বছর ঘুরে আমাদের জীবনে আবার ফিরে এসেছে পবিত্র ঈদুল-আযহা। মহান আল্লাহ বছরে আমাদের জন্য দুইটি শ্রেষ্ঠ আনন্দের দিন উপহার দিয়েছেন। এর একটি ঈদুল ফিতর, অপরটি ঈদুল আযহা। দুই ঈদেরই রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ঈদুল আযহা ত্যাগ ও কুরবানির বৈশিষ্ট্যে মন্ডিত। এর সাথে জড়িত রয়েছে হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.) এর মহান ত্যাগের নিদর্শন। এই ত্যাগের মূলে ছিল আল্লাহর প্রতি ভালবাসা এবং তার সন্তুষ্টি অর্জন।
পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে কক্সবাজার জেলাবাসীসহ দেশবাসী ও কক্সবাজার জার্নাল ডটকমের পাঠক, শুভানুধ্যায়ী ও বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রতি রইল ঈদ মোবারক ও শুভেচ্ছা।
শুভেচ্ছান্তে —
সম্পাদক -কমরুদ্দিন মুকুল
নির্বাহী সম্পাদক – গিয়াস উদ্দিন ভূলু
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক -সাইফুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক -আবদুল্লাহ আল আজিজ
ঈদুল আজহা
(আরবীতে:عيد الأضحى) ইসলাম ধর্মাবলম্বিদের সবচেয়ে বড় দুইটি ধর্মীয় উৎসবের একটি। বাংলাদেশে এই উৎসবটি কুরবানির ঈদ নামে পরিচিত। ঈদুল আযহা মূলত আরবী বাক্যাংশ।এর অর্থ হলো ত্যাগের উৎসব।[১] আসলে এটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ত্যাগ করা। এ দিনটিতে মুসলমানেরা তাদের সাধ্যমত ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী উট, গরু, দুম্বা কিংবা ছাগল কোরবানি বা জবাই দেয়।
ঈদুর আযহার ইতিহাস
ইসলামের বিভিন্ন বর্ননা অনুযায়ী, স্রষ্টা বা আল্লাহ ইসলামের নবী ইব্রাহীমকে স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কুরবানী করার নির্দেশ দেন। এই আদেশ অনুযায়ী ইব্রাহিম তার সবচেয়ে প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করার জন্য প্রস্তুত হলে স্রষ্টা তাকে তা করতে বাধা দেন এবং পুত্রের পরিবর্তে পশু কুরবানীর নির্দেশ দেন। এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মালম্বীরা প্রতি বছর এই দিবসটি পালন করে। হিজরি বর্ষপঞ্জি হিসাবে জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৩ দিন ধরে ঈদুল আজহা চলে। হিজরী চান্দ্র বছরের গণনা অনুযায়ী ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার মাঝে ২ মাস ১০ দিন ব্যবধান থাকে। দিনের হিসেবে যা সবোর্চ্চ ৭০ দিন হতে পারে।
পশু কুরবানি
ইসলাম মতে যার যাকাত দেয়ার সামর্থ্য আছে তাঁর ওপর ঈদুল আযহা উপলক্ষে পশু কুরবানি করার নির্দেশ রয়েছে। ঈদুল আযহার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুইদিন পশু কুরবানির জন্য নির্ধারিত। বাংলাদেশের মুসলমানরা সাধারণত গরু বা খাসী কুরবানি দিয়ে থাকেন। এক ব্যক্তি একটি গরু বা খাসি কুরবানি করতে পারেন। তবে গরুর ক্ষেত্রে ভাগে কুরবানি করা যায়। ৩, ৫ বা ৭ ব্যক্তি একটি গরু কুরবানিতে শরীক হতে পারেন। কুরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে ১ ভাগ গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে ও ১ ভাগ আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করার পর তৃতীয় ১ ভাগ নিজেদের খাওয়ার জন্য রাখা যায়। কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ দান করে দেয়ার নির্দেশ রয়েছে।
কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্তসমূহ
১. মুসলমান হওয়া,সুতরাং অমুসলিম ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
২. মুকীম/স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া/যেকোন জায়গায় ১৫ দিনের বেশির নিয়তের অবস্থান করা, সুতরাং মুসাফিরের/১৫ দিনের কম নিয়তে সফরকারী ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
৩. ধনী বা নিসাব পরিমাণ(সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা সে পরিমান অর্থসম্পদের মালিক হওয়া) অর্থাৎ যে পরিমান সম্পদ থাকলে সাদক্বাহ-ই ফিতর ওয়াজিব হয় সে পরিমান সম্পদ থাকলে তার উপর কুরবানীও ওয়াজিব।
৪. স্বাধীন হওয়া ,সুতরাং ক্রীত দাস-দাসীর উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
[দলীলঃ-“বাহারে শরীয়াত”]
৫. মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, তবে নফল হিসেবে করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে। হজ্ব পালনকারী যদি মুসাফির হয় তবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।কিন্তু মুকীম হলে ওয়াজিব।যেমন-মক্কায় অবস্থানকারী হয়ে মুকীম হলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।
[দলীলঃ- “দুররে মুখতার”, “রদ্দুল মুহতার” ও “বাহারে শরীয়ত”]
৬. গরু,মহিষ ও উট এই তিন প্রকার পশুর একটিতে সাত ব্যক্তি পর্যন্ত শরিক হয়ে কুরবানী করা যাবে।তবে কুরবানীর জন্য পূর্বশর্ত হল,কারো অংশ যেন এক সপ্তাংশ থেকে কম বেশী না হয়।যদি কোন শরিকের অংশ এক সপ্তাংশ হতে কম হয়।তখন কারো কুরবানী হবে না।একটি গরুতে চার,পাঁচ,ছয় জন শরিক হতে পারে।এ ক্ষেত্রে সকলের অংশ সমান হওয়াটা পূর্বশর্ত।
[দলীলঃ- “দুররে মুখতার”,“রদ্দুল মুহতার”ও“বাহারে শরীয়ত”]
৭. গরু কুরবানীতে কাউকে শরিক করলে গোশত ওজন করে বন্টন করাই বাঞ্ছনীয়,অনুমান করে নয়। হতে পারে কেউ বেশি বা কম পাবে তবে তা নাজায়েয।
[দলীলঃ-“বাহারে শরীয়াত”]
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-