শ.ম গফুর, কক্সবাজার জার্নাল
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন জমে উঠেছে।
চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পাশাপাশি পুরুষ ও মহিলা মেম্বার প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই। তফসিল ঘোষণা এবং প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রচার-প্রচারণা, হাউস ক্যাম্পেইন, ভোটারের সাথে দেখা স্বাক্ষাত, ব্যক্তিগত যোগাযোগ,কৌশল বিনিময়,মতবিনিময়,উঠান বৈঠক, চায়ের দোকানে আলাপ আলোচনায় নির্বাচনের আমেজ লক্ষ্য করা গেছে।ঘুমধুম ইউপির সংরক্ষিত ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে ৪ জন মহিলা মেম্বার পদে প্রার্থী হয়েছে।
তৎমধ্যে নারী উন্নয়ন ও শিক্ষাকর্মী শামিমা সোলতানা রেহেনা (মাইক),বর্তমান মেম্বার ফাতেমা বেগম (হেলিকপ্টার), গতবারের প্রতিদন্ধী আনোয়ারা বেগম (সূর্যমুখী) ও ঘুমধুম ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী খুরশিদা বেগম তালগাছ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। স্ব-স্ব প্রার্থী নিজেদের কর্মী সমর্থক নিয়ে পাড়া-মহল্লায় দিনরাত প্রচার -প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।প্রতিদন্ধী ৪ প্রার্থীর মধ্যে শামিমা সোলতানা রেহেনা শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে।তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে আলিম পাশ করেন।
অপর ৩ প্রার্থী আনোয়ারা বেগম,ফাতেমা বেগম ও খুরশিদা বেগম স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন। নতুন হওয়াসহ সবশ্রেণির ভোটারদের মাঝে শামিমা সোলতানা রেহেনা গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের মাঝে মাইক প্রতীকের নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করেছেন।মাইকিং,হাউস ক্যাম্পেইন,উঠান বৈঠক,কর্মী সমর্থক নিয়ে নির্ঘুম প্রচারণা চালিয়ে জনসমর্থনেও এগিয়ে রয়েছেন নারী উন্নয়ন ও শিক্ষাকর্মী, নির্বাচনের নতুন মুখ,নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার অগ্রজ নেতৃত্ব, বয়সে সর্ব কনিস্ট মাদরাসা থেকে আলিম পাশ করা শামিমা সোলতানা রেহেনা।
জয়ের ব্যাপারে শামিমা সোলতানা শতভাগ আশাবাদী বলে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। কারণ হিসেবে উল্ল্যেখ করেন,শামিমা সোলতানা রেহেনা এক সময় বেসরকারী ভাবে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন।এসুবাদে তাঁর বিপুল ছাত্র-ছাত্রী,অভিভাবক ভোটার হিসেবে তাঁর পক্ষে কাজ করছেন।বিগত ২০০৯ সাল থেকে পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত (প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা)পাড়া কেন্দ্রের একজন কর্মী থেকে বর্তমানে ১১টি পাড়া কেন্দ্রের সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি পাড়া কেন্দ্রে ৬০ জন শিশু শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা বিস্তারে অবদান রেখে চলছেন শামিমা সোলতানা রেহেনা। একটি পাড়া কেন্দ্রে একজন নারী শিক্ষক ও ১২০ জন অভিভাবক-অভিভাবিকা ভোটার রেহেনার পক্ষে ভোটের প্রচারণায় রয়েছেন।সে অনুযায়ী প্রতি কেন্দ্রে ১২০ জন ভোটার হিসেবে ১১ পাড়া কেন্দ্রে ১৩২০ জন ভোটার ও ১১ জন শিক্ষক তাদের মাঠে সংগঠক(এফও) শামিমা সোলতানা রেহেনার মাইক প্রতীক বিজয়ী করতে পাড়া-মহল্লায় নিরলস প্রচার-প্রচারণা, হাউস ক্যাম্পেইন ও উঠান বৈঠক করে যাচ্ছেন।
শামিমা সুলতানার নানার বাড়ি ২ ওয়ার্ডে হওয়ায় সেখানে বিশাল একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে তাঁর। ১ নং ওয়ার্ডে রয়েছে বাপ-দাদা ও শ্বাশুড় বাড়ির একটি অংশ ভোটার।রয়েছেন শিক্ষিকা এবং পাড়াকর্মী হিসেবে পরিচিতি। সব মিলিয়ে তিন ওয়ার্ডে ২৯২৯ ভোটারের মধ্যে প্রায় সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে শামিমা সোলতানা রেহেনা মাইক প্রতীক নিয়ে জেতার সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা।
