ইতিহাস তাহলে ফিরে ফিরে আসে!
অন্তত নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু এবং শেষের হিসেবে মেলাতে বসলে ক্রিস গেইলও মানবেন ইতিহাসের এই সত্যটা।
আজ থেকে ১৯ বছর আগে পোর্ট অব স্পেনে ক্রিস গেইলের টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিলো। সেই মাঠে আজ বুধবার, ১২ আগস্ট জীবনের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামছেন তিনি।
যে মাঠে টেস্টের শুরু। সেই মাঠেই ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষ! ইতিহাসের কাছে এমনভাবে সবাই ফিরে যেতে পারে না। গেইল ফিরছেন।
এবারের বিশ্বকাপের আগেভাগেই জানিয়েছিলেন-এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ, শুধু তাই নয়-সব ধরনের ক্রিকেট থেকেই অবসর নেবেন; সেটাও বেশ সাড়া শব্দ করে জানিয়েছিলেন।
বিশ্বকাপের পর তার সিদ্ধান্তটা বদলে যায়। হঠাৎ জানিয়ে বসেন-ভারতের বিপক্ষে দেশের মাটিতে সিরিজটা তিনি খেলতে চান। বিদায়টা সেখান থেকেই নিতে চান বলেই নিজের অবসরের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন গেইল। শুধু তাই নয়, পাঁচ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেটে না খেলা গেইল জানান- ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও খেলার ইচ্ছে আছে তার। সিরিজের শেষ টেস্ট ম্যাচটা হবে জ্যামাইকার কিংসটাউনে। জ্যামাইকা গেইলের জন্মভূমি।
নিজ শহরের মাঠ থেকে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটকে গুডবাই বলার একটা ইচ্ছে ছিলো তার। কিন্তু সেই ইচ্ছেটা অপূর্ণ রয়ে যাচ্ছে তার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নির্বাচকরা তাকে টেস্ট দলে রাখেননি। পাঁচ বছর টেস্ট না খেলা কোনো ব্যাটসম্যানকে তো আর হঠাৎ করে একটা সিরিজে শুধু তার মনের ইচ্ছে পুরুণের জন্য খেলিয়ে দেয়া যায় না! তবে গেইলের বিদায়ের জন্য তাকে ওয়ানডে দলে খেলার সুযোগটা ঠিকই করে দিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তিন ম্যাচের ওয়ানডের সেই সুযোগের শেষ ম্যাচটা আজ বুধবার ১২ আগস্ট রাতে পোর্ট অব স্পেনে খেলতে নামছেন গেইল।
বিদায়ই ইনিংসটা কেমন হবে তার? চলতি সিরিজে ব্যাট হাতে ক্রিস গেইলের যে পারফরমেন্স তাতে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার উপায় নেই। পেছনের দুই ম্যাচে রান তার যথাক্রমে ৪ ও ১১।
তবে শেষ ইনিংসে ক্রিস গেইল যাই রান করেন না কেন-ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট ইতিহাস তাকে একটা দেশের ‘গ্রেট ক্রিকেটারদের’ মর্যাদা ঠিকই দিয়েছে। হয়তো ব্যাটিংয়ে টেকনিক্যালি অত দক্ষতা তার নেই। কিন্তু ব্যাট হাতে যে ক্রিকেট মাঠে বিনোদন দেয়ার যে উপলক্ষ তিনি তৈরি করে দিতে পেরেছেন সেটা ক’জনা পারে? আর তাই নিজের নাম উচ্চারণের সময় ক্রিস গেইল সগর্বে বলেন-‘আই অ্যাম দ্য এন্টারটেইনার!’
টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাট হাতে দু’হাত উঁচিয়ে ক্রিস গেইল যখন দাবি করেন-‘আই অ্যাম দ্য ইউনিভার্সেল বস!’ তখন পুরো বিশ্ব তার সেই দাবিটা বিনাবাক্য ব্যয়ে মেনে নেয়। টি-টুয়েন্টির ক্রিকেটে রেকর্ডটাই তার অমন এভারেষ্টসম! রেকর্ডের সেই উচ্চতা থেকে ক্রিস গেইলকে দেখাচ্ছে পুরো দৈত্যাকৃতির। বাকিরা লিলিপুট!
ওয়ানডে ক্রিকেটেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে প্রায় সব রেকর্ডের মালিক ক্রিস গেইল। দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ। সবচেয়ে বেশি রান। সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি এমনকি সবচেয়ে বেশি শূন্যের (২৪টি) রেকর্ডটি তারই!
টি-টুয়েন্টিতেও ক্রিস গেইল ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সেরা। সবচেয়ে বেশি ম্যাচ। সবচেয়ে বেশি রান। দুটি সেঞ্চুরির মালিক। এখন পর্যন্ত গেইল ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের আর কোনো ব্যাটসম্যানের আর্ন্তজাতিক টি-টুয়েন্টিতে সেঞ্চুরি নেই। সবচেয়ে বেশি ফিফটি (১৩) তার। সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড (১০৬) ও তারই।
১০৩ টেস্টের ক্যারিয়ারও তার বেশ সমৃদ্ধ। ১৫টি সেঞ্চুরির মধ্যে আছে দুটো ট্রিপল সেঞ্চুরি। টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুটি ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ড আছে শুধু ব্রায়ান লারা ও ক্রিস গেইলের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট ইতিহাসে একজন সত্যিকারের ম্যাচ উইনারের তালিকা তৈরি করলে সেখানে অতি অবশ্যই ক্রিস গেইলের নাম রাখতে হবে।
গেইল ব্যাট হাতে যেদিন খেলেন, সেদিন গ্যালারির দর্শকদের কাছ থেকে শুধু হাততালি শোনা যায়। প্রতিপক্ষের বোলারদের শুকনো মুখের দেখা মিলে। ফিল্ডারদের কাজ হয়ে দাড়ায় শুধু বল কুড়িয়ে আনা।
ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচেও কি সেই ‘ধামাকা’ দেখাচ্ছেন ক্রিস গেইল?
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-