হাশরের ময়দানের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ হবে যে, সূর্য মানুষের মাথার মাত্র অর্ধ হাত উপরে আসবে। আর পায়ের নিচের মাটি হবে জ্বলন্ত তামার ন্যায়। তাই গরমের তীব্রতায় মানুষের মাথার মগজ টগবগ করবে। যেমন চুলার ওপর ভাতের পানি টগবগ করে।
এই কঠিন এবং ভয়াবহ অবস্থায় মহান আল্লাহ পরম যতনে তাঁর প্রিয় সাত প্রকারের বান্দাকে নিজের আরশের ছায়ায় স্হান দেবেন।
চলুন জেনে নেয়া যাক, কারা সেই মহাসৌভাগ্যবান মানুষ-
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, কিয়ামত দিবসে সাত (ধরনের) ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত ভিন্ন কোনো ছায়া থাকবে না। তারা হলো— ১. ন্যয়পরায়ণ শাসক। ২. এমন যুবক, যে তার যৌবন ব্যয় করেছে আল্লাহর ইবাদতে। ৩. ওই ব্যক্তি যার হৃদয়টা সর্বদা লেগে থাকে মসজিদের সঙ্গে। ৪. এমন দু’ব্যক্তি, যারা স্রেফ আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবেসেছে, কিংবা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ৫. এমন ব্যক্তি, যাকে কোনো সুন্দরী উচ্চবংশীয়া রমণী আহ্বান করল ব্যভিচারের প্রতি, প্রত্যাখ্যান করে সে বলল, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’। ৬. এমন ব্যক্তি, যে এতটা গোপনীয়তার সঙ্গে দান-সাদাকা করে যে, তার বাম হাত ডান হাতের দান সম্পর্কে টের পায় না। ৭. এমন ব্যক্তি, নির্জনে যে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দু’চোখ বেয়ে বয়ে যায় অশ্রুধারা।
(১) ন্যায়পরায়ণ শাসক : এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ওই মুসলিম শাসক, যে শরয়ি পদ্ধতিতে নির্বাচিত এবং শরিয়তের বিধান অনুযায়ী জনগণকে পরিচালিত করেন। মানবরচিত বা প্রবৃত্তি-উদ্ভূত কোনো আইন নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া ইনসাফপূর্ণ আইন বাস্তবায়ন করেন।
(২) দীনদার যুবক : বৃদ্ধ বয়সে তো প্রায় প্রতিটি মানুষই ইসলামের দিকে ধাবিত হয়, কিন্তু তখন হয়তো দ্বীনের কঠিন আমল, যেমন দ্বীনবিজয়ের কাজ, জিহাদ ও হিজরত করা সম্ভব হয় না, তাই এখানে বিশেষভাবে ওই যুবকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা তাদের যৌবনকালটাকে, তারুণ্যের উদ্যমতাকে কাজে লাগিয়েছে দ্বীনের জন্য।
(৩) মসজিদে পড়ে থাকে হৃদয়টা যার : আজকের সমাজে অধিকাংশ মানুষ তো মসজিদের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই রাখে না। সপ্তাহান্তে একদিন অর্থাৎ পবিত্র জুমার দিন মসজিদে গেলেও কখন খুতবা শেষ হবে, কখন বাসায় ফিরবে এই চিন্তাই শুধু মাথায় ঘুরপাক খায়। অথচ যারা মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকবে, একবার নামাজ শেষে কখন আজান হবে আর মসজিদে যাবে সেই চেতনা মনে জাগ্রত রাখবে, মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, মসজিদের প্রয়োজনগুলো পূরণের চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাদেরকে হাশরের কঠিন দিনে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন।
(৪) আল্লাহর জন্য সম্পর্ক স্থাপনকারী : আল্লাহর ভালোবাসার ভিত্তিতেই যারা একে অপরকে ভালোবেসেছে কিংবা ঘৃণা করেছে তারই জন্য। আল্লাহর ভালোবাসাই তাদের উভয়ের মাঝে গড়ে দিয়েছে সখ্যতা ও বন্ধুত্ব, পার্থিব কোনো প্রতিবন্ধকতা এ ব্যাপারে তাদের মাঝে আড়াল তৈরি করতে পারেনি। মৃত্যু পর্যন্ত তাদের উভয়ের মাঝে বন্ধনের একমাত্র সূত্র হলো আল্লাহর ভালোবাসা।
(৫) ব্যভিচার থেকে যে দূরে থাকে : আজকের সমাজ একদিকে বিয়েকে কঠিন করে ফেলেছে, অন্যদিকে যিনা-ব্যভিচারকে সহজ করে দিয়েছে। আইটেম গান, নাটক, মুভি, ওয়েব সিরিজ, পর্ন সাইটসহ আরো অসংখ্য উপকরণ দিয়ে যুবসমাজকে নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে যারা সমাজের এই সমস্ত জাহিলিয়াত থেকে নিজেদেরকে নিষ্কলুষ রাখবে, ঈমান ও তাকওয়ার পথ অবলম্বন করবে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তাঁর আরশের ছায়ার নিচে স্থান দেবেন।
(৬) গোপনে দানকারী : আজকাল মানুষ তো এক টাকা দান করলে ১০ টাকার প্রচার করে। ত্রাণের চেয়ে বেশি সময় যায় ফটোসেশনেই। মানুষ চায় লোকে তাকে দানশীল বলুক, তার নাম মাইকে ঘোষণা হোক। কিন্তু আল্লাহর রাসূল (সা.) বলছেন, যারা এমনভাবে দান করবে যে, ডান হাতে দান করলে বাঁ হাতও টের পায় না, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন।
(৭) নির্জনে যে অশ্রু ঝরায় : আজকে আমরা যাই একটু-আধটু ইবাদত করি, সেটাও অনেক ক্ষেত্রেই রিয়া বা লোকদেখানো আমলে পরিণত হয়। কতকিছুর জন্যই আমরা অশ্রু ঝরাই। প্রিয়জনের বিয়োগব্যথায়, জীবনের চরম কোনো মুহূর্তে। কিন্তু একটু নির্জনে, রাতের অন্ধকারে, যখন কেউ দেখার নেই আল্লাহ ছাড়া, তখন কি আমরা চোখের পানি ঝরাতে পারি? যারা আল্লাহর ভয়ে, নিজ পাপসমূহ স্মরণ করে আল্লাহর দরবারে অঝোরে কাঁদে, আল্লাহ তাদেরকে তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার আরশের ছায়ায় সব মুসলিম উম্মাহকে স্থান পাবার তাওফিক দান করুন। আমিন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-