শাহরিয়ার হাসান, বার্তা২৪
দুই বছর আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লাখো রোহিঙ্গা। কক্সবাজার জেলার তিন উপজেলায় আশ্রয় নেওয়া এই রোহিঙ্গারা এখন দেশের জন্য বিপজ্জনক। বিশেষ করে রোহিঙ্গা যুবকরা। কোনোভাবেই যেন তাদের লাগাম টেনে ধরে রাখতে পারছে না দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো যেন অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ইয়াবা ব্যবসা, মানব পাচার, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, খুন, গুম, ধর্ষণসহ নানা অপরাধের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত এই রোহিঙ্গা যুবকরা।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদ ওমর ফারুক (৩০) নামের স্থানীয় যুবলীগের এক নেতা খুন হন। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমোরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, এই খুনের সঙ্গে রোহিঙ্গা দুই যুবক সরাসরি জড়িত।
এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ পর্যন্ত ৩৮ জন খুন হয়েছেন।
অন্যদিকে বিভিন্ন উপায়ে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গারা। তাদের কেউ কেউ আবার সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
অনেকে আবার বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে বাংলাদেশিদের সঙ্গে মিশে গিয়ে কৌশলে পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সূত্র বলছে, সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের পৃথক ২৭টি অভিযানে গত দুই মাসে প্রায় ৭০০ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে।
তবে শুধু সাগর পথে না, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বৈধভাবে বিদেশ পাড়ি দেওয়ারও চেষ্টা করছে তারা। গত ১০ মে রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে পালানোর সময় ২৩ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে র্যাব। তবে সবচেয়ে বেশি এমন ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজার জেলা পাসপোর্ট অফিসে।
কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম নাসিম বলেন, পাসপোর্টের জন্য রোহিঙ্গাদের করা প্রায় ৪০০ টি আবেদন আমরা জব্দ করেছি।
অন্যদিকে রোহিঙ্গা যুবকদের টার্গেট করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো। ভয় ডরহীন এই যুবকদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে জামা‘আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লা বাংলা টিম মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকা একাধিক আইনশৃঙ্খলার বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তার সূত্রে এই সব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
একই কথা বলেছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা যুবকদের মধ্য যারা তুলনামূলক শিক্ষিত ও ধর্মীয় জ্ঞানসম্পন্ন তাদের টার্গেট করছে জেএমবির সদস্যরা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ অবশ্য বলেন, টেকনাফের চারটি ও উখিয়ার ২৪টি ক্যাম্পকে আট ভাগ করে প্রতিটি অঞ্চলের জন্য একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে আট সদস্যের পুলিশ টিম কাজ করছে। রোহিঙ্গা যুবকরা বেপরোয়া হতে চাইলে বা জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে হাত মেলাতে চাইলে আমরা সে সুযোগ দিবো না। তবে জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা নিয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই।
রোহিঙ্গাদের বিপজ্জনক হয়ে উঠার বিষয়ে পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, রোহিঙ্গারা শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। কক্সবাজার জেলার বাইরে শুধু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার জন্য প্রায় এক হাজার ১০০ পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তারপরও রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-