সরেজমিনে ঘুরে ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রেহেনার মাইক প্রতীক জেতার সম্ভাবনা ঠেকাতে প্রার্থী হয়েছেন আপন চাচী ঘুমধুম ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামীলীগ সভানেত্রী খুরশিদা বেগম। একই পরিবারের দুজন নির্বাচন করলেও খুরশিদা বেগম মুল প্রতিদন্ধীতায় আসার সম্ভাবনা নেই।কারণ খুরশিদার পরিবার নিয়ে নারী সংক্রান্ত বিতর্কিত বিষয় সচেতন ধর্মভীরু ভোটারদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।বর্তমান মহিলা মেম্বার ফাতেমা গতবার নির্বাচিত হওয়ার পর অনেক ভোটার একবারও দেখা পায়নি বিগত ৫ বছরে।ভিজিএফ,ভিজিডিতে তালিকাভুক্ত করতে অর্থ আদায়ের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
অপর প্রার্থী আনোয়ারা বেগম বয়স্ক মহিলা হিসেবে গতবারে সামান্য ভোটে পরাজিত হন। তাঁর ব্যক্তিগত কোন দোষত্রুটি না থাকলেও বৃদ্ধা মহিলা হিসেবে অনেক ভোটার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।তারপরও তাঁর অবস্থান ভাল।সব মিলিয়ে শামিমা সোলতানা রেহেনার মাইক প্রতীক আর আনোয়ারা বেগমের সূর্যমুখী প্রতীকের মধ্যে প্রতিদন্ধীতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
৩ নং ওয়ার্ড বাইশফাঁড়ীর সচেতন ভোটার নুরুল হক, মৌঃরফিক,কেলাপ্রু চাকমা জানিয়েছেন এবারের মহিলা মেম্বার পদে শিক্ষিত মার্জিত প্রার্থী হিসেবে শামিমা সোলতানা রেহেনার সমর্থন বেশী।সে নির্বাচিত হবে বলে আভাস পাচ্ছি।২ নং ওয়ার্ডের ভোটার যুবনেতা আকতার উদ্দিন,নুর মোহাম্মদ শিকদার,মাহমদুল হাসান,নারীকর্মী হামিদা বেগম,নুরতন বাহার বলেছেন,শিক্ষিত প্রার্থী হিসেবে রেহেনার নির্বাচিত হওয়ার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে,তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
১ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার জহির আহমদ,মৌলবী আবদুল গফুর,সেলিম সওদাগর বলেছেন,এবারের মহিলা মেম্বার প্রার্থী শামিমা সোলতানা রেহেনা যোগ্য প্রার্থী হিসেবে আমরা ভোট দেবো।তাঁর জেতার সম্ভাবনা দেখছি।
এক প্রতিক্রিয়ায় শামিমা সোলতানা রেহেনা বলেছেন, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ চাই।শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির দাবীও করেন সে।
তিনি প্রতিদন্ধী প্রার্থী খুরশিদা বেগমকে ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী হওয়ায় ভোটের মাঠে নিজেকে আগাম মেম্বার নির্বাচিত হচ্ছে দাবী করে, প্রশাসন খুরশিদার পক্ষে ভোট নিয়ে দেবে বলে গুজব ছড়াচ্ছে।এ নিয়ে সাধারণ ভোটার ও প্রতিদন্ধী প্রার্থী শামিমা সোলতানা রেহেনা, আনোয়ারা বেগম ও ফাতেমা বেগম আশংকা প্রকাশ করছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে।তাঁরা অভিযোগ করে জানান,খুরশিদা বেগম সরকার দলের প্রভাব খাটিয়ে ফলাফল নিজের অনুকুলে নিয়ে নেবে বলেও বলে বেড়াচ্ছে। প্রার্থীরা নির্বাচনে সকল ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ তৈরী করার জন্য প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) ইমন কান্তি চৌধুরী কক্সবাজার জার্নালকে জানান,নির্বাচনে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।তাতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর ছালেহ বলেন নির্বাচনী মাঠে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহ অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে,যাতে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে ভোটাররা।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচি এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জার্নালকে বলেছেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।এ বিষয়ে প্রশাসন সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় ভোটাধিকারের সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-