যেভাবে ইসির সার্ভারে ৬ শতাধিক রোহিঙ্গা!

বার্তা২৪ •

অবৈধ পন্থায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)’র সার্ভারে ডাটাভুক্ত হয়েছে অন্তত ৬ শতাধিক নতুন-পুরাতন রোহিঙ্গা। তথ্য গোপন, সনদ জালিয়াতিসহ নানান চক্রের মাধ্যমে এরা এ সার্ভারে ঢুকে পড়ে। সম্প্রতি এ চক্রের তিন সদস্যকে আটকের পর এমন তথ্য বেরিয়ে আসে। যাদের মধ্যে বেশীরভাগ রোহিঙ্গা ব্যবহার করেছে কক্সবাজার সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ভুয়া ঠিকানা ও সনদ।

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র বলছে, তথ্য গোপন, সনদ জালিয়াতি ও অবৈধ পন্থায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)’র সার্ভারে ডাটাভুক্ত হওয়ার অপরাধে চার রোহিঙ্গাসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ্য করে ৬ শতাধিক অজ্ঞাতনামা রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন তিনি।

মামলার আসামিদের মধ্যে আটকরা হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার পশ্চিম নতুন বাহারছড়ার বাসিন্দা (পুরনো রোহিঙ্গা) ইউসুফ আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম নুরু (৪২), মৃত শহর মুল্লুকের ছেলে ইয়াছিন (৩৭), টেকনাফ নয়াপাড়া মুছনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ ব্লকের আবুল হাশেমের ছেলে আব্দুল্লাহকে (৫৩)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা স্বীকার করেন, কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ খোদাইবাড়ি এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মৃত ওলা মিয়ার ছেলে শামসুর রহমান (৫০) ও রোহিঙ্গা ওবায়দুল্লাকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা ভোটার হয়েছেন। তাই এ দুইজনকেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আসামি করা হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ‘অভিযুক্তরা চট্টগ্রাম জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইজ জালিয়াতি ও প্রতারণা এবং একটি চক্রের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের অবৈধ পন্থায় নানা কৌশলে ভোটার নিবন্ধন করে আসছে। ইতোমধ্যে নুরুল ইসলাম প্রকাশ নুরু ও মো. ইয়াছিন টাকার বিনিময়ে ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। আটককৃত তিন রোহিঙ্গা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, গত ১২ মে নুরু ও মো. ইয়াছিন শহরের নতুন বাহারছড়া জামে মসজিদের সামনে আব্দুল্লাহ, ওবায়দুল্লাহ ও শামসুর রহমানকে ভোটার নিবন্ধনের জন্য ১৫ হাজার টাকা দেন। পরে তাদের ছবি তুলে ভোটার নিবন্ধনের জন্য চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে একটি কক্ষে জমায়েত করে রাখে। সেখানে আগে থেকেই আরও রোহিঙ্গা অবস্থান করছিলেন। একই পন্থায় অন্তত ৬ শতাধিক রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তথ্য দেয় বলে এজহারে উল্লেখ্য করা হয়।

এজাহারে আরও উল্লেখ্য করা হয়, আটক হওয়া রোহিঙ্গাদের নাম-ঠিকানা নির্বাচন কমিশনের ভোটার নিবন্ধন তথ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের ভোটার নিবন্ধন আইডিতে তার মিল পাওয়া যায়নি। রোহিঙ্গারা চিহ্নিত ও সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে ভোটার তালিকাভুক্ত হচ্ছে বলে ধারণা করছে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস। ২০১৭ সাল থেকে এ চক্রটি এভাবে রোহিঙ্গার ডাটা নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে ঢুকিয়ে দেয়। আর এর বিনিময়ে নেন মোটা অংকের টাকা।

মামলার বাদী কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা বলেন, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব রোহিঙ্গা সার্ভারে ঢুকে পড়েছে। এ চক্রের কয়েকজনকে আটকের পর বাকিদের তথ্য দেন তারা। বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘মামলাটি তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ। কীভাবে এসব রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বা এর পেছনে কারা জড়িত রয়েছে তার তদন্ত শুরু হয়েছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর আসে চট্টগ্রাম ইসি থেকে ছুরি হওয়া ল্যাপটপের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ভোটার করছিল ইসির অফিস সহকারী জয়নালের নেতৃত্বে একটি চক্র। জয়নালসহ ওই চক্রের কয়েকজন আটকের পর এমন তথ্য আসে। তবে কক্সবাজারের ঠিকানা ব্যবহার করে যে সব রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে তারাও একই ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও খবর