শাহীন মাহমুদ রাসেল :
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের কলাতলী থেকে প্রতিদিন চালান হচ্ছে ইয়াবা। এ এলাকার ইয়াবা ডন জামাল প্রকাশ ইয়াবা জামাল। সে যেন এগিয়ে চলছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। আইনী বাঁধা তার কাছে বারবার সংকুচিত হচ্ছে। মামলা হলেও অদৃশ্য শক্তির ইশারায় বাদ পড়ে যাচ্ছে তার নাম। জেলা জুড়ে ৩০ জনের মত সিন্ডিকেট নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তার ইয়াবা বাণিজ্য।
স্থানীয়রা জানায়, সারা দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের টার্গেট করে ব্যবসা জমিয়ে তুলেছে ইয়াবা কারবারি জামাল ও তার ভাগিনা রাসেল। কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের জন্য হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু করেছে তাদের সিন্ডিকেট। বিভিন্ন হোটেলে আগত পর্যটকদের কক্ষে ইয়াবা পৌঁছে দিচ্ছে তারা। ইয়াবা আসক্ত পর্যটকদের খুঁজে আনার জন্য চারটি মোটরসাইকেলে করে আটজন যুবককে নিয়োগ দিয়েছেন। ওই আট যুবকের নেতৃত্বে রয়েছে ১০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ১০টি ব্যাটারিচালিত টমটম ও ১০টি রিকশা। ওই বাহনগুলো বাস থেকে নামা পর্যটকদের টার্গেট করে। পর্যটকদের ফুঁসলিয়ে ইয়াবার অফার দিয়ে তাদের জামালের বাসা এবং তার ফ্লাটে নিয়ে যায়। জামাল ও রাসেলের পরিচালিত কলাতলির কয়েকটি ফ্লাট হলো ইয়াবার গোডাউন। এই ফ্লাটে পর্যটকের ছদ্মবেশে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা অবস্থান নেয়। পরে ওই ব্যবসায়ীরা ফ্লাট থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার জেলা শহরের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী হচ্ছেন জামাল। সে তাবলীগ জামায়াতের আড়ালে টেকনাফ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচারের পাশাপাশি কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনকে ইয়াবার স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন। বর্তমানে কলাতলিতে ৫০ লাখ টাকার জামানতে তিনটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন জামাল তার ভাগীনা রাসেল, দোলোয়ার, আরেক জামাল ও সামশু। ২৫ জনের বাকী নামও অনুসন্ধানে রয়েছে। তারা পৃথকভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন প্রাসাদতুল্য অট্টালিকা। অথচ নিকট অতীতেও তাদের দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা নেই।
যদিও বা তার ভাই আমির হোসেন ৫৭ লাখ টাকার ইয়াবা নিয়ে বর্তমানে ১৪ শিখের ভিতরে জীবন যাপন করছে। কিন্তু তারা এখনো সক্রিয়ভাবে তার ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন জনমনে একটিই প্রশ্ন। জামাল সিন্ডিকেটের এ কর্মকান্ডের শেষ কোথায়?
সরকার দলীয় স্থানীয় কয়েকজন নেতা জামাল ও তার ভাগিনা রুবেলকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন দপ্তরে তদবির চালাচ্ছে বলে স্থানীয়দের দাবী। এলাকাবাসী জানান, তারা শুধু ইয়াবা ব্যবসা নিয়ে ক্ষান্ত নয়, মায়ানমার থেকে অবৈধ অস্ত্র এনে কলাতলী থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাচার করে যাচ্ছে। জামাল ফের শহরে প্রকাশ্যে প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ নিয়ে সচেতন এলাকাবাসীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, ইয়াবা ডন জামালকে আইনের আওতায় আনা না গেলে পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবা পাচার থামানো যাবে না। কিন্তু প্রশাসনের কোন ধরণের পদক্ষেপ দেখতে না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, কক্সবাজার শহরে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক দ্রব্য বিক্রেতার গডফাদার জামাল সিন্ডিকেট। এমনকি এলাকায় শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধাদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে মরণ নেশা ইয়াবা। তাদের দাবী এ ইয়াবা ডন জামালকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনলে বেরিয়ে আসবে অস্ত্র ও ইয়াবা পাচারের অজানা রহস্য।
এ বিষয়ে জামালের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সবাই পালিয়ে গেছে। আমি আছি প্রকাশ্যে। কোনো তালিকাতেই আমার নাম নেই। কিছু মিডিয়া এসব লিখছে। এছাড়া ফেসবুকেও অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। পরে প্রতিবেদকে ম্যানেজ করার চেষ্টায় চা খাওয়ার দাওয়াত দেন।
এ ব্যাপরে কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি খন্দকার ফরিদ উদ্দীন বলেন, সে যে খানে যেভাবেই লুকিয়ে থাকুক তাকে খোঁজে বের করা হবে। তাকে ধরতে সাংবাদিক ও স্থানীয়দের সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-