কক্সবাজার জার্নাল ডটকম :
শর্ত না মানলে আগামী ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসিত হয়ে যেতে রাজি নয় মিয়ানমারের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গারা। এরআগে, ৩হাজার ৫৪০ রোহিঙ্গার তালিকা পাঠায় মিয়ানমার। যারা সেদেশের বলে চিহ্নিত করে মিয়ানমার। এসব রোহিঙ্গাকে নিয়ে প্রথম ধাপে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রক্রিয়া চলছিল।
কিন্তু মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের ২৬ নম্বর ক্যাম্পে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে রোহিঙ্গাদের মতামত নেয়ার কার্যক্রম। রোহিঙ্গার মতামত নেয় ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন ও ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা। এসব প্রতিনিধিকে ‘শর্ত না মানলে যাবে না’ বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
ক্যাম্পে মতামত দিয়ে বেরিয়ে আসেন শামসুল আলম। তিনি বলেন, মতামত দেয়ার কথা সংস্থার প্রতিনিধিরা আমাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে আসেন। পরে ২৬ নম্বর ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হয় মতামত গ্রহণ।
তিনি আরও বলেন, নাগরিক অধিকার, নিরাপত্তাসহ যে কয়েকটি শর্ত দেয়া হয়েছে সেগুলো না মানলে আমরা কখনও মিয়ানমার ফিরবো না। মিয়ানমার আমাদের চিহ্নিত করেছে, সেটা ঠিক আছে।’
কোন প্রতিনিধি যাওয়ার জন্য জোর করেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শামসুল আলম জানান আমরা শুধু শর্তের কথা জানিয়েছি। তারপর বেরিয়ে আসি।
মতামত দিয়ে বের হওয়া শালবন ক্যাম্পের ডি-২’র বাসিন্দা আবু ছিদ্দিক বলেন, আমরা সেই পুরনো দাবিগুলো তুলে ধরেছি। নাগরিকত্ব ও মিয়ানমারের ১৩০ জাতি রয়েছে তাদের মধ্যেও আমরা নেই। সেই দাবিগুলো পূরণ হলে ফিরব।
আরেক রোহিঙ্গা মো. সলিম বলেন, দাবি না মানলে ফিরে যাওয়া কঠিন হবে। কারণ নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব ছাড়া সেখানে গেলে আবারো সহিংস হতে পারে মিয়ানমার। তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রত্যাবাসনের ঘোষণা দিয়েছে। এটা তাদের একটা চক্রান্ত।
এদিকে রোহিঙ্গাদের মতামত নেন ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তা এডম নর্ড, সিআইসি মো. খালেদ হোসেনের নেতৃত্বে ১০টি গ্রুপ।
এরআগে, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গারা যদি স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হয় তাহলে আমরা চূড়ান্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করবো। তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছুই করবো না আমরা। তাই তাদের মতামত নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। পুরনোসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি শিবিরে এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
জাতিগত নিধন ও গণহত্যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-