উখিয়ার ফোর মার্ডার : কালো প্যান্ট পরা যুবককে খুঁজছে পুলিশ

ফারুক আহমদ, উখিয়া :

উখিয়ার পূর্ব রত্না গ্রামে একই পরিবারের নারী-শিশুসহ ৪ জন হত্যাকান্ডের দিন যতই বাড়ছে হত্যার মোটিভ ও
ক্লু উদঘাটন নিয়ে নতুন নতুন মোড় নিচ্ছে। গত দু’দিন ধরে কোট বাজারে স্টেশন হতে নিহত মিলা বড়ুয়ার শপিং ও ফার্মেসিতে ওষুধ ক্রয় এবং তৎপরবর্তীতে বাড়ি ফেরার দৃশ্য সম্বলিত সিসি ক্যামেরার অনেক গুলো ফুটেজ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে পিবিআই টিম ও পুলিশের সদস্যরা।

সংগ্রহকৃত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে পায় কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়া স্ত্রী ও নৃশংস হত্যার শিকার মিলা বড়ুয়াকে কালো প্যান্ট সাদা শার্ট পরিহিত এক যুবক বারবার অনুসরণ করে মোবাইলে কি যেন কাউকে বলতে ছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এখন ওই যুবককে হন্য হয়ে খুঁজছেন।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল মনসুর জানান পিবিআই ক্রাইম সিন টিমের সদস্যরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ইতিমধ্যে সংগ্রহ করে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এছাড়াও আমাদের পুলিশের পক্ষেও একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।

এদিকে ঘটনার ৭ দিনেও রহস্যের জট না খুলেলেও চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় আপেল নিয়ে নতুন করে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার রাত অর্থাৎ বুধবার রাত ৭ টা ৩৪ মিনিট সময়ে নিহত মিলা চৌধুরী মার্কেটে সুকুমার বড়ুয়ার ফার্মেসীতে ঔষধ ক্রয় করার দৃশ্য সিসি ক্যামেরার ফুটেছে দেখা গেছে। অপর এক সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় চৌধুরী টাওয়ার মার্কেটের চিত্তবাবুর দোকানে কেনাকাটা করে। সাথে থাকা মিলার বড় বোন বাজার থেকে কাঁচা মাছ ক্রয় করে তার হাতে এনে দেয়। সর্বশেষ আল মদিনা হোটলের পার্শ্বে থাকা ঘড়ি মেকানিক মামা শ্বশুর গাড়ি সংগ্রহ করে দিলে মিলা বাড়িতে ফেরেন।

মা, স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে হারা কুয়েত ফেরত রোকেন বড়ুয়া বলেন, গত রোববার ঘর পরিস্কার করার সময় আমার রুমে যেখানে আমার স্ত্রী মিলা বড়ুয়া খুন হয়েছে সেখানে চেয়ারের উপরে ১ কেজি আপেল পাওয়া যায়। অথচ ঘটনার দিন কোটবাজার থেকে মিলা আধা কেজি আপেল ও ছেলের জন্য ঔষধ কিনেছে। সেগুলো এখনো রান্নাঘরে অক্ষত আছে। এখন সন্দেহ হচ্ছে এই ১ কেজি আপেল নিয়ে কে বা কারা আমার বাড়িতে এসেছিল তা খোঁজে বের করতে পারলে ঘটনার আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে তার ধারণা। তিনি বলেন, ঘাতক অবশ্যই পরিচিত এবং কাছের কেউ। বেড়াতে আসার ভান করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে জানায়।

রোকেন, কান্না করতে করতে বলেন, তার পরিবারের সাথে গ্রামবাসির কারো সাথে কোন ধরণের বিরোধ ছিলনা। তবে ঘটনার দুই-চার দিন আগে থেকে বসতভিটার গাছ কাটা নিয়ে সামান্য বিতর্ক হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী অফিসার ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, পুলিশসহ একাধিক টীম সর্বোচ্চ তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যে কোন সময় ঘাতক কে আমরা শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভাই শিবু বড়ুয়া তার স্ত্রী, রিকু বড়ুয়া ও ছেলে সহ স্ত্রীর ভাই ভাগ্যধন বড়ুয়া পিবিআই ক্রাইম সিন টিমের সদস্যদের হেফাজতে রয়েছে ৩ দিন ধরে। চকোরিয়ার রামপুরা এলাকা হতে ভাগ্যধন কে আটক করা হয় জিজ্ঞেসাবাদের জন্য।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: ইকবাল হোসেন বলেন, বিষয়টি খুবই জটিল। এখনো বলার মতো উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। তবে হত্যাকান্ডের মোটিভ ও ক্লু উদঘাটনে সমস্ত তথ্যাদি সের্টিং করা হচ্ছে। অচিরেই চুড়ান্ত ফলাফল বেরিয়ে আনতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি।

উল্লেখ্য, গত বুধবার গভীর রাতে উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্বরত্না গ্রামের কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বাড়িতে ঢুকে তার মা-স্ত্রী, ছেলেসহ চারজনকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন রোকেন বড়ুয়ার মা সখি বড়ুয়া (৫০), স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৫), ছেলে রবিন বড়ুয়া (৫) ও রোকেন বড়ুয়ার বড় ভাই শিপু বড়ুয়ার মেয়ে সনি বড়ুয়া (৬)।

আরও খবর