ডেস্ক রিপোর্ট • বরিশালের হিজলা উপজেলায় আজম বেপারী (২৫) নামের এক যুবককে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের পর প্রকাশ্যে মল-মূত্র খাওয়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে আজম বেপারীকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে মল-মূত্র খাওয়ানোর ওই দৃশ্যটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয় তারা।
ঘটনার পর লোকলজ্জায় এলাকা ছেড়েছেনে আজম বেপারী। হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের তালতলা জামে মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার আজম বেপারী (২৫) হরিনাথপুর বাজার সংলগ্ন এলাকার মহিউদ্দিন বেপারীর ছেলে।
হরিনাথপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য মাহবুব সিকদারের নেতৃত্বে টুমচর এলাকার রশিদ মাতুব্বর, মো. সোলায়মানসহ ৮ জন ব্যক্তি নির্যাতন ও মল-মূত্র খাওয়ানোর কাজে অংশ নেন বলে স্থানীয়রা ভিডিওটি দেখে নিশ্চিত করেছেন। আর মল-মূত্র খাওয়ানোর ওই দৃশ্য মাহবুব সিকদারের চাচাতো ভাই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শাহারিয়ার বাদল ভিডিওটি ধারণ করেছেন বলেও তারা জানিয়েছেন।
এ ছাড়া পুরো ঘটনার নেপথ্যে থেকে ইন্ধন জুগিয়েছেন নির্যাতনের শিকার আজম বেপারীর ব্যবসায়িক অংশীদার মো. জহির। স্থানীয়রা জানান, জহির ও আজম বেপারী দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে ব্যবসা করে আসছিলেন। প্রথমদিকে তারা জ্বালানি তেল কিনে বিক্রি করতেন হরিনাথপুর লঞ্চঘাটে। এরপর তারা জমির ব্যবসা শুরু করেন।
জমি ব্যবসায় তাদের প্রায় ১০ লাখ টাকা লাভ হয়। তবে আজম ব্যবসায়িক সমান অংশীদার হলেও জহির ওই টাকা একাই আত্মসাৎ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। আজম ব্যবসার লাভের অংশ চাইলে জহির তাকে টাকা দেবে না বলে হুমকি দেন। কিছুদিন আগে আজমকে মারধর করে এলাকা ছাড়া করেন জহির।
সম্প্রতি আজম এলাকায় ফিরে এসে পুনরায় ব্যবসার লাভের টাকা দাবি করেন জহিরের কাছে। জহির এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আজমকে শায়েস্তা করতে ফন্দি করেন। জহিরকে মারধর ও অপমান করতে হরিনাথপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য মাহবুব সিকদার ও ইয়নিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শাহারিয়ার বাদলকে টাকা দিয়ে ভাড়া করেন।
<
পরিকল্পনা মতো এক সপ্তাহ আগে আজমকে বাড়ি থেকে ডেকে তালতলা জামে মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় নিয়ে যান মাহবুব সিকদার। সেখানে আগে থেকেই মাহবুব সিকদারের সহযোগীরা উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে আজমের হাত-পা বেঁধে নির্যাতন শুরু করেন তারা। এরপর আজমের হাত-পা চেপে ধরে মাহবুব সিকদারের সহযোগীরা।
এ সময় মাহবুব সিকদার একটি বদনাভর্তি মল-মূত্র আজমের মুখে ঢেলে তা খাওয়ানো হয়। আর মল-মূত্র খাওয়ানোর ওই দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করেন মাহবুব সিকদারের চাচাতো ভাই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শাহারিয়ার বাদল। পরে আজমকে সেখানে ফেলে রেখে তারা চলে যান।
সোমবার মল-মূত্র ঢালার ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেন তারা। সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। প্রতিবাদের ঝড় বইতে শুরু করে। ঘটনার পর লোকলজ্জায় আজম বেপারী এলাকা ছেড়ে অনত্র চলে যান।
আজম বেপারীর স্বজনরা জানান, অভিযুক্তরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। তারা ক্ষমতাসীন দল করেন। তাদের ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। পুলিশের সঙ্গে তাদের ওঠা-বসা রয়েছে। এ কারণে আজম থানায় অভিযোগ দিতে সাহস পায়নি। এ ছাড়া ঘটনার পর তারা আজমকে হুমকি দিয়ে ছিলেন-বিষয়টি নিয়ে আইন আদালত করলে আজমকে হত্যা করে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, এ কারণে আজমকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখানে অবস্থান করা আজমের জন্য নিরাপদ ছিল না। আজম বেপারীর স্বজনরা আরো জানান, জহির টাকা দিয়ে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এখন তারা বিষয়টি ভিন্নখাতে নিতে এলাকায় রটাচ্ছে আজম ঝাঁড় ফুক করে মাহবুব সিকদারের স্ত্রী ও তার মেয়ের ক্ষতি করেছে। সে কারণে তার বিচার করেছে এলাকাবাসী।
হিজলা থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ইলিয়াস তালুকদার জানান, বিষয়টি আমরা সোমবার রাতে জেনেছি। যত বিরোধই থাকুক এভাবে কেউ কাউকে অপমানিত করতে পারে ভাবা যায় না। ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন-সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-