ঘরে বাতি দেওয়ারও মানুষ রইল না কারা, কেন চার খুনের ঘটনা ঘটালো!

রফিকুল ইসলাম, উখিয়া

পরিবার পরিজনের সুখের আশায় একটু ভালো মতো জীবন কাটানোর লক্ষ্য রোকেন বড়ুয়া এক যুগেরও বেশী সময় ধরে কুয়েতে প্রবাসী। কে জানতো তার এ সোনার সুন্দর সংসারে এ দূরাবস্হা নেমে আসবে। আজ তার সাজানো সংসারের হাল ধরার কেউ রইলো না। সন্ধ্যায় বাড়ীতে বাতি জ্বালানোরও কেউ আর নেই। এ মহাকষ্ট জানিনা রোকেন কিভাবে সইবে।

রোকেন বড়ুয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা এলাকায় ‘শান্তপ্রিয় ভদ্র পরিবার’ হিসেবেই পরিচিত ছিল জানিয়ে রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম বলেন, “ভাইদের মধ্যেও সম্পর্ক ভালো ছিল। কারও সঙ্গে তাদের ঝগড়া বা জটিলতা ছিল বলে আমরা শুনিনি। এ ঘটনায় এলাকার লোকজনও হতবাক।”

উখিয়ার শান্ত, সবুজ গ্রাম পূর্ব রত্না। এ গ্রামে প্রায় ২/৩ শ পরিবারের বসবাস। সকলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বড়ুয়া সম্প্রদায়ের। কোটবাজার – ভালুকিয়া সড়কের দুই পাশে গ্রামটিতে সহজ সরল বড়ুয়াদের বসবাস। রাস্তার দক্ষিণে পূর্ব রত্না বৌদ্ধ বিহার আর বিহারের সামনে এক/দুই শ গজের মধ্য কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়াদের বাড়ী। পাশে অপর দুই ভাইয়ের ঘর।
সম্পর্কে রোকেনের আপন চাচা সুমন্ত বড়ুয়া ড্রাইভার (৬৪)। তিনি বলেন,অনেকের স্বামী বিদেশে থাকে। অনেকের প্রবাসী স্ত্রীকে নিয়ে নানা কথা রটে।কিন্তু রোকেনের স্ত্রী সুন্দরী ও যুবতী হওয়ার পরও এধরনের কোন কথা বার্তা শুনা যায়নি। এমনকি রোকেনের বাড়ীর সামনের দরজা প্রায় সময় বন্ধ থাকতো।পিছনের দরজা দিয়ে রোকেনের স্ত্রী মিলা ও শাশুড়ি চলাফেরা করতো। পর কোন পুরুষের সাথে মিলাকে নিয়ে কোন কথা শুনা যায়নি।

পাশ্ববর্তী মুসলিম গ্রামের আবদুল করিম বলেন,আমরা কোনদিন শুনিনি রোকেন ও তার স্ত্রী মিলার সাথে গ্রাম বা পাড়া প্রতিবেশীদের সাথে কোন ঝগড়া বা বিরোধ কোন কিছু। রামু উপজেলা থেকে রোকেন বিয়ে করলেও তার স্ত্রী ছিলো খুবই ভদ্র, শালিন ও মার্জিত। নেহায়েত প্রয়োজন না হলে বাড়ীর বাইরে যেত না। তাদের সাথে কারো শত্রুতায় এ ঘটনা ঘটেছে কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না।

প্রতিবেশী দুলাল বড়ুয়া জানান,গত ২/৩ দিন আগে মিলাদের ভিটার দুটো গাছ কাটে। ভিন্ন এলাকার কয়েকজন লোক গাছ কাটে তারা মিলাদের বাড়ীতেও আসা যাওয়া করেছে। তিনি জানান তারাও সন্দেহের বাইরে নয়। হিমু বড়ুয়া বলেন মিলা বেশ সুন্দরী ও যুবতী। হয়ত বখাট জাতীয় দূর্বত্তরা তার উপর কুনজর দিয়েছিল।আর তারই জের ধরে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা হতে পারে। তাছাড়া খুনীদের মধ্য হয়ত এমন কেউ ছিল যাকে বা যাদের শিশুরা ও বৃদ্ধা ছিনে ফেলেছিল। না হয় অবুঝ শিশুদের ও বৃদ্ধাকে কেন খিন করলো।

প্রতিবেশী ভুট্টো বড়ুয়া ও প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বড় ভাই রবিসন বড়ুয়া বলেন, তারা দু’জনেই রাত দুটোর দিকে দোকানে টিভি দেখে বাড়ী ফিরে। রাত ১২ টার দিকে তিন জন লোককে মোটর সাইকেল নিয়ে উচ্চ স্বরে চিল্লাচিল্লি করে কয়েক বার রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। এ ঘটনায় রবিসনের একমাত্র মেয়ে সনি বড়ুয়াও খুনের শিকার হয়।

জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” এলাবাসীর কৌতুহল প্রায় সকলে বলছে প্রবাসী রোকেন ও স্ত্রী মিলা দম্পতির সাথে কারো কোন বিবাদ নেই,তবে কেন এ হত্যাকান্ড।

আরও খবর