ডেস্ক রিপোর্ট• জেলা-উপজেলায় গড়ে ওঠা আলিশান বাড়িগুলো নিয়ে বিস্ময় তৈরি হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তদন্ত করে দেখেছে, প্রভাবশালীদের অনেক পিয়ন-দারোয়ানও বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক। অনেক জেলা-উপজেলায় এমন বাড়ি তৈরি করা হয়েছে, যা দেখতে ভিড় জমে যায়। কোনো কোনো এমপি নিজের নির্বাচনী এলাকায় তৈরি করেছেন ‘রাজপ্রাসাদ’।
শুধু এমপি নয়, এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে কিছু উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং কাউন্সিলররাও নিজেদের রাজা-মহারাজা ভাবতে শুরু করেছেন। এডিবির অর্থ নিজের বাড়ি তৈরিতে ব্যয় করেছেন অনেক জনপ্রতিনিধি। এসব বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলাতেও শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ছাড়াও র্যাবের গোয়েন্দা ইউনিট আলাদাভাবে কাজ করছে। নজর রাখা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপরও। অনেক সচিব থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্সে রয়েছেন। শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থাকে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে বিভিন্ন খাতের প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। দলীয় কর্মীদের ওপর নির্যাতনকারী, টেন্ডার-বাণিজ্যের গডফাদার, মাফিয়া- সবার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি থাকবে। দলের পদ-পদবি বিক্রি, উপ-কমিটি, শাখা-কমিটি গঠনে নেতাদের ভাগবণ্টন সবকিছু বন্ধ করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, আপসহীন ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে তার এ ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিগত যে কোনো সময়ের তুলনায় ইমেজ বেড়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এ কারণে এ অবস্থানে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সততা এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। দুর্নীতি করছেন শিক্ষিত মানুষরা। দুর্নীতিবাজদের শ্রেণি-পেশা, প্রভাব-প্রতিপত্তি আমলে না নিয়ে তাদের অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করতে হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দল-মত পাত্তা না দিয়ে অপরাধীকে চিহ্নিত করতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে গতিশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। শুধু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, নিজেদের তদন্ত করে দুর্নীতি খুঁজে বের করতে হবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের অঙ্গীকার ছিল। চলমান এ অভিযানে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের প্রমাণ মেলে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘দুর্নীতি আমাদের টপ টু বটম বিরাজমান। দুর্নীতি ঠেকাতে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। হঠাৎ করে ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলো। এটা কে আনল, কবে শুরু হলো, এত দিন কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না সেসব বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ক্যাসিনো নিয়ে সবাইকে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, সরকারি কেনাকাটা, নির্মাণ মানেই দুর্নীতি। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দুর্নীতির ঘটনা সামনে এসেছে। কিন্তু কোনো তদন্ত হয়নি, শাস্তির ব্যবস্থা হয়নি। অন্যের বাড়ি দখল, জমি দখল, সরকারি জায়গা দখল চলছে দেদারসে। এগুলো করছেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীরা। সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে দুর্নীতিগ্রস্ত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। মৌসুমি অভিযান পরিচালনা না করে সারা বছর অভিযান চলমান রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-