মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়া পাড়ায় চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার হত্যাকান্ডের খুনীদের সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। কক্সবাজার জেলা পুলিশ, উখিয়া থানা পুলিশের দীর্ঘ ১০ দিন যাবৎ ঘটনার মূল হত্যাকারীকে চিহ্নিত করতে প্রাণান্তকর চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই।
এডিশনাল এসপি (এডমিন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, এডিশনাল এসপি (উখিয়া), রামু থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল মনসুর, ওসি (তদন্ত) ও আইও মো. নুরুল ইসলাম মজুমদার, রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী, রত্না পালং ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ডা. মোক্তার আহমদ, সিবিআই সহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা সবার কাছে দৃশ্যমান।
কিন্তু গত ২৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে পৈশাচিক এই হত্যযজ্ঞ সংগঠিত হলেও দীর্ঘ ১০ দিনে হত্যাকান্ডের কোন ক্লো বের বের করতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কোন কুল-কিনারাহীণ রয়েছে মামলার তদন্ত কার্যক্রম। সবমিলিয়ে গত ১০ দিনের তদন্তের ফলাফল মূলত শূন্য। এমনটি জানিয়েছেন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশ্বস্ত একটি সুত্র।
এলাকা থেকে সন্দেহজনক মানুষগুলোকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুধু আনা হচ্ছে, আর জিজ্ঞাসাবাদে কোন ক্লু বের করতে নাপেরে তাদেরকে আবার ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহজনকভাবে আগে ১১/১২ জনকে আনা হয়েছিল, তাদেরকে গত শুক্রবার ৪ অক্টোবর রত্না পালং ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ডা. মোক্তার আহমদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রবাসী স্বজনহারা রোকেন বড়ুয়ার সেজ ভাই শিপু বড়ুয়া ও তার স্ত্রী রিকু বড়ুয়াকে আবারো শনিবার ৫ অক্টোবর পিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে। এভাবে আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে পুরো তদন্ত প্রক্রিয়া। খুনীদের পায়ের চাপ, সিআইডি’র ফরেনসিক রিপোর্ট, ক্রাইম সিন টিমের রিপোর্ট, স্থানীয় জনসাধারণের মতামত, প্রতিবেশীদের মতামত সবকিছুই পর্যালোচনা করা হয়ে গেছে। কিন্তু খুনীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। বার বার ব্যর্থ হচ্ছে সব ধরনের তদন্ত, সব ধরনের ল্যাব টেস্ট রিপোর্ট। মোবাইল ফোন অপারেটরদের জিপিএস ট্রেকিং হিস্ট্রি কাজে লাগিয়ে ভিকটিমদের চতুর্পাশের মোবাইল ফোন গুলোর কালিসিস্ট যাচাই করাও হয়ে গেছে।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা লোকদের মোবাইল ফোনে পাওয়া কল লিস্ট যাচাই করাও হয়েছে। সেখানেও কোন কাজ হয়নি। তবে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এতে হতাশ নয়। তাদের মনোবল এখনো খুব শক্ত।
মামলার বিষয়ে উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) ও মামলার আইও মো. নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন-এখনো মামলাটির অগ্রগতির বিষয় গণমাধ্যমকে জানানোর মতো তথ্য উপাত্ত আমাদের হাতে আসেনি। তবে অত্যন্ত গুরুত্ব ও দ্রুততার সাথে মামলার মোটিভ বের করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। মামলাটি কি পিবিআই-কে হস্তান্তর করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে আইও মো. নুরুল ইসলাম মজুমদার জানান, বিষয়টি শুনেছি পিবিআই-কে মামলার তদন্তভার দেওয়া হচ্ছে। তবে এবিষয়ে অফিসিয়াল কোন আদেশ বা চিঠি আমি পায়নি।
এই চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী জেলা পুলিশের অবিরাম তৎপরতার প্রশংসা করে বলেন-একটু দীর্ঘ সময় লাগলেও ‘জজ মিয়া নাটক’ না সাজিয়ে প্রকৃত খুনীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা উচিত। তিনি বলেন, আমি ও আামার পরিষদ মামলার খুনীদের সনাক্ত করতে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সহযোগিতা করছি।
চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী আরো বলেন, ইনশাল্লাহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্তের একটা সুখবর আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আশাকরি আমাদের দিতে পারবেন।
এদিকে, যে এলাকায় এই নারকীয় হত্যাকান্ড ঘটেছে, সেটি হলো-রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড। সেই ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ডা. মোক্তার আহমদ তাঁর ফেসবুক আইডি-তে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন-“হে আল্লাহ পূর্বরত্না ৪ খুনের গায়েবি খুনীদেরকে স্বপ্নে দর্শন দাও।” ডা. মোক্তার আহমদ মেম্বারের এই স্ট্যাটাস প্রমান করে খুনের রহস্য উদঘাটন করতে তিনি কত উদগ্রীব।
ডা. মোক্তার আহামদ মেম্বার বলেন, কোন করণে প্রকৃত খুনীদের আইনের আওতায় আনা না গেলে দেশের অপরাধীরা, খুনীরা আরো উৎসাহিত হবে। তখন খুনীরা বলবে, একত্রে ফোর মার্ডার করেও রাষ্ট্র আমাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পারেনি। এরকম বলে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে উল্লাস করবে। আবার প্রকৃত খুনীরা আইনের আওতায় আসলে, তখন অপরাধীরা বলবে-সবকিছু অতি গোপনীয়তার সাথে সুকৌশলে আন্ডারগ্রাউন্ডে করেও আইনের চোখকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে করে শুধু উখিয়া নয়, উন্নত ইন্টারনেট যোগাযোগের কারণে পুরো দেশে এর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ডা. মোক্তার আহমদের বক্তব্যে খুনের বিষয়টি উদঘাটনে তিনি অনেকটা মরিয়া হয়ে উঠেছেন সে ঈঙ্গিতই পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়া পাড়ায় প্রবাসী রোকন বড়ুয়ার বাড়ীতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাত্রে রোকন বড়ুয়ার মা সুখী বালা বড়ুয়া (৬৫), সহধর্মিণী মিলা বড়ুয়া (২৫), একমাত্র পুত্র রবিন বড়ুয়া (৫) ও ভাইজি সনি বড়ুয়া (৬) কে কে বা কারা জবাই করে হত্যা করে। এরমধ্যে নিহত রবিন বড়ুয়া রুমখা সয়েরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির ছাত্র এবং সনি বড়ুয়া একই স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিলো।
এবিষয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর ৪৭/২০১৯, যার জিআর মামলা নম্বর : ৪৭৮/২০১৯ (উখিয়া) ধারা : ফৌজদারি দন্ড বিধি : ৩০২ ও ৩৪। মামলায় নিহত মিলা বড়ুয়ার পিতা ও রোকন বড়ুয়ার শ্বশুর শশাংক বড়ুয়া বাদী হয়েছেন। মামলার এজাহারে সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামী করা হয়নি, আসামী অজ্ঞাত হিসাবে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। মামলাটির পরিবর্তিত তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) হচ্ছেন-উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-