এনজিও রিকের যাঁতাকলে পড়ে শতশত হতদরিদ্র পরিবার গ্যাস সিলিন্ডার পাচ্ছে না!

ফারুক আহমদ,উখিয়া •

এনজিও সংস্থা রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) এর যাঁতাকলে শিকার হয়ে উখিয়ার শত শত হতদরিদ্র পরিবার গ্যাস সিলেন্ডার ও স্ট্রোব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিক সমাজ বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে এলপি গ্যাস সিলেন্ডার ও স্টোব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউ এফপি) এনজিও রিকের তালিকা মতে ৭ হাজার ৫৩৩ পরিবারের মাঝে বর্তমানে এসব সামগ্রী ইউনিয়ন পর্যায়ে বিতরণ শুরু হয়েছেন।

রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় মেম্বার আবদুল গফুর, মেম্বার সেলিম উদ্দিন ও কয়েক জন মহিলা মেম্বার অভিযোগ করে বলেন, এসব গ্যাস সিলিন্ডার ও অন্যান্য সামগ্রী কিভাবে দিচ্ছে তা কেউ অবগত নয়। তালিকা করার সময় কাউকে কিছু জানায়নি রিক।

অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, রিক নামক একটি এনজিও সংস্থার অনেকদিন আগের পুরাতন তালিকা নিয়ে আইওএম এবং ডব্লিউএফপি তাদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছেন।

এতে করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ও শতশত হতদরিদ্র পরিবার এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ডব্লিউএফপি তাদের কর্মসূচি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার জন্য রিক নামক এনজিও দায়িত্ব পালন করছেন। উক্ত এনজিও ইএফএসএন কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ১১ হাজার পরিবারকে এককালীন ১৫ হাজার টাকা নগদ অনুদান ও প্রতিমাসে আরো ১ হাজার ৫০ টাকা বিতরন করছেন।

গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, রিকের সুবিধাভোগী ও উপকারভোগী এসব সদস্যকে পুনরায় গ্যাস সিলিন্ডার এবং অন্যান্য গৃহ সামগ্রী প্রদান করার জন্য তালিকা প্রদান করেন। ডব্লিউ এ পি ওই তালিকাটি হস্তান্তর করেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আই ও এম কে।

স্থানীয় সুশীল সমাজের অভিমত যারা এককালীন ও প্রতি মাসে মাসে নগদ অর্থ সহায়তা পাচ্ছে তাদেরকে আবারো গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ ইতিপূর্বে যেসব হতদরিদ্র পরিবার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদেরকে এবারে বিভিন্ন সামগ্রী প্রদান করা উচিত ছিল। এতে করে সুষম বা সমবন্টন হলে কেউ বঞ্চিত হতো না।
কিন্তু রিকের পুরানো তালিকায় নতুন করে গৃহস্হলী সামগ্রী বিতরণ করায় সর্বক্ষেত্রে অনিয়ম স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্ব হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনজিও রিক এর(ইউপিএমআইও) মমিনুর রহমান জানান, নতুন করে কোন তালিকা করা হয়নি পুরনো তালিকা বা আমাদের উপকারভোগী সদস্যদেরকে এসব সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। নতুনভাবে তালিকা করা হলে বঞ্চিত অনেক দরিদ্র পরিবার এসব সুবিধার আওতায় আসার সুযোগ হত কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি সুদুত্তর দিতে পারেনি।

রিকের প্রজেক্ট কোডিনেটর রুহুল কুদ্দুস গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণ বিষয়টি তারা সম্পৃক্ত নয় এমন কথা বললেও দেখা গেছে, রিকের তালিকা ও তাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সহযোগিতায় গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণ করা হচ্ছে।

উখিয়া উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় জনগণকে বিভিন্ন সামগ্রী দেওয়া হলেও কোন জনপ্রতিনিধিকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয় না।

এনজিও মনগড়া ও তাদের ইচ্ছামতী এসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে যারা পাচ্ছে তারা সব সময় সুযোগ নিচ্ছে আর যারা পাচ্ছে না তারা সব সময় বঞ্চিত হচ্ছে। এটি মারাত্মক বৈষম্য।

সচেতন নাগরিক সমাজ অভিযোগ করে বলেছেন, কর্মরত নারীকর্মীদের যৌন হয়রানি ও অনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে একাধিকবার থানা পুলিশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে অভিযোগ করা হয়েছে উক্ত ঘটনা রিক এনজিওর দুইজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এদিকে এনজিও রিকের লাগামহীন ও একগুঁয়েমি মনোভাব নিয়ে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা নিয়ে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আরও খবর