রফিকুল ইসলাম :
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত ৪১ টি এনজিওর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছিল এনজিও বিষয়ক ব্যুরো। শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সিলেটে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪১ এনজিওকে তাদের কার্যক্রম থেকে অব্যহতি দেওয়ার কথা বলেন সাংবাদিকদের। অব্যহতি দেওয়া এনজিও কি আগের গুলো না নতুন, তা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। যদি পূর্বের গুলো হয়ে থাকে তাহলে ঐ ৪১ টির বেশ কিছু বহাল তবিয়তে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে সেই থেকে তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে আসতে দেখা যায়।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, গত বছরের আগষ্টের প্রথম দিকে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এনজিও ব্যুরোকে ৪১ টি এনজিওর তৎপরতায় আপত্তি জানিয়ে চিঠি দেয়। তৎপ্রেক্ষিতে ঐসব এনজিওর কার্যক্রম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিষিদ্ধ করে ব্যুরো। রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশী ফান্ড পাওয়া এনজিও গুলো বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে।
ফ্রেন্ডশিপ, এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ, আল মারকাজুল ইসলাম, স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ, ঢাকা আহ্?ছানিয়া মিশন, গ্রামীণ কল্যাণ, অগ্রযাত্রা, নেটওয়ার্ক ফর ইউনিভার্সাল সার্ভিসেস অ্যান্ড রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট, আল্লামা আবুল খায়ের ফাউন্ডেশন, ঘরনী, ইউনাইটেড সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট, বুরো-বাংলাদেশ, এসএআর, আসিয়াব, এসিএলএবি, এসডব্লিউএবি, ন্যাকম, এফডিএসআর, জমজম বাংলাদেশ, আমান, ওব্যাট হেলপার্স, হেল্প কক্সবাজার, শাহবাগ জামেয়া মাদানিয়া কাসিমুল উলুম অরফানেজ, ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট ফর সোশ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান অ্যাফেয়ার্স, লিডার্স, লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, অ্যাসোসিয়েশন অব জোনাল অ্যাপ্রোচ ডেভেলপমেন্ট, হিউম্যান এইড অ্যান্ড রিলিফ অর্গানাইজেশন, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিশ, হোপ ফাউন্ডেশন, ক্যাপ আনামুর, টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ইনকরপোরেশন, গরীব, এতিম ট্রাস্ট ফাউন্ডেশনসহ ৪১টি এনজিও এর মধ্যে রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের মাঝে এনজিও গুলোর ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও দূর্নীতি তুলে ধরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন গত বছরের শুরুতে মন্ত্রী পরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব, এনজিও ব্যুরোর ডিজি সহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করে প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।
অগ্রযাত্রা বাংলাদেশ, কাতার চ্যারেটি,আল্লামা ফয়েজুল্লাহ ফাউন্ডেশন, সোয়াব, নুসরা, দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্লান ইন্টারন্যাশনাল, ঊষা সহ বেশ কিছু এনজিওর বিরুদ্ধে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়। এমনকি ওরা নির্দেশনা অনুযায়ী কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে কোন ধরণের অবহিতও করে না বলে এক প্রতিবেদনে জানা যায়।
নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এনজিও ব্যুরোর কঠোর তদারকিতে খাদ্য, স্যানিটারী,ল্যাট্রিন,বাথরুম, নলকূপ স্থাপন,আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ,কাপড় চোপড় বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা,প্রদান, গৃহস্থালি দ্রব্যাদি সহ নয়টি খাতে তাদের অর্থায়ন হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে বৈদেশিক অনুদান বা তহবিলের যথাযথ নির্দেশনা অনুসরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক এনজিও।
এনজিও ব্যুরোর বিধি মতে সংশ্লিষ্ট এনজিও গুলোর জন্য প্রযোজ্য বিদেশী অনুদান রেগুলেশনে বলা হয়েছে, “কোন এনজিও বা ব্যক্তি এ আইন বা ইহার অধীন কোন বিধি বা আদেশের লঙ্ঘন করিলে উহা এই আইনের অধীন সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক ও অশালীন কোন মন্তব্য করিলে বা রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকান্ড করিলে বা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস মূলক কর্মকান্ড অর্থায়ন, পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা সহায়তা করিলে অথবা নারী ও শিশু পাচার বা মাদক ও অস্ত্র পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকিলে উহা দেশের প্রচলিত আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে।”
একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা সরকারের নিকট উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী, নয়াপাড়া সহ ক্যাম্প গুলোতে রোহিঙ্গাদের সাথে সন্দেহভাজন দেশী বিদেশী নাগরিক ও এনজিওর গোপন তৎপরতার খবর দিয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয় ধর্মীয় অনুভূতি ও মানবিক বিষয়কে পুঁজি করে রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধ মূলক কাজে ব্যবহারের চেষ্টা চালাতে পারে।
শত শত রোহিঙ্গাদের জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, দেশী বিদেশী এনজিও গুলোতে চাকরি দেয়ায় স্থানীয় নাগরিকদের মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। এসব কারণে ভবিষ্যতে স্থানীয়, অভ্যন্তরীন ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘেœর আশংকার কথা বলা হয়েছে। একাধিক এনজিওতে প্রকল্প সমম্বয়ক পদেও রোহিঙ্গাদের চাকরি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ইডিএএস এনজিও হাকিম পাড়া ক্যাম্পে কাজের আড়ালে জামাত, শিবিরের লোকজন তাদের পক্ষে ও সরকার বিরোধী প্রচারণার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সংঘঠিত করার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। একই কাজের অভিযোগ ডোল ইন্টারন্যাশনাল, এমওএএস,এমডিএস, এসআরপিভি,আল মারকাজুল ইসলাম, মারকাজুল মুসলিমিন, গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদ সোসাইটি, এসএসটিএস,শাহবাগ জামিয়া মাদানিয়া কাশেমুল উলুম অরফানেজ,ওবাট, আবুল খায়ের ফাউন্ডেশন, হিউম্যানি টেরা, স্মল কাইন্ডস অব বাংলাদেশ বা এসকেবি সহ অর্ধশতাধিক দেশী বিদেশী এনজিওর কর্মকান্ডে নানা অভিযোগ রয়েছে বলে ঐ সূত্রে জানা গেছে।
উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এনজিওগুলোর অনিয়ম, দূর্নীতি সীমা অতিক্রম করে ফেলছে। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে রোহিঙ্গা যুবক যুবতীদের নগদ সহায়তা দিচ্ছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নানা প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশনের নামে এনজিও গুলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নানা উস্কানি দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলছে।
উখিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মজিবুল হক আজাদ বলেন, দিনের আলোতে ক্যাম্প গুলো কিছুটা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাতের অন্ধকারে কি ঘটে সেখানে সেদিকে নজর বাড়ানো প্রয়োজন। বিভিন্ন বৈধ অবৈধ এনজিও, ব্যক্তি বর্গ সেবার আড়ালে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ভাবে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে ইন্ধন দিয়ে থাকে বলে তিনি জানান। এগুলো কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে পুরো কর্তৃত্ব সরকারের কব্জায় আনার দাবী তার।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন,এনজিও এবং রোহিঙ্গাদের কর্মকান্ডে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। ২২ আগষ্ট রাতেও রোহিঙ্গারা টেকনাফের একজন যুবলীগ নেতাকে ধরে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে। ক্যাম্প গুলোতে রোহিঙ্গারা মিছিল মিটিং করার সাহস কিভাবে পায়।ওরা আশ্রিত, তবু কিভাবে রোহিঙ্গারা এগুলো করে। তাদের হাতে ডিজিটাল ব্যানার,ফেষ্টুন, প্ল্যাকার্ড, লিফলেট কিভাবে যায়, কারা এগুলো সরবরাহ করে। নিশ্চয় তাদের কাছের কুটুম এনজিওরা।রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ১৩০ টির মত এনজিও কর্মকান্ডে স্হানীয়দের পরিবর্তে দেশের বিভিন্ন স্হান থেকে সরকার বিরোধী কয়েকটি দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের ক্যাডারদের নিয়োজিত করা আছে। এরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কি করবে সহজে অনুমেয় বলে তিনি জানান।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলোর বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যে গুলোর তদন্ত চলছে। রোববার বিকেলে তার অফিসে উখিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে এ নিয়ে তিনি মত বিনিময় করেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতায় কিছু দেশী বিদেশী এনজিওর গোপন ষড়যন্ত্র, এনজিও গুলোর ব্যাপক অনিয়ম, রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় স্থানীয় সাংবাদিকদের তরফ থেকে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-