ফিলিস্তিন ট্র্যাজেডি নিঃসন্দেহে মুসলমানদের জীবনের একটি করুণ অধ্যায়। মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মোকাদ্দাস। কিন্তু এখন তা আর মুসলমানদের হাতে নেই। কমপক্ষে এক লাখ নবী-রাসূলের স্মৃতিবিজড়িত ফিলিস্তিন ইহুদিদের দখলে।
এ কথায় সামান্যতম সন্দেহ নেই যে, মুসলিম জাতি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়। আর এটাও সর্বজন স্বীকৃত বিষয় হলো- দুনিয়ার বুকে কোনো ধর্ম মুসলমানদের ধর্মের সমকক্ষ নেই। কিন্তু এসব ভেবে, মৌখিকভাবে নিজেদের মুসলমান হওয়ার দাবি করে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না।
কোরআন-হাদিস ও ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মুসলমানদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য দু’টি শর্ত আছে।
এক. সঠিক অর্থে মুসলমান হয়ে জীবনের প্রতিটি স্তরে নিজেকে ইসলামের অনুসারী বানিয়ে নেয়া।
দুই. উন্নতির বাহ্যিক উপকরণ ও উপাদান সংগ্রহ করা। এ দু’টি জিনিসের মধ্যে মুসলমানদের উন্নতি ও সাফল্যের রহস্য লুক্কায়িত।
আর উন্নতির বাহ্যিক উপকরণ ও উপাদানের অন্যতম হলো শিক্ষা ব্যবস্থা। ইসরাইলি আগ্রাসনের শিকার হওয়া সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের মুসলমানরা শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন। এখন ফিলিস্তিনের পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর এবং গাজা উপকূলের প্রায় ১.২৫ মিলিয়ন শিক্ষার্থী স্কুলে যায়।
শিক্ষার শুরুতে তারা সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন শেখে। অনেক আগ্রহী শিক্ষার্থী কোরআন মুখস্থও করে। ফিলিস্তিনের সমাজের ছেলে হোক বা মেয়ে হোক অল্প বয়সে কোরআন শিক্ষা ও মুখস্থ তাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। এটা নিয়ে তারা গর্বও করে থাকে।
ইসরাইলি আগ্রাসনের শিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ফিলিস্তিন। সর্বদা আতঙ্ক, বুলেট-বোমার আওয়াজ, স্বজন হারানোর বেদনা ও হাজারো অনিশ্চয়তার মুখে জীবন বাঁচানোর সংগ্রামে যাদের দিনরাত অতিবাহিত হয়। সেই সমাজের ছোট্ট শিশুদের কীর্তি আলোচিত হয় একটু বেশিই।
এমনই এক অনন্য কীর্তি গড়লেন ফিলিস্তিনের যমজ চার বোন। জীবন সংগ্রামের সঙ্গে সঙ্গে কোরআনে কারিম হেফজের (মুখস্থ) সংগ্রামেও জয়ী হয়েছেন তারা।
এক সঙ্গে জন্মলাভকারী ফিলিস্তিনি চার বোন একসঙ্গে পবিত্র কোরআন হেফজ করে রচনা করলেন নতুন ইতিহাস।
ফিলিস্তিনের অধিবাসী ১২ বছর বয়সী দীনা, দীমা, সুজান এবং রাজান শানিতী নামে যমজ এই চার বোন পুরো কোরআন মুখস্থ করে অনন্য কীর্তি গড়েছেন।
তারা ফিলিস্তিনের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেরুজালেমের ‘উম্মুল তুবা’ নামক গ্রামে বসবাস করেন।
তাদের বাবা যুদ্ধে পা হারিয়ে স্থানীয় বাজারে ফলের ব্যবসা করেন। মায়ের তত্ত্বাবধানে তারা এমন কীর্তি গড়েন।
হাফেজ হওয়ার পর তাদেরকে বিশেষ সম্মাননাও জানানো হয়েছে। ওই সম্মাননা অনুষ্ঠানে সবার বড় বোন সুজান বলেন, ‘আমাদের কোনো ভাই নেই। আম্মার খুব ইচ্ছা ছিলো, আমরা যেন কোরআন মুখস্থা করি। তিনি প্রায় আমাদের শিক্ষককে বলতেন, আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। ওরা কোরআনের হাফেজ হলে আমার কোনো দুঃখ থাকবে না। আজ আমরাও খুশি- আম্মাকে খুশি করতে পেরে।’
সম্মাননা অনুষ্ঠানে তারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী এ কথা জানার পর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই চার বোনকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। অনেকে তাদের উচ্চ শিক্ষার দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা ঘোষণা দিয়েছেন, এই চার বোনের শিক্ষার সব দায়িত্ব তারা বহন করবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-