রোহিঙ্গার ভিডিও বার্তায় ক্যাম্পের ভেতরে বাইরে উত্তেজনা বাড়ছে

বিশেষ প্রতিবেদক :

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরতে অনাগ্রহ এবং টেকনাফে যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় গত চারদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা চলে আসছিল। এমন উত্তেজনাকর মুহুর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক রোহিঙ্গা ব্যক্তির ভিডিও বার্তায় সেই উত্তেজনায় নতুন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ভিডিওটি গতকাল রবিবার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বিষয়টির ব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন ও পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কেউ উস্কানিমূলক বা গুজব ছড়িয়ে ভিডিও ছাড়লে তা আইনগত ভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রচারিত ভিডিও বার্তাটিতে বাংলাদেশ সরকারকে হেয় করার পাশাপাশি, চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনগণকে তীব্র ভাষায় ভৎসনা করা হয়েছে। তার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে রোহিঙ্গারা ভিডিওটি এন্ড্রয়েড ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ দেশবিদেশে ছড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে এই ভিডিওটি শুনার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জনগণ দেশ এবং দেশের মানুষকে হেয় করে কথা বলায় মারাত্মকভাবে ক্ষেপেছেন।

টিভি ইনসানিয়াত নামে একটি অনলাইন রোহিঙ্গা পরিচালিত চ্যানেলের লগো সম্বলিত ভিডিও বার্তায় রোহিঙ্গা ব্যক্তি নিজের নাম শেখ আলী এবং ভারতের হায়দ্রাবাদ রোহিঙ্গা সেন্টারের জকিরের ছেলে বলে জানান। তিনি দশ মিনিটের এই ভিডিও বার্তায় পুরো অংশ জুড়ে বাংলাদেশীদের মন্দভাষায় গালাগালি ও হুমকি দিয়েছেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদের উস্কানিমূলক বিভিন্ন কথাবার্তাও বলেছেন। এছাড়া গত ২২ আগস্ট টেকনাফের হ্নীলা জাদিমুড়া ক্যাম্প এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যাকান্ডের ঘটনায় স্থানীয় ক্ষুব্ধ জনতার প্রতিক্রিয়াকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ওই রোহিঙ্গা শুরুতে বলেন,‘ বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন্স থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যারা আছেন, তোমরা জাদিমুড়া রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছ, তোমাদের মত বেগারত (অকৃতজ্ঞ) কেউ নেই। তোমরা রোহিঙ্গাদের উপর ভর করে রোহিঙ্গাদের সাথে ব্যবসায় বাণিজ্য করে আয় রোজগার করে আজকে তোমাদের একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী, পুরাতন রোহিঙ্গাকে হত্যার বাহানা দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছ।’

ভিডিও বার্তায় এক অংশে তিনি বলেন, ‘ তোমরা কি মনে করেছে তোমাদের বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মানবতার খাতিরে স্থান দিয়েছে ? তোমাদের সরকার রোহিঙ্গাদের জায়গা দেওয়ার জন্য দুনিয়া (দাতা দেশ) থেকে মাথাপিছু হিসেব করে টাকা নিয়েছে। তোমরা যে ব্যক্তির হত্যার ঘটনায় রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছ, সে কি আল্লাহর ওলি অথবা মসজিদের ইমাম ছিল ? তার জন্য কেন তোমরা রোহিঙ্গাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়েছে।

রোহিঙ্গা ব্যক্তি শেখ আলী ভিডিও বার্তার শেষ অংশে বলেন, ‘ তোমরা ভারতের হিন্দু ও আমেরিকা ইহুদি জাতির চেয়ে রোহিঙ্গাদের উপর বেশি জুলুমবাজ। তোমরাদের সাথে মিয়ানমারের মগ ও সামরিক বাহিনীর সাথে কোন পার্থক্য নেই। চট্টগ্রাম এলাকার বাংলাদেশীরা এক নম্বর শোষক (গাদ্দার)।

এদিকে গত কয়েকমাস আগে মালয়েশিয়া থেকে মোঃ খালিদ নামে আরেক রোহিঙ্গা যুবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্যে করে হুমকি সরূপ কথাবার্তা বলে একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করেছিলেন। ওই ভিডিও বার্তাটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বাংলাদেশের জনগণ এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। তবে ওই রোহিঙ্গা যুবকে কিছুদিন আগে মালয়েশিয়া পুলিশ আটক করে বলে জানা যায়।

টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষক মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিপদের সময় প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, এদেশে আশ্রয় দিয়েছিল, মাত্র দুই বছরের মাথায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের সেই অবদান ভুলে গেছে। শুধু তাই নয় তারা এখন বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ এবং দেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলছেন। যে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে, তা রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীদের মুখোমুখি করার একটি অপচেষ্টা। শেখ আলী নামের ওই ব্যক্তির ব্যাপারের সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।’
এদিকে গত ২২ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হওয়ায় রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ক্যাম্পে উল্লাস আনন্দ প্রকাশ করে। তারই অংশ হিসেবে টেকনাফের জাদিমুড়া ২৭ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উগ্রবাদি রোহিঙ্গাদের স্বশস্ত্র একটি দল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উল্লাস করার সময় গত বৃহস্পতিবার রাতে ওমর ফারুক নামে যুবলীগ নেতাকে অপরহণ করে পাহাড়ের টর্চার সেলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদ জানিয়ে সড়ক অবরোধ ও সড়কে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

পরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করেন। মুলত ওই ঘটনার পর থেকে রোহিঙ্গাদের পরিচালিত ‘রোহিঙ্গা ভিশন’ নামের একটি অনলাইন টিভি সহ একাধিক অনলাইন টিভি চ্যানেল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন করতে থাকে। যাতে বাঙালী ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভবিষ্যতে উত্তেজনা বাড়ার আশংকা রয়েছে এবং প্রচারিত মিথ্যা সংবাদের বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্ব দরবারে মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হওয়ার আশংকা রয়েছে।

আরও খবর