মাদকের আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষে কলাতলীর জামাল

শাহীন মাহমুদ রাসেল

মাদকের আন্ডারওয়ার্ল্ডে কক্সবাজার শহরের কলাতলীর জামাল ডন হিসেবে পরিচিত। কেউ কেউ বলেন গডফাদার। তার হাতেই জেলার মাদক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ।

টেকনাফ থেকে নদী পথে আসছে বিপুল ইয়াবা। আর অবৈধ মাদকের চালান পাচার করে অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক হওয়া কলাতলীর জামাল এখন আন্ডার ওর্য়াল্ডের ডন। এক সময়ে ভবঘুরের ফেরারী ও টোকাই এখন বিলাস বহুল রঙ মহলে বসে নিয়ন্ত্রণ করে ইয়াবার জগত।

এই গড ফাদার গোয়েন্দা সংস্থা ও রাষ্ট্রের কালো তালিকা ভুক্ত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনিক কার্যালয় সর্বত্র মহড়া দিয়ে নানান অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অসংখ্য পাচারকারীর পৃর্থক পৃর্থক সিন্ডিকেট ছাড়াও তার রয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক পরিচয়ী কিছু দুর্বৃত্ত, অসাধু জন প্রতিনিধি, প্রশাসনের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ চক্র ও সোর্স-মিডিয়া কর্মী গড়ে তোলে ৫ স্তরের বাহিনী। এসব বাহিনীর অপশক্তি ব্যবহার করে মিয়ানমার হতে হাজার হাজার ইয়াবা এনে সারা দেশে সরবরাহ করে রমরমা বাণিজ্য গড়ে তোলে।

অভিযুক্ত ইয়াবার নায়ক জামালের অপর সহোদর চার ভাই ইয়াবার অন্যতম এজেন্ট। একাধিক ইয়াবা মামলা রয়েছে। জামাল সিন্ডিকেটের প্রধান খরুলিয়ার নয়াপাড়ার নুরুল আমিন গত কয়েকদিন আগে ৫০ হাজার ইয়াবার চালান সহ পুলিশের হাতে আটক হয়। জামাল দেশব্যাপী সিন্ডিকেট পরিচালনা করে বলে জানা যায়। অভিযুক্ত ইয়াবা গড় ফাদার জামাল কালো টাকাও শক্তির প্রভাবে নিরাপদে চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে যাচ্ছে।

সীমান্ত এলাকা হতে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কে অনেকটা বিনা বাধায় তার অবৈধ চালান পাচার করে। নানান প্রভাবে প্রশাসনের অনেক টিম চালান আটক করতে চাইলেও তার বাহিনীদের নানান কারিশমা, রাজনৈতিক অপশক্তি ও নানা প্রভাবে তারা খোদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে পর্যন্ত লাখ লাখ টাকার মিশন নিয়ে ষড়যন্ত্র করে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কক্সবাজার জেলার অনেক কর্মকর্তারা বিষয়টি ওয়াকিবহাল নন। তবে অনেক দারোগা ওসি, এ.এ.এসপি সার্কেল এবং এস.পি অফিসের সংশ্লিষ্টরা আদৌ এ মাফিয়া ডন কিংবা তার বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। উল্টো বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তর ও থানা এলাকায় প্রভাবশালী ক্ষমতাসীন নেতাদের নিয়ে প্রকাশ্য মহড়া, দেন দরবার বেপরোয়া ঘুরাফেরার বিষয়টি আইন শৃঙ্খলার অবনতি ডেকে আনবে বলে সচেতন মহল অভিমত প্রকাশ করে।

এদিকে তালিকাভুক্ত উক্ত গডফাদার কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিলাস বহুল প্রসাদ, দালান ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নানান মডেলের যানবাহন গড়ার বিষয়টি এখন এলাকায় আলোচ্য বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। কলাতলী এলাকায় আধুনিক প্রসাদ গড়ে তোলার দৃশ্য দেখে ইয়াবা ব্যবসার প্রতি সাধারণ মানুষেরও লোভের সৃষ্টি হচ্ছে বলে অনেকেই ধারণা করেন। যা নিজ ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক।

স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত জামাল একজন ইয়াবা গড় ফাদার। তার অপর সহোদর ভাই আমির হোসেনকে ৫৭ লাখ টাকার ইয়াবাসহ রামু থানা পুলিশ হাতে-নাতে আটক করে। বর্তমানে কারাগারে আছে। তারা অজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, অভিযোগ সম্পর্কে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ পুলিশের দায়িত্ব।

সূত্র জানায়, এই মাদক সম্রাট জামালের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের যুবসমাজ। কলাতলীর হোটেলে-মোটেল জোন, পেশকার পাড়া, সমিতি পাড়া, লারপাড়া, পাহাড়তলী, টেকপাড়া, বৌদ্ধ মন্দির সড়কসহ ১০/১২টি স্পটে প্রকাশ্যে চলছে বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের কেনা-বেঁচা। শুধু ব্যবসাতেই সে ক্ষান্ত নয়। এসব স্পটে জামালের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা মাদক সেবন ও সরবরাহও করছে দাপটের সাথে। এতে চরম উৎকন্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে অভিভাবকরা।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, কলাতলীর যে সমস্ত ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে তাদের ব্যাপারে পুলিশ খবরা খবর রাখছে। সময় মতো আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

আরও খবর