আলমগীর হোসেন • সময়ের আলো
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ সীমানায় ইয়াবা চোরাচালান প্রবেশের রুটের যেন শেষ নেই। কক্সবাজারের নাফ নদী, বঙ্গোপসাগর এবং স্থল সীমানা দিয়ে হরহামেশা ঢুকছে ইয়াবার চালান। এরপর বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা থেকে সারা দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য প্রচলিত রুটগুলোর চেয়ে বরং নতুন নতুন পথ ও কৌশল আবিষ্কার করছে ইয়াবা চক্র। যেসব স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট রয়েছে সেসব পয়েন্ট এড়িয়ে আশপাশের বনজঙ্গল দিয়ে নতুন রুট বানানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। মিয়ানমার সীমান্তের কক্সবাজারসহ অন্য এলাকাগুলো বেশিরভাগই পাহাড় ও বনাঞ্চল হওয়ায় সে সুযোগটি সহজেই নিতে পারছে মাদক চক্র।
গত সপ্তাহব্যাপী কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, ঘুনধুম সীমান্তসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ইয়াবা চোরাচালান প্রবেশ বন্ধে মোটামুটিভাবে চেষ্টা করলেও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা মাদক চক্রকে উল্টো সহযোগিতা করছে। ফলে বিজিবিসহ অন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইয়াবা চোরাচালান প্রতিরোধে প্রতিনিয়তই হিমশিম খাচ্ছেন। কড়া নজরদারি ও অভিযানের মধ্যেও বড় বড় ইয়াবা চালান আনতে সক্ষম হচ্ছে মাদক চক্র। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণির কর্মকর্তা বা সদস্যও অনেক সময় টাকার বিনিময়ে মাদক চক্রকে সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ইয়াবা চক্র সবসময়ই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে ভিন্ন ভিন্ন রুট ও কৌশল ব্যবহার করে থাকে। তারপরও তারা ধরা পড়ছে। এসব বিষয়ে গোয়েন্দাদের আরও সজাগ করা হয়েছে। পাশাপাশি মাদকবিরোধী নিয়মিত অভিযানও চলছে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর সরেজমিন মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, ঘুনধুমসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে পাহাড় আর বনাঞ্চল। পাহাড়ি রাস্তাগুলো ধরে ওইসব এলাকায় চলাচলের সময় দুয়েকটি স্থান ছাড়া কোথাও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট চোখে পড়েনি। মূলত কক্সবাজার-মেরিনড্রাইভ-টেকনাফ সড়কের তিন থেকে চারটি পয়েন্টে কক্সবাজারমুখী অবস্থানে চেকপোস্ট রয়েছে।
অন্যদিকে টেকনাফ-উখিয়া-কক্সবাজার রুটেও তিন থেকে চারটি পয়েন্টে চেকপোস্ট দেখা গেছে। তবে এসব চেকপোস্টে মূলত যানবাহনের যাত্রীদের আইডি কার্ডই বেশি যাচাই করা হয়। এর বাইরে মিয়ানমারের স্থল সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, ঘুনধুমসহ পাহাড়ি রুটগুলোতে চলাচলকালে কোথাও কোনো চেকপোস্ট চোখে পড়েনি।
স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, টেকনাফের নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ইয়াবা প্রবেশের ঘটনা বেশি আলোচিত হওয়ায় এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ও অভিযানও বেশি।
অন্যদিকে স্থল সীমান্তপথে কেবল বিজিবির বিভিন্ন বিওপি (বর্ডার আউটপোস্ট) টহল ছাড়া তেমন অভিযান বা নজরদারি নেই। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাহাড়ি একশ্রেণির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তথা চাকমা, মারমা সম্প্রদায়ের অনেকেই ইয়াবা চালান আনছে। ওপাশে মিয়ানমারের নাসাকা বাহিনী তথা সীমান্তরক্ষীরা ইয়াবা প্রবেশে সহযোগিতা করায় এখানকার উপজাতীয় মাদকচক্র নির্বিঘ্নেইই ইয়াবা আনতে পারছে।
মূলত ঘুনধুম ও নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী কয়েকটি বড়ূয়াপাড়া, চাকমা বসতি ও মারমাদের মধ্যে ইয়াবা চোরাচালান আনার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকার অধিকাংশ বাড়িতেই ইয়াবা এনে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে এসে ইয়াবা ও গাঁজা খুচরা এবং পাইকারি কিনে নিয়ে যায় মাদক চক্র।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, প্রচলিত বা আলোচিত রুটগুলো এখন তুলনামূলক কমই ব্যবহার করছে ইয়াবা কারবারিরা। মূল সড়কগুলো ব্যবহার করতে গেলেও যে পয়েন্টে চেকপোস্ট থাকছে সেটি এড়িয়ে আশপাশ দিয়ে বিকল্প পথ তৈরি করছে ইয়াবা চক্র। এক্ষেত্রে পাহাড়ি বা বনজঙ্গলের ভেতর দিয়েও ইয়াবা রুট আবিষ্কার করে নিচ্ছে চক্রের সদস্যরা।
কক্সবাজার অঞ্চলে কর্মরত পুলিশ ও র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুর্গম অঞ্চল হওয়ায় মাদক চক্র সহজেই নতুন নতুন ইয়াবা রুট আবিষ্কার করতে পারছে চক্রের সদস্যরা। ইয়াবা চালান বহনকালে কোথাও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেলে সহজেই পাহাড়ে বা বনজঙ্গলে গা-ঢাকা দিতে পাচ্ছে মাদক চক্র। এভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে যাওয়াটা তাদের জন্য খুব সহজ। তবে এসব বিষয় মাথায় রেখেই কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-