মাহাবুবুর রহমান :
রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২৩ শামলাপুল এর ১২ নং সেডে বসাবাসকারী রোহিঙ্গা নারী তসলিমা আক্তার(২৫) বর্তমানে ৫ সন্তানের জননী। তার সাথে কথা বলে জানা যায় ১৬ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়েছিল মায়ানমারের বলী বাজার এলাকায় থাকতে। স্বামীর নাম আক্কাস মিয়া তার চেয়ে বয়মে মাত্র ২ বছরের বড়।
পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো হারাম,আমার মা বাবার বারণ আছে তাছাড়া সন্তান আল্লাহর নিয়ামত এখানে আমরা কেন অন্যকিছু গ্রহন করব। পরে জানা গেছে তারা ও ভাই বোন ১২ জন। ক্যাম্প ১৭ এর ৪ ব্লকের বাসিন্দা নজির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বয়স এখন (২৮) এর মধ্যে স্ত্রী ২ জন আর ২ ঘরে সন্তান আছে ৭ জন। অনেকটা রাগান্নিত ভাবে বলেন, আমাদের সন্তান নিয়ে আপনাদের এত মাথা ব্যাথা কেন। আমরা খাওয়াতে পারলে ভরণ পোষন করতে পারলে আপনাদের সমস্যা কি?
পরে তাকে কিছুটা শান্ত করে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন,আমরা আগে কোন দিন এগুলো শুনিনি,এখানে এসে শুনছি অনেক মাঠ কর্মীরা এসব কথা বলেছে তবে এখনো সিদ্ধান্ত গ্রহন করিনি।
লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা জনগোষ্টির মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে কাজ করে নাজনিন আক্তার সাথি। আলাপ কালে তিনি জানান রোহিঙ্গাদের মাঝে পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা খুবই কঠিন,কারন তারা এগুলো বুঝতে চায়না। বেশির ভাগ সময় রাগারাগি করে অনেক সময় আজেবাজে কথা বার্তা বলে। ২০১৭ সালের দিকে কোন বাড়িতে গেলে তারা ভাল করে কথা শুনতো। পদ্ধতি গ্রহন করুক না করুন কথা শুনেছে সে জন্য ভাল লাগতো কিন্তু এখন বেশির ভাগ রোহিঙ্গাই আমাদের সাথে চরম খারাপ ব্যবহার করে। অনেকে তাড়িয়ে দেয়।
আরেক মাঠ কর্মী জাহানারা বেগম বলেন,বিভিন্ন পদ্ধতির কথা বলতেই রোহিঙ্গারা আমাদের ঘর থেকে বের করে দেয়,অনেক সময় শিশুরা এবং ছেলেরা ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। আমাদের কথা কেউ শুনেনা।
আমবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মোঃ আবদুল্লাহ জানান,বার্মায় থাকতে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে আমাদের কোন ধারণাই ছিলনা। তাই এখানে এসে এসব পদ্ধতি বিষয়ে সহজে অভ্যস্থ হচ্ছেনা। তবে এখানে একটি বিষয় আছে যারা কিছুটা শিক্ষিত তারা কিন্তু আগে থেকেই পরিবার পরিকল্পনা গ্রহন করেছে।
মূলত যারা অশিক্ষিত তারাই বেশি সন্তান নেয়,বহু বিবাহ করে এবং অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি করে। আর এখন অবশ্য অনেকে বুঝতে পারছে তাই পরিস্থিতি অনেকটা পরিবর্তন হচ্ছে।
এ ব্যপারে উখিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ জসিম উদ্দিন ইউচুপ বলেন, উখিয়াতে ২০ ক্যাম্পে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা আছে। সরকারের নির্দেশে মানবতার খাতিরে আমাদের কর্মী থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মকর্তারা উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে কাজ করছে। কিন্তু আমাদের কোন জনবল বাড়েনি। রোহিঙ্গা আসার আগে যে জনবল ছিল সেটা এখনো আছে। আগে তারা শুধু মাত্র স্থানীয় জনগোষ্টির মাঝে কাজ করতো এখন সেই কাজেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ইউএনএফপিএ, আইপিএম, কেয়ার বাংলাদেশ সহ কয়েকটি এনজিও ক্যাম্পে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে কাজ করে। আমার মতে আগে রোহিঙ্গাদের মাঝে পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে অনাগ্রহ থাকলেও বর্তমানে প্রায় ৩৬% রোহিঙ্গা পরিবার পরিকল্পনার আওতায় এসেছে।
এদিকে মুক্তি কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার বলেন, একটি সংস্থার সহযোগি প্রতিষ্টান হিসাবে মুক্তির একটি প্রকল্প আছে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার। আগে এ বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে চরম অনিচ্ছা থাকলেও বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা ভাল এখন অনেকে এর আওতায় আসছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য্য বলেন,প্রথম দিকে পরিবেশ বেশ প্রতিকূলে থাকলেও বর্তমানে পরিবেশ অনেকটা ভাল। তিনি জানান, আমাদের ২০০ মাঠ কর্মী কাজ করে, ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির আওতায় খাওয়ার বডি বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার,কনডম বিতরণ করা হয়েছে। সল্প মেয়াদী ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে (৩ মাস মিয়াদি) ১ লাখ ১ হাজার আইও ডি (দীর্ঘ মিয়াদী) ২৯০০. এবং ইমপ্লেন পদ্ধতি গ্রহন করেছে ৩৩০০ জন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, গত ২ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ৪৫ হাজার শিশু জন্ম গ্রহন করেছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন,ক্যাম্পে ঠিক কি পরিমান নবজাতক শিশু জন্ম গ্রহন করছে তার কোন সঠিক হিসাব নেই। তবে ইউএনএফপিএ তালিকা করার দায়িত্ব নিলেও তারা এখনো পর্যন্ত প্রতিবেদনটি জমা দেয়নি। তবে আমি একটি বিষয় বলতে পারি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম আরো জোরদার করা দরকার।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-