নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় ভোটাররা, ইউএনও’র প্রতিশ্রুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

আগামী ১৪ অক্টোবর বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তিন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৪ আগস্ট প্রতীক পাওয়ার পর থেকে শুরু হয় প্রচার-প্রচারণা। তিন ইউনিয়নেই চেয়ারম্যান পদে সরকারি দল আওয়ামী লীগের মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের সাথে লড়ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। একই সাথে মেম্বার ও মহিলা মেম্বার পদেও ঝানু ঝানু প্রার্থীরা লড়ছেন। সবমিলে ইতোমধ্যে জমে উঠেছে এই তিন ইউনিয়নের নির্বাচন। সকল প্রার্থী চষে বেড়াচ্ছে মাঠে, ধর্ণা দিচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। চাইছেন ভোট ভিক্ষা। দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি।

এদিকে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও আচরণবিধি সম্পর্কে অবগত করতে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে গত ২৬ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মহিলা মেম্বার প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন ইউএনও।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীদের একটি অবাধ, সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার সহযোগিতা কামনা করেন। উপজেলা নির্বাচন কমিশন ও উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন-নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: আনোয়ার হোসেন, উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু জাফর ছালেহ ও ১১ বিজিবি’র প্রতিনিধি।

ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নানা কারণে চেয়ারম্যান পদে তিন ইউনিয়নের মধ্যে বেশ আলোচিত নাইক্ষ্যংছড়ি সদর। উপজেলার কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় এই ইউনিয়ন ঘিরেই পুরো উপজেলাজুড়েই বেশ আলোচনা হচ্ছে। উপজেলার সমস্ত মানুষের বিশেষ নজর এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদের ভোটের দিকে। প্রশাসনিক ভাবেও বেশ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তার কারণ হিসেবে ভোটের চিত্রও প্রভাব ফেলছে। কারণ এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন মাত্র দুইজন প্রার্থী। দু’জনই সরকারি দল আওয়ামী লীগের লোক। তাদের একজন হলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী ও অপরজন হলেন আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান নুরুল আবছার।

মাঠের চিত্র মতে, দু’জনই বেশ শক্তিমান ও হেভিওয়েট প্রার্থী। তাই দু’জনকে ঘিরে ভোটারদের মাঝে বেশ সাড়া পড়েছে। দু’জনই সমানতালে বিরতিহীন প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে ভোটাররা হিসাব কষছেন, কে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের উপকার হবে। হিসেবে দু’প্রার্থীই হাড্ডাহাড্ডি পর্যায়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে দুই প্রার্থীও জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী।

ভোটাররা বলছেন, কাকে ভোট দেবেন তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো অনেকে নেয়নি। তবে অধিকাংশই নীরব থেকে ভোটের দিন ব্যালেটের মাধ্যমে ভোট প্রয়োগ করবেন। তাই তারা সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন। এই জন্য প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ চান ভোটাররা। পর্যাপ্ত পরিমাণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করে ভোটের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার দাবি জানাচ্ছেন তারা।

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আনারস প্রতীকের নুরুল আবছার বলেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী দুইবছরের বেশি সময় ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করেছেন। এই সময়ে তিনি একটি উল্লেখ্যযোগ্য উন্নয়নও করতে পারেনি। শুধু নিজের আখের গুছিয়েছেন। জনগণ তার প্রাপ্য সেবার প্রত্যাশার সিকিভাগও পায়নি। তাই তার উপর জনগণ বিরক্ত। এই কারণে আমাকে বিপুলভাবে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।’

তিনি বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে, ‘ভিজিএফ, ভিজিডি ও বয়স্কভাতা, দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থাসহ সরকারি সকল সুযোগ প্রাপ্য ব্যক্তির বাড়িতেই পৌঁছে দেবো। সরকার নির্ধারিত সহনশীল ব্যবসায়িক চার্জ নেবো এবং যে এসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই সেখানে নির্বাচিত হওয়ার পাঁচ মাসের মধ্যে টাওয়ার বসানোর উদ্যোগ নেবো। সে জন্য যেখানে যেতে হয় যাবো। প্রয়োজনে পায়ে ধরবো। কারণ নেটওয়ার্ক না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বিপুল মানুষ।’

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘মানুষের ভালোবাসায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আমি মাত্র দু’বছর দায়িত্ব পালন করেছি। এই অল্প সময়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এলাকার উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি। মানুষের সুখে-দু:খে পাশে থেকেছি। তাই আমার বিশ্বাস জনগণভোট দিয়ে আবারো আমাকে নির্বাচিত করবেন।’

নির্বাচনের সার্বিক প্রসঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি বলেন, ‘নাইক্ষ্যংছড়ির তিন ইউনিয়নের ভোট শতভাগ সুষ্ঠু হবে। সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের প্রশ্নের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এই জন্য বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। তিন ইউনিয়নে একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এর নেতৃত্বে তিনজন করে মোট ১০ জন ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। ভোটাররা শতভাগ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নিশ্চিন্তে ভোট প্রদান করতে পারবেন।’

আরও খবর