সেই হাফেজ শরবত বিক্রেতা থেকে প্রেসিডেন্ট

তুরস্কের রাজনীতিতে এক শক্তিমান নেতা রিসেপ তায়িফ এরদোয়ান। তিনি দেশটির জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছেন। 

আধুনিক তুরস্কের জনক হিসেবে পরিচিত মুস্তাফা কামাল আতাতুর্কের পর নজিরবিহীন উন্নয়ন ও পরিবর্তনের প্রবর্তকও এরদোয়ান।

তুরস্কের নতুন সংবিধান অনুযায়ী একচ্ছত্র আধিপত্য ভোগ করবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। আর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) রক্ষণশীল ইসলামী মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে দেশটি পরিচালনা করেন।

১৯৬০ সাল থেকে তুরস্কের রাজনীতিতে ৪ বার সামরিক হস্তক্ষেপ হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান একটি সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দিয়েছেন। আর তাতে এরদোয়ানের ক্ষমতা আরো পাকাপোক্ত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সমর্থকরা মনে করেন, তিনি তুরস্কের ডুবন্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলেছেন। আবার সমালোচকদের দৃষ্টি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান একজন স্বৈরশাসক। যিনি ভিন্নমত পোষণকারীদের কঠোর হাতে দমন করেন।

শরবত বিক্রেতা এরদোয়ান ১৯৫৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ইস্তাম্বুলের কাসিমপাসায় জন্ম গ্রহণ করেন। তারা বাবা তুরস্ক কোস্টগার্ডের একজন সদস্য হিসেবে চাকরি করতেন।

১৩ বছর বয়সে এরদোয়ান বাবার সঙ্গে ইস্তাম্বুলে আসেন। এরদোয়ানের বাবা সন্তানদের লেখা-পড়া শেখানোর উদ্দেশ্যেই ইস্তাম্বুল আসেন। তরুণ বয়সে এরদোয়ান সংসারের খরচ মেটাতে বাড়তি আয়ের জন্য লেবুর শরবত ও বিভিন্ন খাবার বিক্রি করতেন।

বাবাকে সংসার পরিচালনায় সহযোগিতার পাশাপাশি এরদোয়ান পড়ালেখাও ছিলেন সমান মনোযোগী। শৈশবেই তিনি ৩০ পারা কোরআন মুখস্ত করে নিয়েছেন। ইস্তাম্বুলের মারমারা ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়ালেখা সম্পন্ন করেন।

মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার আগে এরদোয়ান ইস্তাম্বুলের একটি ইসলামিক স্কুলে পড়ালেখা করেছেন। ছাত্র জীবনে এরদোয়ান পেশাদার ফুটবলও খেলেছেন।

১৯৮৪ সাল থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও এরদোয়ান ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি)। প্রতিষ্ঠার অল্প দিনের মধ্যেই দলটি তুরস্কে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে ১ নম্বর অস্থানে চলে আসে।

তুরস্কের ইতিহাসে একদলীয় দল হিসেবে এবং সংসদীয় নির্বাচনে এরদোয়ান ৪ বার (২০০২, ২০০৭, ২০১১ এবং ২০১৪) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট তিনি তুরস্কের ১২তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেয়ার আগে তিনি একে পার্টির সভাপতি ও প্রধান দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

উল্লেখ্য, এর আগে তিনি ১৪ মার্চ ২০০৩ থেকে ২৭ আগস্ট ২০০১৪ পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ বছর দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় প্রেসিডেন্ট ছিল একটি আনুষ্ঠানিক পদ। যার কাছে কোনো ক্ষমতা ছিল না।

শরবত বিক্রেতা থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা অধিকারী এরদোয়ান বর্তমানে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠা করে দেশটির অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের ভাবমূর্তি তুলে ধরেছেন। জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে খ্যাতি লাভ করে চলেছেন তিনি।

আরও খবর