অন্য রকম আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকতে। অনুষ্ঠানকে ঘিরে সমাগম ঘটে পর্যটকসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত লাখো মানুষের। সনাতন ধর্মের পুণ্যার্থী ছাড়াও এই মিলনমেলায় ছিলেন দেশি বিদেশি হাজারো পর্যটক।
সৈকতের লাবণী পয়েন্টের বিজয়া মঞ্চ থেকে বিসর্জনের অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকাল সাড়ে ৩ টায়।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রনজিত দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, বিশেষ অতিথি ছিলেন কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমদ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল অব: ফোরকান আহমদ, জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, ট্যুরিষ্ট পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়ছারুল হক জুয়েল প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, এদেশে সব ধর্মের সহাবস্থানের কারণে একই সঙ্গে ঈদ, পূজা, প্রবারণা ও বড়দিন উদযাপিত হয়। বিজয়া দশমীর এই মহামিলন মেলা আরও একবার প্রমাণিত হলো অপূর্ব এ দৃষ্টান্ত।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রণজিত দাশ জানান, আওহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছরও এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ লাখো মানুষের সমাগম হয়েছে।
জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা জানান, এ বছর জেলায় ৩১০টি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিমা বিসর্জন নিরাপদ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে।
জানা গেছে, সমুদ্র সৈকত ছাড়াও একই সময়ে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের সাগর ও নাফনদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টোয়াক বাংলাদেশ) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান জানান, সরকারি ছুটির কারণে এবার কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, সমুদ্র সৈকতে বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বিসর্জনের মন্ত্র পাঠ করেন পুরহিত স্বপন ভট্টচার্য্য
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-