ডেস্ক রিপোর্ট – জামালপুরের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নারী কেলেঙ্কারির ঘটনার পর এবার কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু শামা মো. ইকবাল হায়াতের নামে নারী কেলেঙ্কারীর আরো ভয়াবহ আপত্তিকর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিও নিয়ে কিশোরগঞ্জে এখন তোলপাড় চলছে।
ভিডিওতে কটিয়াদীর এক প্রবাসীর স্ত্রী (২৮)কে এক পুরুষের সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে। ভিডিওটির কয়েকটি ক্লিপ এবং স্ক্রিনশট এখন কটিয়াদীতে সব শ্রেণি পেশার মানুষের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফেসবুক থেকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, মোবাইল থেকে মোবাইলে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিও এবং ভিডিওর ছবির বিষয়ে বলা হচ্ছে, ওই নারীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় যে পুরুষকে দেখা গেছে তিনি কটিয়াদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু শামা মো: ইকবাল ইকবাল হায়াত।
তবে ওসি আবু শামা মো. ইকবাল হায়াতের দাবি, এই ভিডিওটি তার নয় এবং ভিডিওর ছবি কম্পিউটারে এডিট করে তার ছবির মতো করা হয়েছে।
এদিকে এ ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ভিডিওতে থাকা ওই নারী বাদী হয়ে তার প্রেমিক কটিয়াদী কাঠ মহাল মোড়ের চরিয়ায়াকোনা এলাকার আসাদ মিয়ার ছেলে হিমেল (৩৪) এবং কটিয়াদী প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বাংলা টিভির কটিয়াদী প্রতিনিধি সৈয়দ মুরসালিন দারাশিকোর নামে সোমবার রাতে কটিয়াদী মডেল থানায় জিডিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেছেন।
মামলা দায়েরের পর রাতেই মামলার প্রধান আসামি হিমেল এবং কটিয়াদী প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বাংলা টিভির কটিয়াদী প্রতিনিধি সৈয়দ মুরসালিন দারাশিকোকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তবে রাতেই মুচলেকা নিয়ে সাংবাদিক দারাশিকোকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। হিমেলকে মঙ্গলবার সকালে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শকের মাধ্যমে কোর্টে পাঠানো হয়। পরে তাকে জেলে পাঠানো হয়।
মামলায় ওই নারী উল্লেখ করেন, তার ও কটিয়াদী মডেল থানার ওসির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে তার ছবি কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে হিমেলের সঙ্গে ওই নারীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত হিমেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। হিমেল গোপনে তার মোবাইল ফোন থেকে স্বামীর সঙ্গে মেলামেশার কয়েকটি ছবি নিজের মোবাইলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সম্পর্ক করতে রাজি না হওয়ায় ২০১৭ সালের শেষের দিকে সাংবাদিক দারাশিকোর সহযোগিতায় হিমেল তার নগ্ন ছবি বিভিন্ন মোবাইলে দিয়ে ভাইরাল করে দেয়।
গত ২৯ আগস্ট হিমেল তার মোবাইলের ইমু আইডি থেকে ওই নারীর এক দেবরের মোবাইলে আপত্তিকর অবস্থার দুটি ছবি পাঠায়। এতে বলা হয়, গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রিয়া সুলতানা নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে আমাকেসহ ওসি সাহেবের নামে বিভিন্ন অপবাদ ছড়ানো হয়।
মামলার এক জায়গায় ওই নারী স্বামীর সঙ্গে মেলামেশার ছবির কথা বললেও মামলার আরেক জায়গায় বলেন- ছবির মুখমণ্ডল আমার হলেও শরীর অন্য কারও।
মামলায় ওই নারী ওসির বিষয়ে লিখেন ‘আসামী হিমেল আসামী সৈয়দ মুরছালিন দারাশিকো এবং অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন আসামীর সহায়তায় আমার ছবি কম্পিউটারের মাধ্যমে আকৃতি পরিবর্তন করে আমার পার্শ্বে থাকা ছবিটি ওসি সাহেবের বলিয়া মিথ্যামিথ্যিভাবে প্রচার করিয়া বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়াইয়া তাহার (ওসির) পারিবারিক সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করাসহ ওসি সাহেব একজন সরকারি কর্মচারী হওয়ার কারণে তাহার (ওসির) সুনাম ক্ষুণ্ণ করিয়াছে।’
