১০২ শীর্ষ ইয়াবা কারবারির সম্পদের খোঁজে দুদক

  • অধিকাংশই অঢেল সম্পদের মালিক
  • রয়েছে স্ত্রী-সন্তানের নামে সম্পদ-অর্থ
  • দুদক ছাড়াও অনুসন্ধান করবে তিন সংস্থা
  • তালিকায় বদির ভাই, আত্মীয়ও রয়েছে

ইমাম হোসাইন রাজু •

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করা টেকনাফের ১০২ জন শীর্ষ ইয়াবা কারবারির নামে-বেনামে থাকা সকল স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে সকল কাজ সম্পন্ন করেছে সংস্থাটি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত এসব ইয়াবা কারবারিদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে চূড়ান্ত পর্যায়ে মাঠে নামবে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে তাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানোর জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ ও ২ এর উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও উপ-সহকারী পরিচালকদের ফাইল ভাগ করে দিয়েছে বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক।

যদিও এই ১০২ জনের মধ্যে অধিকাংশ ইয়াবা কারবারির সম্পদ অনুসন্ধানের কাজ অনেক আগ থেকেই চালাচ্ছে দুদক কমিশন। তবে পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে এসব কারবারির সকল সম্পদের অনুসন্ধানের জন্য ফের দুদকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাই নতুন করে আত্মসমর্পণ করা এসব ইয়াবা কারবারিদের সম্পদের অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যাবে সংস্থাটি। তাদের মধ্যে টেকনাফের সাবেক সাংসদ আব্দুর রহিম বদির ভাই ও একাধিক আত্মীয় রয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক। এছাড়া উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান-কাউন্সিলর ও মেম্বারসহ এলাকার প্রভাবশালীরাও রয়েছেন এ তালিকায়।

দুদক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) উপস্থিতিতে কক্সবাজার জেলার টেকনাফের ১০২ জন মাদক কারবারি আত্মসমর্পণ করেন। এরপর ৩ মার্চ এ বিষয়ে কক্সবাজার পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে অবৈধভাবে থাকা তাদের সকল স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির অনুসন্ধানের জন্য ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) বরাবর চিঠি ইস্যু করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক ছাড়াও এসব ইয়াবা কারবারিদের সকল বিষয়ে তদন্ত করবে সিআইডি ও এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাও। ইতোমধ্যে তাদের কাছেও কক্সবাজার পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে ইতোমধ্যে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও অনুরোধ করেছে পুলিশ।
দুদক জানিয়েছেন, ১০২ জন ছাড়াও এর আগ থেকেই একাধিক ইয়াবা কারবারির বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলছে। যারমধ্যে কয়েকজনের অনুসন্ধানের প্রতিবেদন শীঘ্রই কমিশন বরাবর জমা দেয়া হবে। এছাড়া তাদের পরিবার ও স্বজনদেরও সম্পদের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধান করবে দুদক। একই সাথে নতুন করে ১০২ জন ইয়াবা কারবারির অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের অনুসন্ধান করা হবে এবং তাদের পরিবারের অন্য সদস্যা ও আত্মীয়-স্বজনদের বিষয়েও অনুসন্ধান কার্যক্রম চালনো হবে।

দুদকের কাছে পাঠানো পুলিশের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, আত্মসমর্পণ করা মাদক কারবারিদের নামে ও তাদের পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনের নামে থাকা সকল স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে তথ্যাদি প্রেরণ করা হবে এবং তাদের অর্জিত সম্পত্তি যাচাই সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে শর্তানুযায়ী তারা সম্মত হয়েছে। তবে জনশ্রুত রয়েছে, এসব মাদক কারবারি প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক। মূলত মাদক ব্যবসার মাধ্যমে তারা এ ধন সম্পদের মালিক হয়েছে। তাই স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যাচাই করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

দুদক সূত্র জানিয়েছেন, এসব ইয়াবা কারবারিদের অধিকাংশের স্ত্রী-সন্তানের নামে এবং আত্মীয়ের নামে অঢেল সম্পত্তি রয়েছে। টেকনাফ ছাড়াও কক্সবাজার সদর এবং ঢাকা চট্টগ্রামেও তাদের নামে সম্পদ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকেও মোটা অংকের টাকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক। তবে নিজেদের পাশাপাশি স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মীয়-স্বজনের সম্পদের তথ্য যাচাই করতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে।

আরও খবর