বিশেষ প্রতিবেদক :
কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া পুরাতন রোহিঙ্গাদের কেউ পাসপোর্ট করতে মরিয়া, নতুনরা ব্যস্ত এনআইডি কার্ড সংগ্রহে। অভিযোগ আছে, রোহিঙ্গাদের এসব কাজে সহযোগিতা করছেন জনপ্রতিনিধি ও কিছু চিহ্নিত দালাল।
তবে স্থানীয়দের দাবি, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় করা গেলে রোহিঙ্গাদের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ করা সম্ভব।
কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরে রোহিঙ্গা সন্দেহে অন্তত চার শতাধিক পাসপোর্ট আবেদন জব্দ করা হয়েছে। আর এসব রোহিঙ্গাদের প্রত্যেকের এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধন ছিল। আটক করা হয়েছে এনআইডিধারী দুই শতাধিক রোহিঙ্গাকে। কথা-বার্তায় সন্দেহ হলেই তাদের আটকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজাও দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র আরও বলছে, সম্প্রতি এনআইডি কার্ডধারী কুতুপালং ক্যাম্পের রেজিয়া বেগম নামের এক নারী রামুর রশিদ নগর এলাকার বাসিন্দা হিসেবে পাসপোর্টের আবেদন করেন। এমন পরিচয় নিয়ে প্রায় প্রতিদিন গড়ে ২-৩ জন রোহিঙ্গা আসছেন বাংলাদেশি পাসপোর্টের জন্য। তাদের এসব কাজে সহযোগিতা করছেন দালালরা। যারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মিথ্যে পরিচয়ে বাংলাদেশিদের পিতা বা মাতা বানিয়ে রোহিঙ্গা নারীদের পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে আসছেন। তবে এ অভিযোগ সবচেয়ে বেশি রামুর রশিদ নগর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে রামুর রশিদ নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম বলেন, ‘রোহিঙ্গারা জাল সনদ তৈরি করে এসব করছে।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার কিছু ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানরা এসব জালিয়াতিতে জড়িত। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তারা এসব কাজ করছেন। তাই দ্রুত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে, পুলিশের কাছেও রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট সংগ্রহের তথ্য আছে। সম্প্রতি টেকনাফে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নূর মোহাম্মদের এনআইডি এর বড় প্রমাণ।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেনবলেন, ‘যেসব রোহিঙ্গারা মিথ্যে মা-বাবা সাজিয়ে পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা করছে তাদের আটকের পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ আরও সতর্ক রয়েছে।’
জানা গেছে, বন্দুকযুদ্ধে নিহত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নুর মোহাম্মদকে সত্যায়িত সনদ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলী। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘স্থায়ী ঠিকানার জন্ম সনদ পেয়েই তাকে সনদ দেওয়া হয়েছিল। তার ওই সনদ জাল কিনা- সেটা যাচাই করা যায়নি।’
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের হাতে কোনো এনআইডি থাকার প্রমাণ আমার কাছে নেই। গত দুই বছরে এমন তথ্য পাইনি।’
কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুম কে বলেন, ‘এ পর্যন্ত দুই শতাধিক এনআইডিধারী রোহিঙ্গা আটক করা হয়েছে। তবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হওয়ার পরই রোহিঙ্গারা ধরা পড়ছে।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-