রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রস্তুত ট্রানজিট ক্যাম্প, ৬১ এনজিও’র আপত্তি

শফিক আজাদ, উখিয়া :

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ-মিয়ানমার। এ নিয়ে উভয়দেশের ট্রানজিট ক্যাম্প গুলোকে তৈরী করা রাখা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২২ আগস্ট (আজ বৃহস্পতিবার) রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আর কোন বাধা নেই। তবে একটি মহল প্রত্যাবাসন ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

দ্বিতীয় বারের মত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যার্পন উদ্যোগ বাধাগ্রস্থ করতে শেষ মূহুর্তে এসে রোহিঙ্গা সেবায় নিয়োজিত দেশী বিদেশী ৬১ টি এনজিও’র যৌথ বিবৃতিতে তালগোল পাকানোর অবস্থা হয়েছে ক্যাম্প গুলোতে। এ যেন আগুনে ঘি ঢালার মত। প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্টরা পূর্ব নির্ধারিত ২২ আগষ্ট বৃহস্পতিবারকে লক্ষ্য করে প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে।

২২ আগষ্ট বৃহস্পতিবার দিনের যে কোন সময় রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি নিজ দেশ মিয়ানমার ফেরত যাওয়ার কথা রয়েছে। যাছাইকৃত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ ও গ্রহণ করতে মিয়ানমারের প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে জানা গেছে।রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর খবরে ¯হানীয় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি দেখা দিয়েছে।

কিন্তু রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ও কতিপয় এনজিও এ নিয়ে তেমন সন্তুষ্ট হতে পারছে না। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যার্পনের ব্যাপারে যখন দুই দেশ সহ সংশ্লিষ্টরা মোটামুটি প্রস্তুত। তখনই মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সঙ্কটের কথিত অবনতির ধূঁয়ো তুলে বিবৃতি দিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন,অ্যাকশন এইড, ওয়াল্ড ভিশনসহ ৬১টি এনজিও। তারা নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় শরণার্থীদের জড়িত করার আহ্বান জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর খবরে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।এতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে এখন যে অবস্থা তা নিরাপত্তা ও অধিকারের নিশ্চয়তা দেয় না। তৎপ্রেক্ষিতে ওই ৬১টি এনজিও চারটি সুপারিশ উত্থাপন করেছে।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, বিদেশী এনজিও গুলোতে ১২ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ৮৫/৯০ হাজার টাকা বেতনের নিয়মিত চাকরিরত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৫/৬ হাজারের মতো। সহজেই এদের দিয়ে ওরা মিয়ানমার ফেরত না যেতে রোহিঙ্গাদের নানা ভাবে উস্কানি ও প্ররোচিত করার নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। এসব চাকরিরত রোহিঙ্গাদের মাসিক বেতনের একটি নির্ধারিত অংশ তাদের কতিপয় সন্ত্রাসী সংগঠনকে দিতে হয় বলে জানান উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী।

নয়াপাড়া -২৬ নং ক্যাম্পের যাছাইকৃত তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা আবু ছিদ্দিক (৭৫), রশিদ আহমদ (৭০) শেষ বয়সে যেন নিজেদের পূর্ব পুরুষের ভিটে মাটিতে ফিরে যেতে পারে সে আখাংকা প্রকাশ করেন। তাদের মাঝে নিজ মাতৃভূমি রাখাইনের জন্য মন জ্বলছে। কারণ সেখানে তাদের পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি, বসত ভিটা, জীবন জীবিকা, বেড়ে উঠা সব কিছু। বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরের মত পরিবেশ তাদের কাছে অচেনা।

বুধবার(২১ আগষ্ট) রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ফেরত পাঠানোর নির্ধারিত টেকনাফের নাফনদী সংলগ্ন জ্বলপথের কেরুনতলী ঘাট ও উখিয়া সংলগ্ন ঘুমধুম স্থল পথ সীমান্ত ঘাটের প্রস্তুতি সম্পন্ন হতে দেখা গেছে। কেরুনতলীতে উদ্বাস্তু প্রর্ত্যাপনের ট্রানজিট ক্যাম্পের ১১টি টিন শেড ব্যারাক ঘর রয়েছে।

প্রতিটি ব্যারাকে তিনটি করে ৩৩টি ঘর নির্মাণ করা আছে। এদিকে উখিয়ার কুতুপালং টিভি রিলে কেন্দ্রের বিপরীতে ঘুমধুমে নির্মিত অপর ট্রানজিট ক্যাম্পও প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে। এখানে ১৬টি শেডে ৫৭টি ঘর নির্মাণ রয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অবকাঠামোও প্রস্তুত। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ রাখাইনে ফেরত গমনোচ্ছু কোন রোহিঙ্গাকে ট্রানজিট ক্যাম্পে আনা হয়নি। তবে বৃহস্পতিবারের প্রত্যাবাসন নিয়ে স্পষ্ট কেউ কিছু বলছেন না।

কক্সবাজার শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ আবুল কালাম এনডিসি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্রিফিংয়ে জানান, ‘প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের জন্য আমাদের সকল ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা আশাবাদী ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসন হবে। গত দুই দিন ধরে সরকারি কর্মকর্তা, ইউএনএইচসিআর সহ সংশ্লিষ্টরা তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাতকার নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ২৩৫ পরিবার রোহিঙ্গার মতামত নেয়া হয়েছে। প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্টরা বসে সিদ্ধান্ত নেবে কোন প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে।

আরও খবর