ডেস্ক রিপোর্ট- সমুদ্রকে বশে আনার চেষ্টা বহুকাল ধরে চলছে৷ অফুরন্ত ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানির উৎস হিসেবেও সমুদ্রের ঢেউ কাজে লাগানোর নানা উদ্যোগ দেখা গেছে৷ এ ক্ষেত্রে এখনো সাফল্য না এলেও বিজ্ঞানীরা হাল ছাড়ছেন না৷
ঢেউ থেকে জ্বালানির বিপুল সম্ভাবনা
সমুদ্র প্রায় ৩৬ কোটি বর্গ কিলোমিটার, অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় ৭০ শতাংশ দখল করে রয়েছে৷ সেখানে প্রকৃতির জোরালো শক্তি, বাতাসের ধাক্কায় তৈরি বিশাল ঢেউ, চাঁদের প্রভাবে জোয়ার-ভাটার খেলা চলে৷
ফলে মহা সাগরগুলি পরিবেশবান্ধব জ্বালানির বিশাল উৎস হয়ে উঠতে পারে৷ কিন্তু সেই শক্তি কাজে লাগানোর উপায় কী? মনে রাখতে হবে, জোয়ার-ভাটার টান সব জায়গায় একরকম নয়৷ ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলে সেই টান অত্যন্ত শক্তিশালী৷
অতীত প্রচেষ্টা
মধ্যযুগেই মানুষ প্রথম বার ঢেউয়ের শক্তি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিল৷ জোয়ার ও ভাটার উচ্চতার তারতম্যের ফায়দা তুলতে ঘানির চাকা বসানো হয়েছিল৷ গত শতাব্দীর ষাটের দশকে সেই আইডিয়া আবার কাজে লাগানোর চেষ্টা হয়েছিল৷ ফ্রান্সের ব্রিটানি অঞ্চলে জোয়ারভাটার শক্তি কাজে লাগাতে ইঞ্জিনিয়াররা সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন৷ পানির উচ্চতার পার্থক্য কাজে লাগাতে বাঁধের প্রাচীরে টার্বাইন বসানো হয়েছিল৷
কিন্তু ইঞ্জিনিয়াররা একটি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন৷ সমুদ্রতীরে খুব কম এমন খাঁড়ি রয়েছে, যা এমন বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত৷ তাঁরা অবশ্য হাল ছাড়েন নি৷ অন্যভাবে সমুদ্রের শক্তি কাজে লাগানোর চেষ্টা শুরু করলেন তাঁরা৷ যেমন ঢেউয়ের সাহায্য নিয়ে৷ দেখা গেল, বাতাসের ধাক্কায় ঢেউয়ের শক্তি দুই মেরুর দিকে অনেক বেশি শক্তিশালী৷
গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে স্কটল্যান্ডে বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম তৈরি করেন, যেগুলির সাহায্যে ঢেউয়ের ওঠানামার গতি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব৷ ফলে বিপুল উৎসাহ দেখা দিলো৷ বিকল্প এই জ্বালানী যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে বলে আশা জেগে উঠেছিল৷ কিন্তু সেই যুগের আইডিয়া বাস্তবে রূপান্তর করা সম্ভব হয় নি৷
চলতি শতাব্দীর প্রথম দশকে নতুন এক প্রচেষ্টা দেখা গেল, যার নাম ‘সামুদ্রিক সাপ’৷ এর আওতায় ধাতুর নলের মধ্যে ঢেউয়ের সঞ্চালনকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে৷ কিন্তু এই প্রচেষ্টাও পরীক্ষামূলক স্তরেই থেকে গিয়েছিল৷
নতুন প্রকল্প
বর্তমানে জার্মান ইঞ্জিনিয়াররা অন্য একটি প্রণালী নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছেন৷ ‘নেমোস’ নামের প্রকল্পের আওতায় ঢেউগুলি ভাসমান বস্তুকে পানির উপরিভাগে ঠেলে দেয়৷ সেই বস্তু তারের মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশে গাঁথা থাকে৷ একটি জেনারেটার সেই ট্র্যাকশনকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে৷ এ নিয়ে পরীক্ষা এখনো চলছে৷
এখনো পর্যন্ত কোনো মডেলই সাফল্য পায় নি৷ অনেক প্রোটোটাইপ বাতিল হয়ে গেছে৷ প্রযুক্তিগত বাধা এর অন্যতম কারণ৷
ঢেউয়ের উচ্চতায় বার বার পরিবর্তন ঘটে৷ কখনো নীচু, কখনো অনেক উঁচু ঢেউ জেগে ওঠে৷ ফলে ঢেউয়ের শক্তিরও পরিবর্তন ঘটে৷
সেই তারতম্য সামলাতে হলে যন্ত্রগুলির গঠন স্থিতিশীল হতে হবে৷ তাছাড়া নীচু ঢেউ দেখা দিলে অত্যন্ত কম জ্বালানি উৎপাদিত হয়৷
ঢেউয়ের শক্তি কাজে লাগাতে নানা রকম প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে৷ কিন্তু সে সব সমাধানসূত্র খুবই ব্যয়বহুল৷
সে কারণে ‘প্লেট আই’ নামের নতুন প্রচেষ্টার আওতায় টার্বাইনগুলি ব়্যাফট বা ভেলার উপর বসানো হয়েছে৷ ফলে সহজেই সেগুলি মেরামত করা সম্ভব৷
উত্তাল ও লবণাক্ত মহাসাগরের জ্বালানি ব্যবহারের পথে অনেক বাধা রয়েছে৷ নানা পূর্বাভাষ সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে সাফল্য এখনো আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে৷
তা সত্ত্বেও অনেক ইঞ্জিনিয়ার মনে করেন, সামুদ্রিক জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সাফল্য পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না৷
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-