ডেস্ক রিপোর্ট – ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে প্রথমে কথোপকথন পরে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন। এরপর অন্তরঙ্গ ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদ পাতেন। এভাবে ইচ্ছেমতো হয়রানি করে আসছিলেন ওয়ালিদ হোসেন রাসেল নামে এক প্রতারক। ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারের সহকারী কমিশনার পরিচয় দিয়ে কুমকুম (ছদ্মনাম) নামে এক শিক্ষার্থীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। এরপর যথারীতি চাঁদা দাবিসহ বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল শুরু করেন।
প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে র্যাব-৪ এ অভিযোগ করেন ওই তরুণী। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে ওই প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ল্যাপটপ ও পেনড্রাইভে সংরক্ষিত বিভিন্ন অশ্লীল ছবি জব্দ করা হয়।
র্যাব-৪ এর দাবি, গ্রেফতার রাসেল ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে আরও ৪/৫ জন মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন এবং অশ্লীল দৃশ্য মোবাইলফোনে ধারণ করে এবং একই পন্থায় তাদের কাছেও চাঁদা দাবিসহ বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন।
র্যাব-৪ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর) এএসপি মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল বলেন, ভুক্তভোগী ওই তরুণী একটি অভিজাত পরিবারের সন্তান। তার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। ইডেন মহিলা কলেজে অধ্যয়নকালে বিশেষ প্রয়োজনে বরিশাল শহরে অবস্থান করে লেখাপড়া করে আসছিলেন তিনি।
কোচিং করার সুবাদে প্রতারক ওয়ালিদ হোসেন রাসেলের সঙ্গে পরিচয় এবং ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব হয়। পড়াশুনা ও বিসিএস প্রস্তুতির জন্য কুমকুম একসময় ঢাকায় আসেন। রাসেলও ঢাকায় আসেন। আবারও শুরু হয় মোবাইলফোনে কথাবার্তা, বিসিএসসহ চাকরির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথাবার্তা চলতে চলতে রাসেল কুমকুমকে জানান, তিনি ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডার পেয়ে বর্তমানে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করেছেন।
এক পর্যায়ে রাসেল কুমকুমকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে সার্বিক বিবেচনায় প্রস্তাবে রাজি হয়, বিভিন্ন স্থানে ঘুরতেও যায়। শিগগিরই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে বলে সিদ্ধান্ত নেন। কুমকুমকে রাসেল বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি মোবাইলফোনে ধারণ করে।
কিছুদিন না যেতেই রাসেলের চালচলন ও কথাবার্তায় পরিবর্তন আসে। সন্দেহ তৈরি হওয়ায় কুমকুম রাসেলের কাছের লোকজনের কাছে জানতে পারেন ও ৩৬তম বিসিএসের নিয়োগ প্রজ্ঞাপন সংগ্রহ করে নিশ্চিত হয় যে, রাসেল বিসিএস কর্মকর্তা না। মিথ্যা পরিচয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। এতে কুমকুম মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
পরিবারের সম্মতিতে আরেক ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয় কুমকুমের। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কুমকুমের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কুমকুম রাজি না হলে কুমকুম ও তার পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে।
তাতেও রাজি না হওয়ায় কুমকুমের বড় ভাইয়ের ফেসবুক আইডিতে কিছু অশ্লীল ছবি পাঠায় রাসেল। বিষয়টি কুমকুমসহ পরিবার জানতে পারে। বিষয়টি জানিয়ে র্যাব-৪ এর কার্যালয়ে এসে লিখিত অভিযোগ করে পরিবার। এরপর রাসেলকে মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-