তবে মামলার এজাহারে কোথাও ভিডিওর কথা উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে সাংবাদিক দারাশিকোর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে তার পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেন, ফেসবুকে ছবি বা ভিডিও ভাইরাল বিষয়ে দারাশিকো কিছুই জানে না। দারাশিকো সাংবাদিকতা করেন, তার টেলিভিশনে এ ওসির বিষয়ে সংবাদ প্রচার হতে পারে, এ ধারণা থেকেই ওসি ওই মহিলাকে প্রভাবিত করে মামলায় দারাশিকোর নাম সংযুক্ত করিয়েছেন।
এদিকে পুরুষের সাথে ওই নারীর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।
নানাজনের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়েছে এ অশ্লীল ভিডিও। যারা ছবি ও ভিডিওটি দেখেছে তারা বলছেন ভিডিওতে ওই নারীর সাথে যে পুরুষকে দেখা যাচ্ছে এটা কটিয়াদী থানার ওসি আবু শামা ছাড়া আর কেউ নন। তারা বলছেন, ওই ভিডিওর পুরুষ লোকটি যে ওসি এটা ওসি কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারবেন না।
মামলার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য, ওসি নিজে বাঁচার জন্য মামলাটি করিয়েছেন ওই নারীকে দিয়ে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা এটা। এ মামলা যে ওসি লিখে দিয়েছেন নারীর এজাহারের বক্তব্য থেকেই বুঝা যায়। কারণ এজাহারে নারী তার নিজের সুনাম ক্ষুণ্ণ হওয়ার ব্যাপারে যতটুকু না বলেছেন তার চেয়ে বেশি উল্লেখ করেছেন ওসির সুনাম ক্ষুণ্ণ হওয়ার বিষয়টি।
জানা গেছে, কটিয়াদী পৌর এলাকার ওই নারীর স্বামী দেশের বাইরে থাকেন। একই এলাকার হিমেল নামে এক যুবকের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হিমেলের পরিবারের দাবি, হিমেলের কাছ থেকে ওই নারী মোটা অংকের টাকা ধার নেন। ওই নারীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলে হিমেল তার পাওনা টাকা আদায়ের জন্য কটিয়াদী থানা পুলিশের সাহায্য চায়। কটিয়াদী মডেল থানার ওসি আবুশামা মো. ইকবাল হায়াত ওই নারীকে থানায় ডেকে এ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু হিমেল টাকা ফেরত পায়নি। পরে ওই নারীর সঙ্গে ওসির সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
বিষয়টি তদন্তের জন্য পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কটিয়াদী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু শামা মো. ইকবাল হায়াত জানান, এ ঘটনায় একজন নারী বাদী হয়ে দুইজনের নামে থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ মামলার প্রধান আসামি হিমেলকে গ্রেফতার করেছে। তাকে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, হিমেলের সঙ্গে ওই নারীর দুই বছর সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাওয়ায় সে তার ছবি বিকৃত করে ছড়িয়েছে।
ওই নারীর সঙ্গে থাকা পুরুষের ছবিটি তার নয় উল্লেখ করে ওসি বলেন, আমাকে এসবের সঙ্গে কেন জাড়ানো হচ্ছে। এর পেছনে কারা কাজ করছে সেটি তদন্তের পরই জানা যাবে।
মামলার দ্বিতীয় আসামি সাংবাদিক সৈয়দ মুরছালিন দারাশিকোকে রাতে বাড়ি থেকে আটক করে এনে আবার থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হলো কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি আবু শামা মো. ইকবাল হায়াত বলেন, আসলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কোনো আসামি অপরাধের সঙ্গে জড়িত কি-না সেটা নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেফতার করতে হয়। সাংবাদিক দারাশিকোকে গ্রেফতার করা হয়নি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো: মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, তদন্তের স্বচ্ছতার স্বার্থে কটিয়াদী মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলাটির তদন্ত ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। ভিডিওটিও আমরা বিশ্লেষণ করে দেখছি। তদন্তের মাধ্যমে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-