আজিম নিহাদ :
জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত দর অনুযায়ী পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি না করায় এক প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা শেষে জেলা মো. কামাল হোসেন কক্সবাজারে জন্য পেঁয়াজের নতুন ‘দর’ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এখন থেকে নির্ধারিত নতুন দর অনুযায়ী প্রতি কেজি পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি করতে হবে ৫০ টাকায়। পরর্বতী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত মানতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানী হয়েছে এবং হচ্ছে। এতদিন মিয়ানমারের পেঁয়াজগুলো চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ থেকে সংগ্রহ করতে হলেও এখন কক্সবাজারে সরাসরি টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে পেঁয়াজ সরবরাহ হবে। টেকনাফ থেকে সংগ্রহ করতে গেলে কক্সবাজারের ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ কিনতে পড়বে কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪২ টাকা। সেই হিসেবে কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের আমদানীকৃত পেঁয়াজ খুচরা বাজারে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারবে। তাই গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে কক্সবাজারে মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি হবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের মানতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব টেকনাফের স্থলবন্দর এবং এখানকার বাজার পরিদর্শন করেছেন। তাঁর (যুগ্ম সচিব) মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবো সারাদেশে পেঁয়াজের দাম যেন ৫০ টাকা নির্ধারণ করে। কারণ মিয়ানমার থেকে প্রচুর পেঁয়াজ আমদানী হচ্ছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে আজ থেকে সরাসরি কক্সবাজার শহরে পেঁয়াজ সরবরাহ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তিনটি ট্রাকে করে শহরে ১৫ টন পেঁয়াজ পৌঁছাবে। শুক্রবার সকালে বিভিন্ন দোকানে সেগুলো সাপ্লাই হবে। এই পেঁয়াজগুলো সাপ্লাই হলে জেলা প্রশাসনের নতুন নির্ধারিত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের অসুবিধা হবে না।
তিনি আরও বলেন, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে ১২ থেকে ১৪ টি কন্টেনার খালাস হয়েছে। সেগুলো শিগগিরই খোলা বাজারে সরবরাহ শুরু হবে। দেখা যাবে যে, এই পেঁয়াজগুলো মিয়ানমারের পেঁয়াজের চেয়ে গুণগতভাবে ভাল এবং দামও কম। সেই হিসেবে আমরা আশা করছি দুয়েকদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ক্রেতাদের নাগালে চলে আসবে।
এদিকে কক্সবাজারে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি করার জন্য গত মঙ্গলবার জেলা বাজার মনিটরিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত না মানার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে পেঁয়াজ নিয়ে দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে মাঠে নামেন খোদ জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তৌফিকুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার, এনডিসি জয়নাল আবেদিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাখন চন্দ্র সূত্রধর ও বিধান কান্তি হালদার, জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. শাহজাহান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এএসএম মাসুদ-উদ-দৌলা।
অভিযানের সময় শহরের বড়বাজারে ঈসমাইল ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৮৫ টাকা করে বিক্রির হাতেনাতে প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করে।
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত হলেও শহরের বাজারগুলোতে ৭০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি। বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বাজার পর্যবেক্ষণের সময় তড়িগড়ি করে ব্যবসায়ীরা ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম ৭০ টাকায় নামিয়ে আনে।
অভিযান শেষে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, সংকট কাটিয়ে না উঠা পর্যন্ত ৭০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সেই সিদ্ধান্ত মানছে না। এখন মিয়ানমারের আমদানীকৃত পেঁয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি করার জন্য নতুন করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশ অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-