কক্সবাজারে জমতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট

শাহীন মাহমুদ রাসেল :

ঈদ-উল আজহাকে সামনে রেখে কক্সবাজারে জমতে শুরু করেছে পশুরহাট। তবে বেচাকেনা সেভাবে জমেনি। খামারী ও কৃষকরা বিভিন্ন পশুরহাটে যাচ্ছেন কোরবানির গরু-ছাগল নিয়ে। ভারতীয় গরু নিয়েও হাটে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এবার কক্সবাজারের বিভিন্ন পশুরহাটে ভারতীয় গরুর আমদানি এখনো কম। তবে ভারতীয় মহিষের আমদানি মোটামুটি। পশুরহাটগুলো জমিয়ে তুলতে ইজারাদাররা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজারে কুরবানির পশুরহাটগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে খরুলিয়া বাজার, ঈদগাঁহ বাজার, মরিচ্যা বাজার, রামু বাজার, কলঘর বাজার, টেকনাফ, উখিয়া বাজার, গর্জনিয়া বাজার এবং চকরিয়ার গরু বাজারসহ ৩০টি পশুর হাট রয়েছে। এসব হাটের মধ্যে আয়তন ও বেচাকেনায় সদরের খরুলিয়া বাজার সব চেয়ে বড়।

বুধবার খরুলিয়া বাজারে দেখা যায়, গরু, মহিষ ও ছাগলের নিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। এবার কুরবানিতে প্রাধান্য পাবে স্থানীয় খামারে পালিত দেশি জাতের গরু-ছাগল। সেদিকে খেয়াল রেখেই হাটে পশু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। হাটে পশু আসতে শুরু করলেও এখন পর্যন্ত ক্রেতারা দলবেঁধে আসেনি। তবে যারা কিনতে আসছেন তারা শুরুতে দাম একটু বেশি বলে জানিয়েছেন। ওইদিন খরুলিয়া বাজারে ঈদগাঁহ থেকে গরু নিয়ে আসা মফিদুল ইসলাম ৬টি গরু নিয়ে আসেন। প্রতিটির দাম হাকেন ৫৫ হাজার থেকে শুরু করে ৮৫ হাজার পর্যন্ত।

সংশ্লিষ্ট হাটের ইজারাদার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারও কুরবানিতে প্রাধান্য পাবে স্থানীয় খামারে পালিত দেশি জাতের গরু-ছাগল। কক্সবাজারে এবার চাহিদার চেয়ে প্রায় ৭০ হাজার বেশি কুরবানির পশু থাকায় দাম নাগালের মধ্যে থাকবে বলে আশা করছেন তারা।

প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও খামারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদ-উল আজহাকে সামনে রেখে এবারও কক্সবাজারের খামারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে গবাদিপশু লালন পালন করা হচ্ছে। গো-খাদ্যের দাম বেশি থাকায় এবার খামারীদের খরচ একটু বেশি পড়ছে। ফলে গতবারের তুলনায় এবার গরু-ছাগলের দাম একটু বেশি পড়বে বলেও জানান তারা।

গতবছর কক্সবাজারে চাহিদার চেয়ে কুরবানির পশুর পরিমাণ বেশি ছিল। যে কারণে শেষের দিকে এসে অনেক খামারীকে লোকসান দিয়ে পশু বিক্রি করতে হয়েছে। এরকম বেশকিছু খামারী লোকসানের কারণে এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। যারা অধিক খরচ করে খামার টিকিয়ে রেখেছেন, তারা এবার লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন কিনা এ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কক্সবাজারে কুরবানির বড় পশুহাটগুলোর মধ্যে রয়েছে খরুলিয়া বাজার, ঈদগাঁহ বাজার, মরিচ্যা বাজার, উখিয়া বাজার, রামুর বাজার ও চকরিয়া বাজার।

কক্সবাজারের সবচেয়ে বড় খরুলিয়া বাজারের গরু ব্যবসায়ীরা বলেন, মাংসের বাজার হিসাবে কোরবানির গরুর দাম এখনো কমই রয়েছে। তারা বলেন, ছোট আকৃতির গরু এখন ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় মিলছে, মাঝারি আকৃতির গরুর দাম ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে এবং বড় গরু ৯০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।

খরুলিয়া বাজারের ইজারাদার শালেক বলেন, কয়েক মাস হলো ভারত থেকে গরু আসছে কম। বর্তমানে ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রামসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন খামার থেকে কোরবানির গরু আসতে শুরু করেছে। তবে এখনও দাঁতালো (কোরবানির উপযোগী) গরুর সংখ্যা কম। ফলে বেচাকেনা শুরু হলেও জমে ওঠেনি। বেশিরভাগ ক্রেতা হাটে এসে দরদাম হাঁকিয়ে কোরবানির বাজার বোঝার চেষ্টা করছেন। যাদের বাসায় গরু রাখার জায়গা আছে, কেবল তারাই এখন দামে সুবিধা হলে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও খরুলিয়া বাজারে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের নিরাপত্তায় বাড়তি ব্যবস্থা নিবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। খরুলিয়ায় পশু চিকিৎসকও রয়েছেন। এছাড়া হাটে জাল টাকা শনাক্তের জন্যও মেশিনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। চলতি সপ্তাহ থেকেই হাটে কোরবানির পশু কেনাবেচা জমে উঠবে বলে মনে করেন তিনি।

কক্সবাজার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ ওয়াহিদুল আলম জানান, ইতিমধ্যে কুরবানীর পশু নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কর্ম পরিকল্পনা চলছে। কক্সবাজারের জেলার জন্য চলতি বছর কুরবানীর পশুর চাহিদা (গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ) ইত্যাদি ১ লাখ ৫ হাজার। তবে আমরা আনন্দের সাথে জানাতে চাই কক্সবাজারে স্থানীয় পর্যায়ে ১ লাখ ৮ হাজার পশু মজুদ আছে। হয়তো আরো বেশি হতে পারে। তবে একটা কথা আমরা দাবী নিয়ে বলতে পারি, কুরবানীর জন্য পশুর সংকট হবে না।

তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারে চলতি বছর ৫২ টি কুরবানীর পশুর বাজার বসবে। এবং পশুর রোগ বালাই দেখতে ১৬ টি মেডিকেল টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে। এছাড়া কক্সবাজারের চকরিয়া পেকুয়া, উখিয়ায় যেখানে বন্যা বা বৃষ্টির পানি জমেছে সেখানে ইতি মধ্যে আমাদের মেডিকেল টিম বিনামূল্যে পশুদের চিকিৎসা দিচ্ছে এবং এ পর্যন্ত কোন জায়গা থেকে পশুর বড় ধরনের রোগের কোন খবর আসেনি।

আরও খবর