ডেস্ক রিপোর্ট – রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে চীনের দু’জন ও মিয়ানমারের একজন কর্মকর্তা কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার তারা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করবেন এবং পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করবেন। এছাড়া মিয়ানমারে ওপারে দেশটির একটি উচ্চ পর্যায়ের দল অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম এই বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। এদের সঙ্গে রয়েছেন ১৯৮২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নানা অজুহাতে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্যে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া অন্তত সাড়ে ৩ লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে অবস্থান করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের জানুয়ারি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। একই বছরের ৬ জুন নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে আবারও হামলার মুখে পড়ার আশঙ্কায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানানোয় ব্যর্থ হয় ওই উদ্যোগ।
সর্বশেষ জুলাই মাসে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে নতুন করে উদ্যোগের অংশ হিসেবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। ১৫ সদস্যের দলটি দুই দিন ধরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা ও বৈঠক করে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম জানিয়েছেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সার্বিক পরিস্থিতি জানার জন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের দূতাবাসের দুইজন ও মিয়ানমারের একজন কর্মকর্তা কক্সবাজারে এসেছেন। তারা তাদের মতো করে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন। এছাড়া মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে সে দেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল অবস্থান করবেন বলে শুনেছি। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার প্রত্যাবাসনের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
আবুল কালাম আরও বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের আধিবাসীহিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। আমরা এই তথ্যটি রোহিঙ্গাদের জানিয়েছি। এছাড়া মিয়ানমার সরকারের দেওয়া ছাড়পত্র অনুযায়ী ১ হাজার ৩৭টি পরিবারের মোট ৩ হাজার ৫৪০ জনকে ফেরত নেওয়ার প্রথম তালিকাটি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত দুইদিনে ২৩৫টি রোহিঙ্গা পরিবারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাদের অনেকে সম্মতি দিয়েছেন মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য। তবে কতজন রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন হবে সেটি এখন জানা যাচ্ছে না। রাতে এসব রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজ তৈরি করার পর সকালে বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-